বলিউডে রিমেক সিনেমার ঝলক নিয়মিত দেখেন দর্শকরা। হলিউড থেকে শুরু করে দক্ষিন ভারতের সিনেমার হিন্দি রিমেক একটি নিয়মিত ঘটনা। তবে বলিউডে রিমেক সিনেমা ব্যাপ্তি শুধুমাত্র হলিউড বা দক্ষিন ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই দুই ইন্ডাস্ট্রির বাইরে ফ্রান্স এবং কোরিয়ান সিনেমাও হিন্দিতে রিমেক করে থাকেন বলিউড নির্মাতারা। তবে ভাষা এবং সংস্কৃতি বিবেচনায় অন্য ভাষার সিনেমাগুলো হিন্দিতে রিমেকে নির্মাতারা সিনেমার গল্প এবং চিত্রনাট্যে কিছুটা পরিবর্তনও আনেন নির্মাতারা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যে সেই পরিবর্তন দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় ব্যাপারটা সেরকম নয়। বলিউডে ভয়ঙ্কর রিমেক হওয়া ৭টি জনপ্রিয় কোরিয়ান সিনেমা নিয়ে আলোচনা থাকছে আজকের প্রতিবেদনে!
১। রাধে (কোরিয়ান – দ্যা আউটলোস)
বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ‘রাধে’ মুক্তি পেয়েছ চলতি বছরের ঈদে। করোনা পরিস্থিতির কারনে সরাসরি ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করছেন প্রভুদেবা। সালমান খানের ‘রাধে’ সিনেমাটি ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কোরিয়ান থ্রিলার ‘দ্যা আউটলোস’ সিনেমার রিমেক ছিলো। কিন্তু প্রত্যাশা থাকা স্বত্বেও সিনেমাটি দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। অন্যদিকে কোরিয়ান সিনেমা ‘দ্যা আউটলোস’ সর্বাধিক আয় করা আর-রেটেড সিনেমা ছিলো। ‘দ্যা আউটলোস’ সিনেমাটি যেখানে পুরোপুরি থ্রিলার গল্প এবং চিত্রনাট্যে উপর নির্ভর করে নির্মিত সেখানে ‘রাধে’ সিনেমায় নির্মাতা সালমান খানের স্টারডামকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে ‘রাধে’ সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত বলিউডে ভয়ঙ্কর রিমেক হওয়া একটি সিনেমা হয়ে দাঁড়ায়।
২। জিন্দা (কোরিয়ান – ওল্ডবয়)
পার্ক চ্যান-উকের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা ‘ওল্ডবয়’ বলিউডে কোরিয়ান সিনেমার রিমেকের পথ তৈরি করে দিয়েছিলো। ২০০৩ সালে মুক্তির পর বক্স অফিসে বিশাল সাফল্যের পর ২০০৪ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রান্ড প্রিক্স পুরষ্কার জিতেছিলো। সিনেমাটি প্রসঙ্গে রোজার ইবার্ট লিখেছিলেন, ‘এরকম একতা মুভি খোঁজে পাওয়া বিস্ময়ের ব্যাপার যেখানে অ্যাকশন, সহিংসতা একটি নির্দিষ্ট উদ্যেশে করা হয়ে থাকে।‘ কারন না জেনেই প্রায় ১৫ বছর বন্দী অবস্থায় থাকা একজন মানুষের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি ২০০৬ সালে হিন্দিতে রিমেক করেন নির্মাতা সঞ্জয় গুপ্তা। তবে সঞ্জয় গুপ্তার ‘জিন্দা’ সিনেমাটি ‘ওল্ডবয়’ এর আন-অফিসিয়াল রিমেক হওয়ার কারনে সিনেমাটি নিয়ে আইনি জটিলতায় পরেন সঞ্জয় গুপ্তা। তবে সঞ্জয় গুপ্তা বরাবরই ‘ওল্ডবয়’ প্রযোজকদের দাবী অস্বীকার করে আসছেন। ‘জিন্দা’ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত এবং জন আব্রাহাম।
৩। সিং ইজ ব্লিং (মাই ওয়াইফ ইজ এ গ্যাংস্টার ৩)
‘সিং ইজ ব্লিং‘ সিনেমাটি কোরিয়ান ‘মাই ওয়াইফ ইজ এ গ্যাংস্টার ৩’ সিনেমার রিমেক ছিলো। কোরিয়ান সিনেমাটির মত ‘সিং ইজ ব্লিং’ সিনেমাটিও মুক্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলো। অ্যাকশন এবং কমেডির মিশ্রণে নির্মিত দুটি সিনেমাটিতেই অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে। এছাড়া কোরিয়ান সিনেমাটিতে যেখানে অপেক্ষাকৃত নতুন তারকাদের দেখা গিয়েছিলো সেখানে হিন্দি রিমেকে ৪৮ বছর বয়স্ক অক্ষয় কুমারকে দেখা গেছে ২৩ বছর বয়স্ক এমি জেকসনের সাথে রোমান্স করতে। সবমিলিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি জগাখিচুড়ি ধরনের সিনেমা পাওয়া গেছে এই বলিউডে রিমেক থেকে।
৪। জাজবা (কোরিয়ান – সেভেন ডেস)
