দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে নির্মিত হলিউডের সেরা ৫টি সিনেমা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা

মানব সভ্যতার ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধের নাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এর সময়কাল খাতা কলমে ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ধরা হয়। এই যুদ্ধে ৩০টি দেশের সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। নির্বিচারে ভয়াবহ এই যুদ্ধের বলি হয় প্রায় সাড়ে আট কোটি সাধারণ মানুষ! বহু বিখ্যাত সিনেমায় এই যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে হলিউডের এরকম সেরা ৫টি সিনেমা নিয়ে আলোচনা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

এই সিনেমাগুলো আপনাকে সত্যি সত্যি যুদ্ধ ক্ষেত্রে তো নিয়ে যেতে পারবে না, তবে যুদ্ধ এবং এর ভয়াবহতা খুব কাছ থেকে অনুভব করাতে পারবে। দর্শকদের চুম্বকের মতো আটকে রাখার ক্ষমতা আছে এই সিনেমাগুলোর! তাহলে দেখে নেয়া যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে নির্মিত হলিউডের সেরা ৫টি সিনেমার বিস্তারিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা

১। পার্ল হারবার (২০০১)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৫৬ বছর পর ২০০১ সালে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এই সিনেমায় উঠে এসেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা আর সেই সাথে দেখানো হয়েছে কিভাবে প্রতিশোধ নিতে হয়। জাপানি কমান্ডার ইয়ামামোতোর মুখ থেকে আসে দুটি বিখ্যাত উক্তি প্রথমটি- “A brilliant man will find a way not to fight to war” আর দ্বিতীয়টি – “I fear all we have done is to awaken a sleeping giant.”অসম্ভব রকমের রোমাঞ্চকর ঘটনার মধ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে সিনেমাটি। এক নিঃশ্বাসে শেষ করবার মতোই এই মুভি আর ওয়ার মুভিপ্রেমীদের কাছে এ যেন স্বর্গ!! ড্যানি আর রেফ নামের দুই বন্ধুকে নিয়েই গড়ে উঠেছে সিনেমার কাহিনী। তারা একই সাথে যোগ দেয় এয়ারফোর্সে। সেখান থেকে দুই জনই সুযোগ পায় পাইলট হবার।

একটা পর্যায়ে রেফকে যোগ দিতে হয় রয়েল এয়ারফোর্সে যুদ্ধের জন্য। কিন্তু কিছুদিন আগেই তো পরিচয় হলো নার্স এভেলিনের সাথে। রেফ আর এভেলিনের প্রণয় সবে মাত্র পাখা মেলতে শুরু করেছে। কিন্তু রেফ ভালবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলে গেলো যুদ্ধে, আর যুদ্ধ মানেই তো নরক। ফিরে আসতে পারবে তো রেফ এভেলিনের কাছে আর ড্যানি ওরই বা কি হলো? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতেহলে দেখতে হবে আপনাকে সিনেমাটি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা

২। সেভিং প্রাইভেট রিয়ান (১৯৯৮)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর নির্মিত অন্যতম সেরা সিনেমা ‘সেভিং প্রাইভেট রিয়ান’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯৮ সালে। সিনেমাটিতে উঠে এসেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা, আত্মত্যাগ আর নির্মমতা। যেখানে বেঁচে থাকাই অকল্পনীয়, সেখানে সৈনিকরা স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যতের দিনগুলোর জন্য প্রিয় মুখগুলোর কথা! সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন হলিউড অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস যিনি ক্যাপ্টেন মিলার, সেকেন্ড রেঞ্জার ব্যাটেলিয়নের সাথে যুক্ত। যে ১৯৪১ সালের ৬ জুনের যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখে। এরপর উপর মহল থেকে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় জেমস রায়ান নামের একজন সৈনিককে খুঁজে বের করবার জন্য। অদ্ভুত কাজের দায়িত্ব এসে পড়ে মিলারের ঘাড়ে।

রায়ান পরিবারে ভাইদের মধ্যে জেমস সবার ছোট আর বাকি তিনবড় ভাই যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। তাই সেনাবাহিনী প্রধান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অন্তত এক সন্তানকেরায়ান পরিবারে ফিরিয়ে দেবার! ক্যাপ্টেন মিলার সহ সেনাবাহিনীর কেউই জানে না জেমস কোথায় আছে কিন্তু যে করেই হোকখুঁজে বের করতে হবে রায়ান পরিবারের শেষ সন্তানকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিলার কি পারবে তার মিশন শেষ করতে আর এভাবেই পরিচালক যুদ্ধের পুরো প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের উপর যতগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে তার অন্যতম সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি হলো এটি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা

