বলিউডের সিনেমায় বায়োপিক বা জীবনী নির্ভর সিনেমা একটি নিয়মিত ঘটনা। জীবনী নির্ভর এই সিনেমার তালিকায় দেশপ্রেমিক থেকে শুরু করে সমাজকর্মী এবং গ্যাংস্টারও রয়েছেন। বলিউডে ভারতের গ্যাংস্টারদের নিয়ে নির্মিত সিনেমা খুবই জনপ্রিয়। গ্যাংস্টারদের নির্মিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ভারতের আলোচিত বেশ কিছু গ্যাংস্টারদের জীবনী। এখন পর্যন্ত ভারতের অনেক কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের গল্প পর্দায় উঠে এসেছে নির্মাতাদের নিপুণ স্পর্ষে। এর মধ্যে রয়েছে মান্য সুরভে থেকে অরুণ গাওলি, হাজি মাস্তান এবং মায়া দোলাসের মতো বিপজ্জনক বাস্তবের গ্যাংস্টারদের নাম।
বাস্তবের গ্যাংস্টারদের নিয়ে নির্মিত বলিউডের এই সিনেমাগুলোর প্রধান চরিত্রে নিয়মিতই অভিনয় করেছেন বলিউডের অনেক বড় বড় তারকারা। বিবেক ওবেরয় থেকে শুরু করে অজয় দেবগন এবং শাহরুখ খানকেও দেখা গেছে বাস্তবের গ্যাংস্টারদের চরিত্রে। পর্দায় এই চরিত্রগুলো বলিউড অভিনেতারা দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুললেও বাস্তব জীবনের এই গ্যাংস্টারদের ব্যাপারে দর্শকরা খুব কমই জানেন। বাস্তবের গ্যাংস্টারদের নিয়ে নির্মিত বলিউডের আলোচিত ১০টি সিনেমার বিস্তারিত ফিল্মীমাইক পাঠকদের জন্য থাকছে এই প্রতিবেদনে।
০১। দাউদ ইব্রাহিম ও ছোটা রাজন (কোম্পানি)
রাম গোপাল ভার্মা পরিচালিত ‘কোম্পানি’ বলিউডের অন্যতম সেরা গ্যাংস্টার ড্রামা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সিনেমাটিতে অজয় দেবগন এবং বিবেক ওবেরয়ের অভিনয় তাদের নিজেদের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়গুলোর মধ্যে একটি। সিনেমাটি দাউদ ইব্রাহিম ও ছোটা রাজনের মধ্যকার বিরোধের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছিলো। এই দুই গ্যাংস্টারের মধ্যকার রক্তাক্ত লড়াইয়ের চিত্রটি নির্মাতা রাম গোপাল ভার্মা পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন অন্ত্যন্ত দক্ষতার সাথে।
০২। দাউদ ইব্রাহিম ও টাইগার মেমন (ব্ল্যাক ফ্রাইডে)
একই নামের এস হুসেন জাইদির বইয়ের উপর ভিত্তি করে মুম্বাইয়ের গ্যাংস্টার এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কিছু মাফিয়া কর্তাদের যোগসূত্র নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি এখন পর্যন্ত বলিউডের সবচেয়ে খাঁটি গ্যাংস্টার সিনেমা হিসেবে পরিচিত। অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ডকু-ড্রামাটি ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বোমা হামলা এবং সেইসাথে পরবর্তী দাঙ্গার চিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তোলে। দাউদ ইব্রাহিম এবং টাইগার মেমন কিভাবে সিরিজ বোমা হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছিলেন সেটাই ছিলো সিনেমাটির মূল বিষয়বস্তু।
০৩। সুলতান হাজি (ওয়ান্স আপুন আ টাইম ইন মুম্বাই)
গ্যাংস্টার এবং পুলিশ থ্রিলার ‘ওয়ান্স আপুন আ টাইম ইন মুম্বাই’ সিনেমাটি ভারতের অন্যতম আলোচিত গ্যাংস্টার সুলতান হাজি দ্বারা অনুপ্রাণিত। সিনেমাটিতে সুলতান মির্জার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগন। হাজি মাস্তান ছিলেন মুম্বাইয়ের সবচেয়ে বড়ো গ্যাংস্টার। তিনি চোরাচালান, ফিল্ম ফাইন্যান্স ও রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও করতেন। কথিত আছে, দাউদ ইব্রাহিম, ছোট শাকিল, ছোট রাজন এবং অরুণ গাওলিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এই সুলতান হাজি।
০৪। গাওলি (ড্যাডি)
বিখ্যাত মারাঠি গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ অরুণ গাওলির জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ড্যাডি’ সিনেমাটি । সিনেমাটিতে অরুণ গাওলির চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন রামপাল । দাউদের সাথে শত্রুতার জন্য পরিচিত গাওলি একসময় মুম্বাই পুলিশের মাথাব্যথা ছিল। দাউদের বোনের স্বামী খুনের ঘটনায়ও তার নাম উঠে আসে। টাডা আইনে গ্রেফতার হওয়ার পর গাওলি ৯ বছর হাজতে ছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দাগদি চাউল এলাকা থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক হন। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন অরুণ গাওলি।
০৫। শক্তি (দয়াবান)
‘দয়াবান’ সিনেমাটি বাস্তব জীবনের ডন ভারদারাজন মুদালিয়ারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। আর সিনেমাটিতে এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা বিনোদ খান্না, যেখানে তার চরিত্রের নাম ছিলো শক্তি ভেলহু। ভারদারাজন, হাজি মাস্তান এবং করিম লালা – এই তিন গ্যাংস্টার দীর্ঘকাল মুম্বাই শাসন করেছিলেন। ভারদারাজন মুম্বাইয়ে বসবাসরত দক্ষিণ ভারতীয়দের মসিহা হয়ে উঠেছিলেন। তবে পুলিশের তাড়া খেয়ে তাকে তামিলনাড়ুতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন এবং সেখানেই মারা যান। এরপর একটি প্রাইভেট প্লেনে করে তামিলনাড়ু থেকে মুম্বাইয়ে তার মরদেহ নিয়ে এসে শেষকৃত্য করেন হাজি মাস্তান।