জীবনে কোন মামলায় পরাজিত না হওয়া একজন আইনজীবীর গল্প নিয়ে নির্মিত কোরিয়ান থ্রিলার সিনেমা ‘সেভেন ডেস’। সেই আইনজীবীর মেয়েকে অপহরণ করে একজন ধর্ষকের পক্ষ্যে আদালতে লড়াই করে জামিন করিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়। সিনেমাটিকে ইউনজিন কিমের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ২০১৫ সালে বলিউড নির্মাতা সঞ্জয় গুপ্তা ‘জাজবা’ নামে সিনেমাটি হিন্দি রিমেক নির্মান করেন। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেন ঐশ্বরিয়া রাই, ইরফান খান এবং শাবানা আজমি। প্রবল রোমান্স ছাড়াই বলিউডের জন্য একটি অসাধারণ বন্ধুত্বের গল্প ছাড়া সিনেমাটির রিমেকে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিলোনা। যেখানে কোরিয়ান ‘সেভেন ডেস’ সিনেমাটি বক্স অফিসে সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসা কুঁড়াতে সক্ষম হয়েছিলো সেখানে বলিউড সিনেমাটি ছিলো পুরোপুরি ব্যার্থ।
৫। এক ভিলেন (কোরিয়ান – আই সো দ্যা ডেভিল)
নির্মাতা মোহিত সুরির দাবী অনুযায়ী ‘এক ভিলেন’ সিনেমাটি কোরিয়ান প্রতিশোধ থ্রিলার ‘আই সো দ্যা ডেভিল’ থেকে অনুপ্রাণিত নয়। তবে দুটি সিনেমার মধ্যে অনেক মিল পরিলক্ষিত। ভিলেন কতৃক নায়কের গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা এবং নায়কের প্রতিশোধ সবই ছিলো মোহিত সুরির ‘এক ভিলেন’ সিনেমায়। অবধারিতভাবেই মোহিত সুরি গল্প এবং চিত্রনাট্যে বলিউডের নিজস্ব কিছু উপাদান যুক্ত করেছিলেন। সিনেমাটিকে অনেকেই অসামঞ্জস্যপূর্ন হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে ‘এক ভিলেন’ সিনেমাটি বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করেছিলো এবং বর্তমানে সিনেমাটির সিক্যুয়েল নির্মানাধীন রয়েছে। ‘এক ভিলেন’ সিনেমার প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিদ্ধার্ত মালহোত্রা, শ্রদ্ধা কাপুর এবং রিতেশ দেশমুখ।
৬। তিন (কোরিয়ান – মন্টেজ)
১৫ বছরের ব্যবধানে দুইটি অপহরণ, কিন্তু একটির সাথে অপরটির অনেক মিল। দ্বিতীয় অপহরণটি কি তদন্তকারী গোয়েন্দাকে সাহায্য করবে যে প্রথমটির সমাধান করতে পারনি? কোরিয়ান ‘মন্টেজ’ সিনেমাটির গল্প তিনটি চরিত্রকে ঘীরে আবর্তিত – গোয়েন্দা, প্রথম অপহরণের শিকার শিশুর মা এবং দ্বিতীয় অপহরণের শিকার শিশুর দাদা। গল্প ঠিক রেখে সিনেমাটি ‘তিন’ নামে বলিউডে রিমেক হয়েছিলো। তবে ‘তিন’ সিনেমাটি এই তালিকার অন্য সিনেমাগুলোর মত এতটা খারাপ রিমেক ছিলো না। সিনেমাটিতে বলিউড মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। এছাড়া আরো দুইটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিদ্যা বালান।
৭। ভারত (কোরিয়ান – ওডে টু মাই ফাদার)
কোরিয়ান মেলড্রামা সিনেমা ‘ওডে টু মাই ফাদার’ এমন একজন ব্যক্তির কাহিনী যার জীবন আধুনিক কোরিয়ার ইতিহাসের সাথে জড়িত। কোরিয়াতে সমালোচকদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া সিনেমাটি দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো। এটি অতীতের নস্টালজিক মূলিবোধ থেকে উদ্ভূত জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেমের উপর ভিত্তি করে নির্মিত সিনেমাটি। একটি আদর্শ বলিউড সিনেমার সব উপাদান ছিলো এই সিনেমায়। কিন্তু সিনেমাটির বলিউড রিমেকের একমাত্র দূর্বলতা হচ্ছে সালমান খান। সালমান খানের উপযোগী করে সিনেমাটি নির্মান করার জন্য নির্মাতা আলী আব্বাস জাফরকে ‘ভারত’ সিনেমায় সুপারম্যান ধরনের অ্যাকশন এবং আইটেম গান নিয়ে আসতে হয়েছিলো। অসঙ্গতিপূর্ন এইসব উপাদান সংযোজনের কারনে ‘ভারত’ সিনেমাটি ‘ওডে টু মাই ফাদার’ সিনেমার মূল আবেদন থেকে দূরে সরে গেছে।
প্রিয় পাঠক, উপরে উল্লেখিত সিনেমাগুলোর ব্যাপারে আপনার মতামত জানিয়ে দিতে পারেন আমাদেরকে। উপরে আলোচিত সিনেমাগুলোর ছাড়া আর কোন সিনেমা এই তালিকায় থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন তাও জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে।
আরো পড়ুনঃ
সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এবং প্রগতিশীল গল্পের ১০টি বলিউড সিনেমা
বলিউডের প্রতীক্ষিত আলোচিত ১১টি নারী কেন্দিক সিনেমা!
বিশাল বাজেটে নির্মিত বলিউডের কয়েকটি ব্যর্থ সিনেমার উপাখ্যান