বিজয় সেতুপতি – তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা । ‘বিক্রম ভেদা’, ‘কারুপ্পান’, ‘সুপার ডিলাক্স’, ‘কা পে রানাসিংগাম’, ‘৯৬’, ‘সীথাকাথি’ এবং ‘মাষ্টার’ সিনেমাগুলো তাকে একজন অভিনেতা হিসেবে দিয়েছে অন্যরকম স্বীকৃতি। সম্প্রতি দক্ষিনের গন্ডি পেরিয়ে আলোচিত এই অভিনেতা অভিনয় করছেন বলিউডের সিনেমায়। তার ক্যারিয়ার, সিনেমা, ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সম্প্রতি তিনি কথা বলেন ভারতের সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা নিউজ মিনিট’ এর সাথে। ফিল্মীমাইক পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ বাংলায় প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সুভাষ কে ঝা।
আপনি দক্ষিনের সিনেমা থেকে হিন্দি সিনেমার দিকে রূপান্তরিত হচ্ছেন। যেখানে দক্ষিনে আপনার একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে, সেখানে এটার প্রয়োজন মনে করলেন কেন?
আমি আসলে কিছুই করিনি। আমি কখনোই কোনকিছু পরিকল্পনা করে করিনি – না আমার জীবন নিয়ে না অভিনেতা হিসেবে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে। আপনি যে রূপান্তরের কথা বললেন সেটিও আপনাআপনি হয়েছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আমি যে কাজ করছি সেটা আমার হাতে না। আমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী কেউ একজন আমার গন্তব্য ঠিক করছে। আর আমি এটাও বিশ্বাস করি সিনেমায় ভাষার কোন বাধা নেই, শিল্পে ভাষার কোন বাধা নেই। দর্শক ভালো সিনেমা দেখতে চায় সেটা যে ভাষারই হোক। সম্প্রতি লকডাউন আমাকে সিনেমার দুনিয়া সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমার মনে হয় এই লকডাউন আঞ্চলিক সিনেমা এবং মূলধারার সিনেমার মধ্যের যে ব্যবধান আছে সেটা ভেঙে দিয়েছে। সবাই বাসায় বসে কোরিয়ান সিনেমা, ইরানিয়ান সিনেমা, মালায়লাম সিনেমা দেখেছে এবং বিশ্বের সিনেমা নিয়ে কথা বলেছে। এটা অবশ্যই অসাধারন একটা ব্যাপার হয়েছে।
আপনি কেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন চরিত্র পছন্দ করেন যা দর্শকদের অবাক করে দেয়?
জে কৃষ্ণমূর্তি বলেছিলেন, ‘পৃথিবীকে রূপান্তরিত করতে চাইলে আমাদের নিজেদেরকে দিয়েই শুরু করা উচিত।’ শিল্প পৃথিবীকে এক করে। আমি এই পৃথিবীর খুব ছোট একটা অংশ। ভাষা কি? এটা শব্দের সংগ্রহ ছাড়া আর কিছু না। একজন সফল শিল্পী হতে হলে আপনাকে সেই শব্দগুলো শুনতে হবে। হয়ত আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভাষা হলো আত্নার শব্দ।
দক্ষিন এবং উত্তরের সিনেমার ক্ষেত্রে আপনার কৌশল কিভাবে নির্ধারন করবেন?
আমি যেমন আগেও বলেছি আমি কোন কৌশল অবলম্বন করিনা। আমি মনে করি আমার জীবনে কি হবে সেটার উপর আমার খুব সীমিত নিয়ন্ত্রন রয়েছে। জীবনের কোনকিছুই আমরা নিয়ন্ত্রন করিনা। আমি কোন কিছুরই পরিকল্পনা করিনা। যা হচ্ছে আমি সেটা হতে দেই, এমনকি আমার পারফরমেন্সের ক্ষেত্রেও।
আপনি আপনার চরিত্র কিভাবে নির্বাচন করেন? আমি জানি পারিশ্রমিক আপনার জন্য কোন মানদন্ড নয়।
ঈশ্বরের কৃপায়। আমার পরিবারকে দেখাশোনা করার মত যথেষ্ট থাকা আমি রোজগার করতে পেরেছি। আমি একটা ভালো বাসায় থাকি এবং ভালো একটা গাড়িতে চলাফেরা করি। আমার মনে হয় আমার জন্য এটাই যথেষ্ট। আমার বাসার খরচের কথা চিন্তা না করে আমি সিনেমায় অভিনয় করতে পারি। কোন পারিশ্রমিক না নিয়ে একটি ভালো সিনেমাকে সমর্থন করতে পারি। এটা করা আমার কর্তব্য বলেও আমি মনে করি।
আপনি তারমানে বড় প্রেক্ষাপটে বিষয়টি দেখছেন?