০৬। মায়া ডোলস (শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা)
২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ’শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’ সিনেমাটি ১৯৯১ সালে মুম্বাইয়ের লোখান্ডওয়ালায় ঘটে যাওয়া একটি এনকাউন্টারের বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। মুম্বইয়ের ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টার ‘মায়া ডোলস’ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের এনকাউন্টার হয়। সিনেমাটিতে মায়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিবেক ওবেরয়। উল্লেখ্য যে, মায়া ডোলাসের পুরো নাম ছিল মহেন্দ্র ডোলাস । কিন্তু লোকে তাকে মায়া বলে ডাকতো।
০৭। মান্য সুরভে (শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা)
‘শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা’ সিনেমাটিতে মান্য সুরভে নামে একজন কুখ্যাত গ্যাংস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জন আব্রাহাম। মান্য শিক্ষিত গ্যাংস্টার ছিল, যে কিনা স্নাতক ডিগ্রিধারী ছিলেন। জানা যায় মিথ্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু জেল থেকে পালিয়ে এসে যোগ দেন অপরাধ জগতে। এতোটাই কুখ্যাত হয়ে উঠেছিলো যে সে সময় তাকে দাউদের সাথে তুলনা করা হয়েছিল। যদিও পরে ওয়াদালায় পুলিশের এনকাউন্টারে মারা যান এই ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টার।
০৮। হাসিনা (হাসিনা পার্কার)
মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের রানী হিসেবে পরিচিত ছিলেন দাউদের বোন হাসিনা পারকার । কথিত আছে যে হাসিনার স্বামী ইব্রাহিম পার্কারকে ১৯৯১ সালে মারাঠি গ্যাংস্টার অরুণ গাওলি খুন করেছিলেন। এরপর থেকে হাসিনাও সরাসরি অপরাধ জগতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। একটা সময় ছিল যখন দক্ষিণ মুম্বইয়ে হাসিনার অনুমতি ছাড়া একটা পাতাও নড়তে পারত না। ‘হাসিনা পারকার’ সিনেমাটিতে হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রদ্ধা কাপুর।
০৯। করিম লালা (গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি)
সঞ্জয়লীলা বানসালি পরিচালিত চলতি বছরের ব্যবসা সফল ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ সিনেমায় করিম লালার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগন। করিম লালাকে মুম্বাইয়ের প্রথম মাফিয়া ডন বলে মনে করা হয়, যাকে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হাজি মাস্তানও আসল ডন বলে মনে করতেন। কথিত আছে মুম্বাইতে করিম লালার নাম উচ্চারিত হলেই, মানুষ ভয়ে কাঁপতো। মুম্বাইয়ের ডন থাকাকালীন অনেক অবৈধ কাজের সাথে তার নাম যুক্ত হয়েছিলো।
১০। আবদুল লতিফ শেখ (রইস)
২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রইস’ সিনেমায় গুজরাটের ড্রাগ মাফিয়া আবদুল লতিফ শেখের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। গুজরাটে মদের পাচার, খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িত ছিলো সে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণ মামলাতেও তার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিলো পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণের জন্য আরডিএক্স সরবরাহের গুরুতর অভিযোগ ছিল। তিনি ১৯৯৫ সালে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার হন এবং ২ বছর পর ১৯৯৭ সালে আহমেদাবাদে একজন পুলিশ সদস্য তাকে গুলি করে হত্যা করে।
প্রিয় পাঠক বাস্তবের গ্যাংস্টারদের নিয়ে নির্মিত বলিউডের এই আলোচিত ১০টি সিনেমার মধ্যে কোন সিনেমাটি আপনার সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে সেটা জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে। এছাড়া উপরে উল্লেখিত সিনেমাগুলো ছাড়া বাস্তবের গ্যাংস্টারদের নিয়ে নির্মিত বলিউডের আর কোন সিনেমা এই তালিকায় থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করছেন সেটাও জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে।
আরো পড়ুনঃ
টানা ৫টি ফ্লপের পর যশ রাজের ফোকাসে ‘পাঠান’ এবং ‘টাইগার ৩’
বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত বলিউডের ৫টি ভৌতিক সিনেমা
‘ভুল ভুলাইয়া ২’ সিনেমার সাফল্যের পর প্রতীক্ষিত ১০টি সিক্যুয়েল!