পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয়ের ৫টি সিনেমা

পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির

পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির

মালায়লাম সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেতা মাম্মুতি। তিনি আসলে জন্মগতভাবে একজন অভিনেতা না মেথড অভিনেতা সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। তবে পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির অভিনয় দর্শকদের আলোড়িত করেছে বছরের পর বছর। সাধারণত পর্দায় মাম্মুতি অভিনীত চরিত্রগুলো পৌরুষের প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে। কিন্তু এই অভিনেতার এমন কিছু সিনেমা রয়েছে যেখানে তাকে সংবেদনশীল এবং সহানুভূতিশীল চরিত্রে দেখা গেছে। এছাড়া সিনেমায় পর্দায় মাম্মুতিকে দর্শকরা চোখের পানি ঝোড়াতে কমই দেখেছেন। যে কয়েকটি সিনেমায় এরকম চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই মেগাস্টার সেগুলো বিমোহিত করেছে তার ভক্তদের। পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয়ের ৫টি সিনেমা নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন।

পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির

১। থানিয়াবর্থনম (Thaniyavarthanam)
একটি অপ্রীতিকর ঘটনার মাধ্যমে ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগিয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে এই সিনেমা। সিবি মালায়িল পরিচালিত ‘থানিয়াবর্থনম’ সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন প্রয়াত কিংবদন্তী এ কে লোহিতদাস। সিনেমাটিতে মাম্মুতি বালা গোপালান নামে একজন স্কুল শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বালানের চাচা একজন অসুস্থ এবং মানসিক বিকারগ্রস্থ লোক। তার পরিবারের মাঝে একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে এটা এই পরিবারের উপর কোন এক অভিশাপের ফসল। সবকিছু ঠিক চলছিলো কিন্তু বালানের চাচার মৃত্যুর পর সব বদলে যায়। তার পরিবার মনে করে যে সেই অভিশাপ এখন বালানের উপর ভর করেছে। এই প্রেক্ষিতে বালানকে ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপির মুখেও পরতে হয়। পরিবারের এই পাগলামি মেনে নেয়া ছাড়া বালানের আর কিছু করারও থাকে না। শেষ পর্যন্ত বালানের মৃত্যু এবং তার পরবর্তি শিকার দিয়ে শেষ হয় সিনেমাটির গল্প। এই সিনেমায় মাম্মুতির অভিনয় শুধু তার ক্যারিয়ার নয়, মালায়লাম সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনয়গুলোর মধ্যে একটি ধরা হয়ে থাকে।

পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির

২। ভালসাল্যম (Valsalyam)
কোচিন হানিফা পরিচালিত ‘ভালসাল্যম’ সিনেমাটিরও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন এ কে লোহিতদাস। পরিবারের প্রতি মেলিদাথু রাঘবন নাইয়ারের দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা। পরিবারের বড় ছেলে রাঘবন সবার জন্য দিন রাত কাজ করে এবং নিজের ইচ্ছা এবং পছন্দের জলাঞ্জলি দিয়ে সবার দেখাশোনা করে। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে কখনো কোন অভিযোগ না করা রাঘবন শেষ পর্যন্ত নিজের স্ত্রী এবং সন্তান ছাড়া আর কাউকেই পায়না। পারিবারিক গল্পের সাথে মাম্মুতির অসাধারণ অভিনয় সিনেমাটিকে করেছে অনন্য এবং উপভোগ্য।

পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির

৩। মাজায়েথুম মুনপে (Mazhayethum Munpe)
১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রোম্যান্টিক সিনেমা ‘মাজায়েথুম মুনপে’ পরিচালনা করেছেন কামাল। শ্রীনিবাসানের চিত্রনাট্যে সিনেমাটিতে মাম্মুতি নান্দাকুমার নামে একজন কলেক অধ্যাপকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নান্দাকুমার তার বাগদত্তা উমাকে (শবানা) ভীষণ ভালোবাসে। উমা অসুস্থতার কারনে শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবন যাপন করছে। এদিকে নান্দাকুমারের এক ছাত্রী শ্রুতি (আন্নিই) নান্দাকুমারকে ভালোবাসে। নান্দাকুমার উমাকে ভালোবাসলেও শ্রুতি যেকোন মূল্যে নান্দাকুমারকে পেতে চায়। একদিন শ্রুতি শয্যাশায়ী উমার সাথে দেখা করে এবং যেহেতু উমা নান্দাকুমারকে তার কাঙ্ক্ষিত জীবন উপহার দিতে পারবে না তাই নান্দাকুমারের জীবন থেকে সরে যেতে বলে। কিন্তু শ্রুতির সাথে বিয়ের পর নান্দাকুমার যখন এটি জানতে পারে তখন সিনেমাটি অপ্রত্যাশিত একটি মোড় নেয়। শেষ পর্যন্ত নান্দাকুমার উমা এবং শ্রুতি দুইজনকে ছেড়ে চলে যায়।

