সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত যে সিনেমাগুলো তেলুগু ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দিয়েছে সেরকম কিছু সিনেমা নিয়ে আলোচনার প্রথম পর্বে আমরা তুলে এনেছিলাম ৮টি সিনেমার কথা। এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে আরো ৮টি এমন সিনেমার বিস্তারিত, যে সিনেমাগুলো বদলে দিয়েছিলো তেলুগু ইন্ডাস্ট্রির চেহারা।
৯। কাঞ্চে (২০১৫)
কৃশ পরিচালিত যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত রোম্যান্টিক সিনেমা ‘কাঞ্চে’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৫ সালে। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বরুণ তেজ, প্রজ্ঞা জয়সওয়াল, এবং নিকিতিন ধীর। দুই বন্ধু ধুপতি হরিবাবু (তেজ) এবং এশ্বর প্রসাদ (ধীর) এর মধ্যেকার শত্রুতা ঘিরে আবর্তিত ‘কাঞ্চে’ সিনেমার গল্প। ১৯৩০ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করা হরিবাবু এবং এশ্বর প্রসাদের বোন ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু গ্রামে প্রচলিত বর্ণবাদেড় কারনে এশ্বর প্রসাদ তাদের এই সম্পর্কের বিরোধিতা করে এবং দুর্ঘটনাবশত তার হাতে তার বোনের মৃত্যু হয়। পরিবর্তিতে হরিবাবু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক্সিস শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগদান করে। অন্যদিকে এশ্বর প্রসাদ ছিলো একজন কর্নেল যে কিনা হরিবাবুর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে থাকে। তেলুগু ভাষায় নির্মিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত প্রথম সিনেমা ছিলো ‘কাঞ্চে’। মুক্তির পর বক্স অফিসে সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে এই সিনেমা। এছাড়া সিনেমাটি বিভিন্ন বিভাগে একাধিক পুরষ্কারও জিতেছে।
১০। মল্লি মাল্লি ইদি রানী রোজু (২০১৫)
২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু রোম্যান্টিক সিনেমা ‘মল্লি মাল্লি ইদি রানী রোজু’ পরিচালনা করেছেন ক্রান্তি মাধব। ‘মল্লি মাল্লি ইদি রানী রোজু’ মানে হচ্ছে ‘এটি এমন একটি দিন যা আর কখনো ফেরত আসবে না’। সিনেমাটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন শারওয়ানন্দ এবং নিত্যা মেনেন। এই সিনেমার সবচেয়ে বড় বিশিষ্ট হচ্ছে সহজ, রোমান্টিক, হৃদয় ছোঁয়া প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত। মেয়ের কাছে একজন সফল ট্র্যাক রানারের নিজের অতীতের গল্প বলা দিয়ে উঠে এসেছে সিনেমাটির ধারাপাত। ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি সিনেমাটি বিভিন্ন বিভাগে বেশ কয়েকটি পুরষ্কার জিতেছিলো সিনেমাটি।
১১। ইভাদে সুব্রামণ্যম (২০১৫)
তেলুগু কমেডি ড্রামা সিনেমা ‘ইভাদে সুব্রামণ্যম’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৫ সালে। সিনেমাটি রচনা এবং পরিচালনা করেছেন নাগ আশ্বিন। প্রিয়াঙ্কা দত্ত এবং স্বপ্না দত্ত প্রযোজিত এই সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন নানি, মালবিকা নায়ার (অভিষেক), বিজয় দেভেরকোন্ডা এবং ঋতু বার্মা। সুব্রামণ্যম নামের একজন কর্পোরেট ব্যক্তির নিজেকে আবিষ্কারের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। সিনেমাটির বেশীরভাগ অংশের দৃশ্যধারন হয়েছে নেপালের এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্পে। ২০১৫ সালের ২১শে মার্চ মুক্তি পাওয়ার পর সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলো এই সিনেমা। নানির অভিনয় এবং বক্তব্য নির্ভর চিত্রনাট্যের জন প্রশংসিত হলেও গল্পের ধীরগতির জন্য সমালোচিত হয়েছিলো সিনেমাটি।
১২। পেল্লি চুপুলু (২০১৬)
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ভাষার রোম্যান্টিক কমেডি সিনেমা ‘পেল্লি চুপুলু’ পরিচালনা করেছেন থারুন ভাস্কার। আর সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন রাজ কান্দুকুরি এবং যশ রঙ্গিনেনি। সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিজয় দেভেরকোন্ডা এবং ঋতু বর্মা। একটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত সিনেমাটিতে দুইজন মানুষের কাছে আসা থেকে একটি স্থায়ী সম্পর্কে জড়ানোর গল্প দেখা গেছে। সুন্দর লোকেশন স্টাইলের মাধ্যমে দর্শকদের পাশাপাশি সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে সিনেমাটি।
