দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি: তারকা পরিবারের দখলে সবগুলো ইন্ডাস্ট্রি

দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি

সিনেমায় স্বজনপ্রীতি নিয়ে কথা আসলে বলিউডের নাম আসে সবচেয়ে আগে। স্বজনপ্রীতির জন্য প্রায়শই বলিউডকে দোষারোপ করে থাকেন সবাই। বিশেষ করে সুশান্ত সিং রাজপুতের অকাল মৃত্যুর পর বলিউডের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়েছে সিনেমায় স্বজনপ্রীতি। বর্তমান সময়ে বলিউডের আলোচিত তারকাদের বেশীরভাগই কোন না কোন ভাবে পারিবারিক ঐতিয্যের ধারক। এই তালিকায় রয়েছেন রনবির কাপুর, বরুণ ধাওয়ান, টাইগার শ্রফ, আলিয়া ভাট, শ্রদ্ধা কাপুর প্রমুখ। তবে বলিউডের চেয়ে দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি আরো বেশী প্রকট। কিন্তু সেটি নিয়ে আলোচনা হয় খুবই কম।

দক্ষিণের সিনেমা বলতে প্রধানত চারটি ইন্ডাস্ট্রিকে বোঝানো হয় – কলিউড (তামিল), টলিউড (তেলুগু), মলিউড (মালয়ালাম) এবং স্যান্ডেলউড (কন্নড়)। এই প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান তারকাদের নিয়ে পর্যালচনা করলে দেখা যায় যে তারকা পরিবারের দখলেই রয়েছে এই সবগুলো ইন্ডাস্ট্রি। বিশেষ করে তামিল এবং তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বিবেচনা করলে ধারণাটি আরো বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণের সিনেমার সব বড় তারকাই কোন না কোন ভাবে পারিবারিকভাবে সিনেমার সাথে সম্পৃক্ত। দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে এই লিখায়।

বলিউড তারকাদের চেয়ে

০১। প্রভাস
প্রভাস এই মুহূর্তে তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় অভিনেতাদের একজন, তার বাবাও একজন বিখ্যাত তেলেগু প্রযোজক ছিলেন। প্রভাসের বাবার নাম উৎপলাপতি সূর্য নারায়ণ রাজু। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম গোপী কৃষ্ণ মুভিজ। বর্তমানে প্রভাস শুধু তেলুগু নন, প্যান ইন্ডিয়া সুপারস্টার হিসেবে পরিচিত। নিজের মেধা এবং পরিশ্রম দিয়ে প্রভাস এটি অর্জন করেছেন এত কোন সন্দেহ নেই। তবে এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রভাস তার বাবার কারণে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রযোজক বাবার কল্যাণে কোন বড় বাঁধা ছাড়াই সিনেমায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণের সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন।

দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি

০২। পবন কল্যাণ
পবন কল্যাণ তার বড় ভাই মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর হাত ধরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন। বর্তমানে এই তারকার এই বিশাল ভক্ত অনুরাগী বিদ্যমান থাকলেও, সিনেমার যাত্রায় বড় ভাইয়ের তারকা খ্যাতিই তার সবচেয়ে বড় সম্বল ছিলো। চিরঞ্জীবীর পরিচয়ে যাত্রা শুরু করে তার কঠোর পরিশ্রমের ভিত্তিতে তিনি একজন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতাদের মধ্যে একজন। পাশাপাশি তেলুগুতে পবন কল্যাণ একজন যুব আইকন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি অনেক মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন যার কারণে তাকে ‘ইন্সপায়ারিং স্টার’ বলা হয়।

দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি

০৩। মহেশ বাবু
বর্তমানে, মহেশ বাবু টলিউডের অন্যতম সফল এবং প্রতিভাবান অভিনেতাদের একজন। তিনি তেলুগু সিনেমার সবচেয়ে বড় সুপারস্টার কৃষ্ণার ছেলে। মহেশ যখন তার ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন তাকে সুপারস্টার কৃষ্ণের ছেলে বলা হত এবং আজ তার বাবাকে সুপারস্টার মহেশ বাবুর বাবা বলা হয়। একজন অভিনেতা থেকে একজন সুপারস্টারে মহেশ বাবুর যাত্রা সহজ ছিল না, কিন্তু যতবারই ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছে ততবারই ব্লকবাস্টার ফিল্ম দিয়ে প্রত্যাবর্তন করেছেন। তবে এটাই মানতে হবে হবে, সুপারস্টার বাবার কারনে যে সুবিধা তিনি পেয়েছেন সেটা সাধারণ ঘরের সন্তান হলে হয়তো পেতেন না মহেশ বাবু।

দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি

০৪। জুনিয়র এনটিআর
জুনিয়র এনটিআর টলিউডের বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে প্রতিভাবান অভিনেতা। তার অভিনয় দক্ষতা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়, পর্দায় তার আবেগ সবসময় বাস্তব বলে মনে হয়। জুনিয়র এনটিআর তেলেগু অভিনেতা এবং অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী টি রামা রাও এর নাতি, আর তার বাবা নন্দামুরি হরিকৃষ্ণও একজন অভিনেতা, প্রযোজক এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় তারকাও একটি শক্তিশালী পারিবারিক ঐতিয্য নিয়ে সিনেমায় এসেছেন। তবে নিজের মেধা এবং পরিশ্রম দিয়ে টলিউডে নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি।