৪। মাথিলুকাল (Mathilukal)
আদুর গোপালকৃষ্ণন পরিচালিত ‘মাথিলুকাল’ সিনেমাটি মাম্মুতি অভিনীত অন্যতম প্রশংসিত সিনেমাগুলোর একটি। ভাইকোম মুহাম্মদ বশীরের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটিতে মাম্মুতি বশীর চরত্রে অভিনয় করেছেন। বন্ধী অবস্থায় কারাগার থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় থাকা বশীরের পরিচয় হয় এক নারী বন্ধীর সাথে, যে দেয়ালের ওইপাশে আছে। দুইজন মানুষের মধ্যকার ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে উঠে কারাগারের সেই দেয়াল। কিন্তু সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের দিকে এগিয়ে যায়, যখন বশীর তার সেই ওদেখা ভালোবাসার মানুষের সাথে কথা না বলেই কারাগার ছাড়তে বাধ্য হয়। সিনেমাটির গল্পের সাথে পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয়ের কারনে ভক্তদের কাছে এই তারকার অন্যতম পছন্দের সিনেমা ‘মাথিলুকাল’।

৫। কাজচা (Kazhcha)
ব্লেসি পরিচালিত ‘কাজচা’ সিনেমায় মাম্মুতি অভিনীত চরিত্রের নাম ছিলো মাধবন। মাধবন নিজের স্ত্রী এবং মেয়ে আম্বিলিকে নিয়ে একটি গ্রামে বসবাস করে। সিনেমায় দেখা গেছে মাধবন বিভিন্ন উৎসব এবং পাবলিক অনুষ্ঠানে সিনেমার প্রিমিয়ার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এরকম একটি ভ্রমণে মাধবন একটি ছোট ছেলেকে পায় যে গুজরাটের ভূমিকম্পে নিজের বাবা মাকে হারিয়েছে। মাধবন সেই ছেলেকে নিজের সাথে করে নিয়ে আসে এবং নিজের ছেলের মত লালন পালন করতে থাকে। কিন্তু উক্ত ছেলেকে দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রে মাধবনের কিছু সীমাবদ্ধতার কারনে শেষ পর্যন্ত সেই ছেলেকে কতৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া মাধবন। কতৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার সময় মাধবন তাদের বলে যদি এই বাচ্চার কেউ না আসে তাহলে যেনো তাকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। সিনেমাটিতে মাধবন চরিত্রটি মাম্মুতি যেরকম নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন সেটা অন্য কোন তারকার পক্ষ্যে সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পর্দায় মেগাস্টার মাম্মুতির অভিনয়ের তুলনা সম্ভবত এই তারকা নিজেই। নিজের ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত সিনেমা উপহার দিয়েছেন মেগাস্টার মাম্মুতি। আমাদের আজকের এই আলোচনায় শুধুমাত্র পর্দায় মাম্মুতির যে অভিনয় গুলো দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে সেগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই সিনেমাগুলো ছাড়াও মাম্মুতি অভিনীত আরো অনেক সিনেমা রয়েছে যা দর্শকদের পাশাপাশি সমালোচকদেরও প্রশংসা কুঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ
পবন কল্যাণ অভিনীত নতুন সিনেমার নাম এবং ফার্স্টলুক প্রকাশ
শেষ হলো মোহনলালকে নিয়ে পৃথ্বীরাজ সুকুমারনের সিনেমা ‘ব্রো ডেড্ডি’
ফাহাদ ফাসিল অভিনীত সেরা ৮টি সিনেমাঃ দেখে নিন সিনেমার ক্রম তালিকা

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত