এখন পর্যন্ত মহাকাব্য মহাভারতের উপর একটি মাত্র চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ‘মহাভারত’ শিরোনামের প্রদীপ কুমার, পদ্মিনী এবং দারা সিং অভিনীত এই সিনেমাটি প্রযোজনা করেছিলেন এ জি নাদিয়াদওয়ালা। সম্প্রতি বলিউড ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে এবার ‘মহাভারত’ নির্মান করছেন তার ছেলে ফিরোজ নাদিওয়ালা। ফিরোজ নাদিয়াদওয়ালা বলিউডে ‘হেরা ফেরি’ এবং ‘ওয়েলকাম’ এর মতো ক্লাসিক কমেডি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন।
একটি সূত্রের উল্লেখ করে সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, ‘ফিরোজ নাদিয়াদওয়ালা মহাভারত নিয়ে কাজ শুরু করেছেন এবং এটিকে ভারতীয় সিনেমার সর্বকালের সবচেয়ে দৃশ্যত অত্যাশ্চর্য সিনেমা হিসেবে পর্দায় হাজির করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। সিনেমাটির চিত্রনাট্যের কাজ বিগত ৪/৫ বছর ধরে চলছে এবং নির্মাতারা প্রি-প্রোডাকশনে আরও কয়েক বছর ব্যয় করবেন। ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে কাজ শুরু হয়ে একই বছরের ডিসেম্বরে হিন্দিসহ অন্যান্য ভাষায় মুক্তি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে’।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে যে, মহাভারতের পুরো গল্পটি তিন ঘণ্টার মধ্যে দেখানো হবে। ফিরোজ নাদিয়াদওয়ালা আত্মবিশ্বাসী যে এটি মার্ভেল এবং ডিসি সিনেমাগুলোর বিপরীতে ভারতের জবাব হিসেবে হাজির হবে। এছাড়াও ‘দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস’, ‘গেম অফ থ্রোনস’, ‘স্টার ওয়ার্স’ এবং ‘হ্যারি পটার’ সিনেমাগুলোর সাথে এক পাল্লায় আসবে ‘মহাভারত। জানা গেছে সিনেমাটি ৭০০ কোটির রুপি বাজেটে নির্মিত হতে যাচ্ছে। সুতরাং, এটি হবে সর্বকালের সবচেয়ে বড় বলিউড সিনেমা।
বিশাল বাজেটে নির্মিত এই সিনেমাটিতে বলিউডের বেশ কয়েকজন প্রথম সারির তারকাকে দেখা যাবে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে যে অভিনেতাদের বিবেচনা করা হচ্ছে তারা হলেন অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগন, রণবীর সিং, পরেশ রাওয়াল, নানা পাটেকর, অনিল কাপুর প্রমুখ। এছাড়া নির্মাতারা সিনেমাটির প্রধান নারী চরিত্রের জন্য বলিউডের প্রতিষ্ঠিত এবং নতুন নায়িকাদের পাশাপাশি দক্ষিণের সিনেমার শীর্ষ তারকাদেরও ব্যাপারেও চিন্তা করছেন। সিনেমাটির নির্মানাতারও খোঁজও চলছে।
১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মহাভারত’ সিনেমাটি বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো। ফিরোজ এবং তার টিম সেই সিনেমায় একই ধরনের গল্প ও বিন্যাস অনুসরণ করছে। বেশিরভাগ অ্যাকশন বাস্তবসম্মত হবে বলেও জানা গেছে। ভারী মাত্রার ভিএফএক্স-এর পরিবর্তে সিনেমাটিতে ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ এবং ‘কিংডম অফ হেভেন’ সিনেমাগুলোর আদলে অ্যাকশন দৃশ্য চিত্রায়িত করা হবে। ভিএফএক্সের চেয়েও সিনেমার চরিত্র, গল্প বলা, আবেগ, সংলাপ ইত্যাদিকে বেশি গুরুত্বপূর্ন বলে মনে করছেন ফিরোজ নাদিওয়ালা।
‘মহাভারত’ সিনেমাটি একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রটি জানিয়েছে, ‘১৯৯৫ সালে নাদিয়াদওয়ালা রাম শাস্ত্র সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে প্রথম ডলবি সাউন্ড নিয়ে এসেছিলেন। ১৯৯৯ সালে তারাই প্রথম কার্তুস সিনেমার একটি গানের জন্য নীল মাদুর (এক ধরনের সবুজ পর্দা) ব্যবহার করেছিল। এরপর তারা ২০০২ সালে আওয়ারা পাগল দিওয়ানা সিনেমায় এ দেশে প্রথমবারের মতো তারের তার ব্যবহার করেছিল এবং এতে হলিউডের দ্য ম্যাট্রিক্স এবং চার্লিস অ্যাঞ্জেলস-এর অ্যাকশন কোরিওগ্রাফারও ছিলেন।‘
সেই ধারাবাহিকতায় এবার ‘মহাভারত’ সিনেমার মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমায় নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছেন। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে নির্মিতব্য ‘মহাভারত’ ৫ডি (5D)-তে দৃশ্যধারন করা প্রথম ভারতীয় সিনেমা হতে যাচ্ছে! এটি এতই অভিনব এবং উত্তেজনাপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে যে দর্শকরা শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করবে। সিনেমাটিতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রদর্শনী হিসেবে পর্দায় উপস্থাপনের জন্য চেষ্টা করছেন নির্মাতারা। এছাড়া একঝাক প্যান ইন্ডিয়া তারকার উপস্থিতি সিনেমাটিকে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসবে সহজেই।
প্রসঙ্গত, মহাভারত ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসে বলা এমন একটি গল্প যা সর্বোত্তম আবেগ, রোমান্স, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা, কর্ম, যাদুবিদ্যা, যাদু এবং সর্বোপরি কৃষ্ণের আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করে। ফিরোজ নাদিওয়ালা প্রযোজনায় সিনেমাটির ট্যাগলাইন হবে ‘রাইট ওভার মাইট’, যেখানে বিশাল যুদ্ধের ক্রমের সাথে সঙ্গীতের প্রাধান্য থাকবে। এছাড়া সিনেমাটি গেমিং এবং মার্চেন্ডাইজিং শিল্পেও একটি দুর্দান্ত প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিনেমাটি আধ্যাত্মবাদ এবং দয়ার প্রতি ভারতের বিশ্বাস এবং বিশ্বাসকে ধাক্কা দেবে এবং পুনঃস্থাপন করবে বলে মনে করছেন সবাই।
আরো পড়ুনঃ
‘ব্রহ্মাস্ত্র’ দ্বিতীয় পর্ব ঘোষণাঃ রনভির না হৃতিক, কে থাকবেন সিক্যুয়েলে?
মেগা বাজেটের ‘ফাইটার’ সিনেমার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন হৃত্বিক রোশন
‘জওয়ান’ সিনেমায় ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিচ্ছেন বিজয় সেতুপতি