৩। এনিমি এট দ্য গেটস (২০০১)
সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে একজন স্নাইপারকে কেন্দ্র করে। ভাসিলি নামের একজন ছোটবেলায় দাদার কাছ থেকেই অস্ত্র চালনা শেখে। নাৎসি হিটলারের আক্রমণের মুখে স্তালিনগ্রাদ রক্ষার জন্য ভাসিলি যোগ দেয় রাশান সেনাবাহিনীতে। যুদ্ধের ময়দানে তার গুলি চালনা দেখে মুগ্ধ হয় ডেনিলাভ। আর ডেনিলাভের জন্যই ভেসিলি পদোন্নতি পায় স্নাইপার ডিভিশনে। প্রতিদিনই একের পর এক জার্মান অফিসার খতম করতে থাকে ভাসিলি। জার্মান বাহিনী এই সমস্যা নিরসনে নিযুক্ত করে সবচেয়ে সেরা এবং দক্ষ সব মার্ক্সম্যানদের।

এদিকে ভাসিলিও প্রেমে পড়ে এক রূপসী মেয়ে সৈনিকের। তখন ডেনিলাভ সহ রাশান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সবাই ভেসিলির দিকে তাকিয়ে। কিন্তু ভাসিলি পারবে কি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারবে কি জানাতে মনের সব কথা পছন্দের মানুষটিকে বলতে? এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে সিনেমাটি।

৪। দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রিপড পাজামাস (২০০৮)
যুদ্ধ মানেই ভয়ংকর যুদ্ধ শান্তি ও সুখ কেরে নেবার জন্য যথেষ্ট। শুধুমাত্র তারাই এই যুদ্ধের ভয়াবহতা বোঝেন যারা কিনা এই ব্যাপারটা সামনা সামনি দেখেছেন। জন বয়েনের লিখা উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। সিনেমায় দেখানো হয়েছে আট বছর বয়সী দুই বালকের অসম বন্ধুত্ব। এদের ভেতর একজন বার্লিন শহর ছেড়ে আসা ব্রুন, তার বাবা জার্মান সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি ইহুদি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে দায়িত্বরত ছিলেন।

অপরদিকে অন্যজনের নাম হলো স্যেমুয়েল। ঘটনাচক্রে ব্রুনর সাথে পরিচিয় হয় কাঁটাতারের ওপাশের তার সমবয়সী এক ইহুদি বন্দি স্যেমুয়েল এরসাথে। বন্ধুত্ব আড্ডা আর গল্পে এগিয়ে যেতে থাকে কাহিনী। শিশুমন অনেক কৌতূহলি আর তারই ফলস্বরূপ ব্রুন একদিন ঘুরতে যায় কাঁটাতারের ওপাশে অর্থাৎ ইহুদি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। আর তাতেই হলো কাল। অন্তত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে মুভিটি। এতটুকু নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া জেতেই পারে এই সিনেমাটি আপনার দুচোখ ভেজাবে।

৫। ল্যান্ড অফ মাইন (২০১৫)
১৯৪৫ সালের মে মাসে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে। আর এর ফলে ডেনিশ কর্তৃপক্ষের কাছে বন্ধী হয় অসংখ্য কমবয়সী জার্মান সৈনিক, যারা কিনা এখনো কৈশোর পার হয়ে যৌবনেই পা দেয়নি। এই কমবয়সী রিক্রুটদের পাঠানো হয় ওয়েস্ট কস্টে। ওয়েস্ট কস্টে তাদের ব্যবহার করা হয় বালির নিচে পুতে রাখা জার্মানদের মাইন সরানোর কাজে। তাদেরকে এই বিপদ জনক কাজে বাধ্য করেন একজন ডেনিশ সার্জেন্ট। জীবনের প্রতি সব মায়া ফেলে একের পর এক মাইন তুলে নষ্ট করতে থাকে এই বন্দিরা। আর সংখ্যায় কমতে থেকে একে একে। মূলত যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ল্যান্ড অফ মাইন’ নামের ড্যানিস-জার্মান সিনেমাটিতে।

প্রিয় পাঠক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাগুলোর মধ্যে কোন সিনেমাটি আপনার সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে তা আমাদের জানিয়ে দিন মন্তব্যে। এছাড়া উপরে উল্লেখিত সিনেমাগুলো ছাড়া আর কোন সিনেমা এই তালিকায় থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করছেন তাও আমাদের জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে।

আরো পড়ুনঃ
শুধু সিনেমার পর্দায় নয়, বাস্তবে অভিশপ্ত ছিলো যে ৫টি ভৌতিক সিনেমা!
হলিউডের বহুল প্রতীক্ষিত যে সিনেমাগুলো আগামী বছর বক্স অফিস মাতাবে!
আর দেখা যাবে না ‘জেমস বন্ড’ রুপেঃ আবেগপ্রবণ ড্যানিয়েল ক্রেগ

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d