হ্যা। আমার ক্যারিয়ার শুরু করার চার থেকে পাঁচ বছর পর যখন আমি জনপ্রিয়তা অর্জন করি তখন উদ্বিগ্ন প্রদর্শক এবং প্রযোজকরা মূলধারার সিনেমার বাইরে অভিনয় করতে না করেন। তারা বলেন, ‘আপনার ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে, আপনি পারিশ্রমিক পাবেন না। এরকম করবেন না।’ আমি তাদের এসব ব্যাড দিতে বলি। একটা পার্থক্য তৈরী করার জন্য আমি এখানে এসেছি, অর্থ উপার্জনের জন্য নয়। সিনেমাতে ছোটখাটো চরিত্রের খোঁজে যে বিজয় সেতুপতি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলো সে এখনো টিকে আছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই যে আমি টিকে আছি। আমি যখন সিনেমায় আসি তখন আমি চেয়েছি ক্যামারের সামনে দাঁড়িয়ে আমার সংলাপ বলতে। আজও যখন আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই আমার মনে হয় আমি বেঁচে আছি।
‘মাষ্টার’ সিনেমায় আপনি খুব কঠিন একজন মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যে বাচ্চাদের হত্যা করে। এটা করা আপনার জন্য কতটুকু কঠিন ছিল?
ভালো বা খারাপ – যাই হোক সেটা আমাদের সবার মাঝে আছে। এরমধ্যে কোন দিকটা প্রকাশ করবো সেটা আমাদের উপর নির্ভর করে। আমি আত্নবিশ্বাসের সাথে আপনাকে বলতে পারি যে আমি ভালো মানুষ না। কিন্তু ভালো মানুষ হতে চাই। ‘মাষ্টার’ সিনেমায় দুটি বাচ্চাকে হত্যা করার ধারনা আমাকে উদ্বিগ্ন করেছে। আমি কোন কিছু করতে চাইনা যেটা দর্শকদের জন্য বিরক্তিকর হবে। এটি নিয়ে পরিচালক এবং আমার মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। আমরা বাচ্চাগুলোর আসল হত্যার দৃশ্য না দেখানোর ব্যাপারে স্বিদ্ধান্ত নেই। আমি যখন কোন ধংস্বাত্নক চরিত্রে অভিনয় করি, ব্যাপারটা এমন যে আমার ঘরের নোংরা জিনিস পরিষ্কার করে সেগুলো বাইরে ফেলে দিচ্ছি।
আপনি বলতে চাচ্ছেন এটা বিশোধক?
হ্যা। আমি যতগুলো চরিত্র করেছি সেগুলো আমাকে কিছু দিয়েছে আবার আমার কাছ থেকে কিছু নিয়েছে। এখন আমি শ্রীরাম রাঘবের সাথে আমার প্রথম হিন্দি সিনেমা করছি আর রাজ-ডিকের সাথে প্রথম ওয়েব সিরিজ করছি। কিন্তু আমি জানি না কিভাবে সেটা আমি সামনের দিকে নিয়ে যাবো। যখন আমি কোন নতুন সিনেমার কাজ শুরু করি, আমি একজন পরীক্ষা দিতে যাওয়া ছাত্রের মত অনুভব করি। প্রতিটি প্রজেক্টের প্রস্তুতির জন্য আমার চার বা পাঁচ দিন সময় লাগে।
পরিচালক হিসেবে কবে আসছেন?
আমি? আমার মনে হয়না একটি সিনেমা পরিচালনা করার মোট যথেষ্ট পরিপক্কতা আমার আছে। আমি মনে করি এটি অনেক দায়িত্বসম্পন্ন একটা কাজ। তবে এটুকু বলতে পারি পরিচালনার এই ধারনাটা আমার ভালো লেগেছে। খুব শীগ্রই আমি সিনেমা পরিচালনা করবো।
এখন পর্যন্ত আপনার নিজের প্রিয় চরিত্র কোনটি?
আপনার কি মনে হয়, আমার কোন চরিত্রটি আপনি বেশি পছন্দ করেছেন?
সুপার ডিলাক্স
আমি আসলে বলতে পারবো না, কারন আমি এখন পর্যন্ত যতগুলো চরিত্র করেছি সবগুলোই আমার প্রিয়। তবে ‘সুপার ডিলাক্স’ সিনেমায় আমার চরিত্র শিল্পা আমার গুরু। শিল্পা চরিত্রের শরীর এবং মনের মধ্যে ঢুকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি যখন শিল্পা চরিত্রটি করি তখন আমি শিল্পা হয়ে যাই। একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়ে যাই আমি। এছাড়া আর যে চরিত্রটি করে আমি আনন্দ পেয়েছি সেটি হলো ‘সীথাকাথি’ সিনেমায় ৭৫ বছরের বৃদ্ধের চরিত্র। এই দুইটি চরিত্র আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে। আমি জানিনা আমি কিভাবে করেছি।
আমি যখনই আপনার সিনেমা দেখি, বিজয় সেতুপতিকে আমি পর্দায় দেখি না!
অসাধারন একটি প্রশংসা! এই সাক্ষাৎকারটি করে আমিও অনেক মজা পেলাম।
আরো পড়ুনঃ
ক্যাটরিনা এবং বিজয় সেতুপতি জুটির সিনেমা ‘মেরি ক্রিসমাস’