বলিউড তারকাদের চেয়ে

০৫। রামচরণ
জুনিয়র এনটিআরের সমসাময়িক আরেক জনপ্রিয় তারকা রামচরণ। এনটিআরের মত রামচরণও পারিবারিকভাবে সিনেমায় এসেছিলেন। রামচরণ তার বাবা মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর কারণে চলচ্চিত্রে এসেছিলেন। তার প্রথম সিনেমাটি বাণিজ্যিক সাফল্য পেলেও রামচরণের আসল প্রতিভা মানুষের সামনে এসেছিল তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘মাগধীরা’ দিয়ে। এটি ছাড়াও, তিনি ‘রঙ্গস্থানলাম’ এবং ‘আরআরআর’ সিনেমায় অভিনয় দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। দুটি সিনেমাই বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলো।

দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি

০৬। আল্লু অর্জুন
পারিবারিকভাবে চলচ্চিত্রের সাথে আল্লু অর্জুনের দুটি সংযোগ রয়েছে। আল্লু অর্জুন তেলুগু মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর ভাগ্নে, সেইসাথে একজন শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিবেশক আল্লু অরবিন্দের ছেলে। তিনি বর্তমানে তেলেগু শিল্পের একমাত্র অভিনেতা যার অনুরাগী দক্ষিণের চেয়ে উত্তরে বেশি। তার সিনেমার হিন্দি ডাব সংস্করণের মূল্য সবচেয়ে বেশী। তিনি একজন অসাধারণ অভিনেতার পাশাপাশি একজন স্টাইল আইকন এবং একজন দুর্দান্ত নৃত্যশিল্পী। তিনি ‘স্টাইলিশ স্টার’ এবং ‘আইকনিক স্টার’ হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত।

আক্কিনেনি নাগার্জুনা

০৭। নাগার্জুন
জনপ্রিয় দক্ষিণী অভিনেতা নাগার্জুন প্রবীণ অভিনেতা আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাওয়ের ছেলে। নাগার্জুনার আজকের অবস্থানের পিছনে তার এই পরিচয় তাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছিল। এই অভিনেতার দুই ছেলে নাগা চৈতন্য এবং অখিল আক্কিনেনিও ইতিমধ্যে অভিনেতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন এবং তেলুগু সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত নাগার্জুন বেশ কয়েকটি সিনেমাও প্রযোজনা করেছেন। আর তার প্রযোজিত সব সিনেমায় তিনি তার পরিবারের সদস্যদেরই সুযোগ দিয়েছেন।

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে

০৮। থালাপতি বিজয়
তেলুগুর মত তামিল সিনেমায়ও স্বজনপ্রীতি রয়েছে। তামিল সিনেমার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা থালাপতি বিজয়ের বাবা এস এ চন্দ্রশেখর একজন পরিচালক। পরিচালক বাবার কারনে সিনেমায় সুযোগ পাওয়াটা সহজ হলেও বিজয়ের যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিলো না। অনেক উত্থান পতনের মাঝ দিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে এই অবস্থানে এসেছেন বিজয়। কর্মজীবনের শুরুতে বিজয় তার অভিনয় এবং নাচের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তার অভিনয় এবং নাচের উপর কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং নিজেকে একজন দুর্দান্ত অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি

০৯। সুরিয়া এবং কার্তি
প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি ফ্লপ সিনেমা দিয়ে যাত্রা শুরু করা সুরিয়া আজ তামিলের সেরা অভিনেতাদের একজন। এই সুরিয়া অভিনেতা শিবকুমারের ছেলে। ক্যারিয়ারের শুরুতে বাবার পরিচয়েই পরিচিত ছিলেন এই তারকা। সুরিয়া ছাড়াও শিবকুমারের দ্বিতীয় ছেলে কার্তিও বর্তমানে তামিলের প্রতিভাবান অভিনেতাদের অন্যতম৷ সর্বশেষ ‘কাইথি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন কার্তি। বলা ছেলে অভিনেতা বাবার দুই ছেলেই এখন সময়ের সেরা দুই অভিনেতা।

তামিল সুপারস্টার ধানুশ

১০। ধানুশ
তামিল শিল্পের আরেকজন দর্শকনন্দিত অভিনেতা ধানুশ, যিনি পরিচালক কস্তুরি রাজার ছেলে। এছাড়া ধানুশে ভাই সেলভারাঘবনও একজন জনপ্রিয় পরিচালক। তিনি তার ভাইয়ের পরিচালনায় সিনেমার মাধ্যমেই তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এর বাইরেও ধানুশের আরো একটি পরিচয় রয়েছে। ধানুশের স্ত্রী ঐশ্বরিয়া রজনীকান্ত তামিল সুপারস্টার রজনীকান্তের মেয়ে। সব মিলিয়ে সিনেমার সাথে ধানুশের পরিবার বেশ কয়েকদিক থেকেই সংযুক্ত।

কলিউড (তামিল) এবং টলিউড (তেলুগু) ছাড়াও কন্নড় এবং মালয়ালাম সিনেমায়ও স্বজনপ্রীতি রয়েছে। মালয়ালাম সিনেমার তরুন প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা দুলকার সালমান মেগাস্টার মামুত্তির ছেলে। এছাড়া কন্নড় সিনেমায়ও পারিবারিক পরিচয়ে কাজ করা তারকা রয়েছেন। প্রিয় পাঠক, উপরে উল্লেখিত নামগুলোর বিবেচনায় দক্ষিণের সিনেমায় স্বজনপ্রীতি বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? এই তারকাদের মধ্যে আপনার পছন্দের তারকা কে সেটা আমাদের জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে।

আরো পড়ুনঃ
বলিউড তারকাদের চেয়ে বেশী পারিশ্রমিক নেন যে দশজন দক্ষিনি অভিনেতা
আল্লু অর্জুনকে নিয়ে টি সিরিজের নতুন প্যান ইন্ডিয়া অ্যাকশন ধামাকা!
‘জওয়ান’ সিনেমার পর অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতি নিচ্ছেন নয়নতারা

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d