১৩। অর্জুন রেড্ডি (২০১৭)
সম্পর্কের তিনটি মৌলিক বিষয় নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি মুক্তির পর ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলো। দুইজন মানুষের বেদনা, ভালোবাসা এবং অসহায়ত্ব উঠে এসেছে সিনেমার গল্পে। ভদ্রকালী পিকচার্সের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সন্দ্বীপ রেড্ডি ভাঙ্গা। সিনেমাটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিজয় দেভেরকোন্ডা এবং শালিনী পাণ্ডে। এই সিনেমাটির আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হল যে প্রতিটি চরিত্রের কিছু অসম্পূর্ণতা রয়েছে যা পুরো সিনেমায় খুব স্পষ্ট এবং এর কোন কিছুরই কোন যুক্তি নেই। সিনেমাটি বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছিলো। পরবর্তিতে এই নির্মাতা সিনেমাটি ‘কবির সিং’ নামে হিন্দি ভাষায়ও নির্মান করেন। ‘কবির সিং’ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদ কাপুর এবং কিয়ারা আদভানী। প্রসঙ্গত, ‘কবির সিং’ এখন পর্যন্ত শহীদ কাপুরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমা।
১৪। রঙ্গস্থলম (২০১৮)
সুকুমারের লেখা ও পরিচালনায় তেলুগু অ্যাকশন-ড্রামা সিনেমা ‘রঙ্গস্থলম’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৮ সালে। মিথ্রি মুভি মেকার্সের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন ওয়াই নবীন, ওয়াই রবিশঙ্কর এবং সি ভি মোহন। গ্রামের সামন্ত লড়াইয়ের একটি প্রাচীন ধারণা নিয়ে নির্মিত হয়েছিলো সিনেমাটি। কিন্তু চরিত্রগুলোর বিন্যাস এবং সিনেম্যাটিক উপাদানের জন্য আলোচিত ছিলো সিনেমা। রাম চরণ এবং সামান্থার পাশাপাশি সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন আদি পিনিসেটি, জগপতি বাবু, প্রকাশ রাজ, নরেশ এবং অনসূয়া ভরদ্বাজ সহ অনেকে। মুক্তির পর সিনেমাটি বক্স অফিসে সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
১৫। C/O কাঞ্চেরাপালেম (২০১৮)
ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে নির্মিত ‘C/O কাঞ্চেরাপালেম’ সিনেমাটিতে ভালোবাসার দুইটি ভিন্ন ধারনা উঠে এসেছে। আর এই দুটি ধারনায় ভালোবাসার অনুভুতি মানুষের মধ্যের ব্যবধানের কারনে ব্যাহত হয়ে থাকে। সিনেমার চিত্রনাট্যটি এত সুন্দরভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি দর্শককে বাস্তবতা এবং স্বতন্ত্রতার সারাংশ অনুভব করতে সাহায্য করে। সিনেমাটির শেষ অংশ বাকি অংশগুলোকে একত্রিত করে একটি পরিপূর্ন ছবি দাড় করায়। অভিষিক্ত নির্মাতা ভেঙ্কটেশ মাহা পরিচালিত সিনেমাটিতে প্রায় ৮০ জনের মত সাধারণ মানুষ অভিনয় করেছেন। মুক্তির পর ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো এই সিনেমা। এছাড়া একাধিক পুরষ্কারও জিতেছিলো সিনেমাটি।
১৬। গুদাছাড়ি (২০১৮)
কারিগরি এবং সিনেমাটিকভাবে খুবই সুন্দর একটি সিনেমা ‘গুদাছাড়ি’। সিনেমাটিতে কিছু ছোট ছোট দুর্বলতা থাকলেও দর্শকদের বিনোদিত করার সব উপাদানই আছে এই সিনেমায়। অ্যাকশন স্পাই ধর্মী সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শশী কিরণ টিক্কা। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদিভি সেশ, শোভিতা ধুলিপালা, এবং জগপতি বাবু। এছাড়া আরো কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রকাশ রাজ, সুপ্রিয়া ইয়ারলগদ্দা, ভেনেলা কিশোর, অনিশ কুরুভিল্লা, রাকেশ ভার্রে এবং মধু শালিনী।
চলতি বছরে মুক্তি প্রতীক্ষিত তেলুগু সিনেমাগুলো এই তালিকাকে আরো দীর্ঘায়িত করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এখন পর্যন্ত দর্শকপ্রিয়তা এবং সমালোচকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় উপরোক্ত সিনেমাগুলোই আজকের তেলুগু সিনেমার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলো। প্রিয় পাঠক উপরোক্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে কোন সিনেমাটি আপনার বেশী পছন্দের বা আর কোন সিনেমা এই তালিকায় থাকা উচিৎ বলে মনে করছেন সেটা জানিয়ে দিন মন্তব্যে।
আরো পড়ুনঃ
তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দিয়েছে যে সিনেমা (প্রথম পর্ব)