সিনেমা এবং সিনেমার মানুষকে কেন্দ্র করে ঢালিউড নামের যে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে সেখানে বিগত কয়েক বছর ধরে সিনেমা ছাড়া বাকী সবকিছুই আছে। আন্দোলন, মহড়া, নির্বাচন এবং সহিংসতা কোন কিছুতেই পিছিয়ে নেই ঢালিউড, শুধুমাত্র পিছিয়ে আছে সিনেমায়। সেই পিছিয়ে থাকাটাও সময়ের চেয়ে শতাব্দী পিছনে। এই ঘটনাগুলোতে বারবার একটি নাম ঘুরে ফিরে এসেছে। জায়েদ খান নামের এই চিত্রনায়ক শিল্পী সমিতির নির্বাচন দিয়ে সামনে আসার পর থেকেই ঢালিউডে দেখা গেছে বিতর্ক।
সম্প্রতি জায়েদ খানকে জড়িয়ে সিনেমা পাড়ায় তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। এর আগে বিশেষ করে শিল্পী সমিতির নির্বাচন এবং সুপারস্টার শাকিব খানকে বয়কট ইস্যুতে ঢালিউডে দেখা গিয়ছিলো মেরুকরণ। প্রথম নির্বাচনে শিল্পী থেকে শুরু নির্মাতা সবার কাছ থেকে সমর্থন নিয়েই শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন জায়েদ খান। কিন্তু সর্বশেষ নির্বাচনে এর মধ্যে অনেককেই দেখা গেছে জায়েদ খানের প্রতিপক্ষের হয়ে নির্বাচন অথবা প্রচারণা করতে। তবে এবার জায়েদ খানকে নিয়ে বিতর্কটা নব্বইয়ের দশকের এক তারকা দম্পতিকে নিয়ে।
ঘটনার সূত্রপাত…
শুক্রবার (১০ জুন) রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে চলচ্চিত্রের মুভিলর্ড খ্যাত ডিপজলের বড় ছেলে সৌমিকের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওমর সানী ও জায়েদ খানের মধ্যে এক অপ্রীতিকর ঘটনা দিয়ে সূত্রপাত বিতর্কের। সেই অনুষ্ঠানে সবার সামনে ওমর সানী থাপ্পড় মারেন চিত্রনায়ক জায়েদ খানকে। প্রতিউত্তরে জায়েদ খান ওমর সানীকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন বলে জানা গেছে। তবে সেই ডিপজলের মধ্যস্থতায় সে রাতের মত ঘটনা সেখানেই শেষ হয়। প্রতক্ষ্যদর্শী অনেকের বক্তব্যে জানা গেছে এর পর এই দুইজনের কেউই সেখানে বেশী সময় উপস্থিত ছিলেন না।
জায়েদ খান এবং ডিপজলের ঘটনা অস্বীকার…
এদিকে ঘটনার পরের দিন সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপকালে সেই অনুষ্ঠানের ঘটনার কথা অস্বীকার করেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান এবং ডিপজল। সে অনুষ্ঠানে এরকম কিছু ঘটেনি বলে মন্তব্য করেন ডিপজল। অন্যদিকে ওমর সানীর সাথে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে উল্লেখ করেন জায়েদ খান। এছাড়া পিস্তল বের করে গুলি হত্যার হুমকির বিষয়টিও ভিত্তিহীন বলেন এই চিত্রনায়ক। তবে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটানটি নিশ্চিত করেছেন সংবাদ মাধ্যমে।
শিল্পী সিমিতিতে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ওমর সানীর লিখিত অভিযোগ
ঘটনার প্রেক্ষিতে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি বরাবর শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। অভিযোগপত্রে ওমর সানী লিখেছেন, ‘সমিতির সদস্য জায়েদ খান গত চার মাস ধরে আমার স্ত্রী আরিফা পারভীন জামান মৌসুমীকে নানাভাবে হয়রানি ও বিরক্ত করে আসছেন। আমার সুখের সংসার ভাঙার জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে আসছেন।’
জায়েদ খানকে ভালো ছেলে উল্লেখ করে মৌসুমীর বিবৃতি
মৌসুমীকে বিরক্ত করার কারনে জায়েদ খানকে থাপ্পড় মারার কথা বলেছিলেন ওমর সানী। কিন্তু উক্ত ঘটনায় উল্টো জায়েদ খানের পক্ষ্যে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার প্রিয়দর্শনী অভিনেত্রী মৌসুমী। গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো একটি অডিও বার্তার মাধ্যমে মৌসুমী বলেন, ‘আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, সেটা খুবই ভালো একটা সম্পর্ক। সেখানে আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ও অনেক ভালো ছেলে। সে কখনোই আমাকে অসম্মান করেনি।’ সেই বার্তায় নিজের স্বামী ওমর সানীকে ভাই বলে উল্লেখ করে সমালোচনার মুখে পরেন মৌসুমী।
মৌসুমীর বিবৃতির পর ফেসবুক লাইভে ওমর সানী
এরপর স্ত্রীর এমন মন্তব্যে ওমর সানী ফেসবুক লাইভে জানান, ‘মৌসুমী আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা। তাকে অসম্মান করে আমি একটি কথাও বলব না। সে কি মনে করে জায়েদ খানের পক্ষে কথা বলছে সেটা আমি জানি না। আমার গার্ডিয়ান হিসেবে আমার ছেলে ফারদিন এবং মেয়ে ফাইজা অবশ্যই আপনাদের সবকিছু ক্লিয়ার করবে। আমি চাই না, এই ২৭ বছরে এসে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি (পরিবারের মধ্যে) হোক। আমি আমার ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়েই থাকতে চাই।’
মৌসুমীর প্রতি জায়েদ খানের কৃতজ্ঞতা
মৌসুমীর এই অডিও বার্তার পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জায়েদ খান। এমনকি তিনি মৌসুমীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। জায়েদ খান গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আপা (মৌসুমী) সব পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আপাকে ধন্যবাদ।’ এ সময় ওমর সানীর ওপর তার আর কোনো ক্ষোভ আছে কিনা জানতে চাইলে জায়েদ খান বলেন, ‘ওমর সানী ভাইয়ের ওপর আমার কোনো ক্ষোভ বা আক্ষেপ নেই। উনি সিনিয়র মানুষ। আমি যে সঠিক ছিলাম, আজকে আপার বক্তব্যই তা প্রমাণ করে।’
জায়েদ খানকে দোষী বলে সানী-মৌসুমীর ছেলে ফারদিন এহসানের বিবৃতি
এই ইস্যুতে এবার মুখ খুললেন তারকা দম্পতি ওমর সানী-মৌসুমীর ছেলে ফারদিন এহসান। তিনি বলেন, ‘শুধু আম্মুকে (মৌসুমী) নয়, উনি (জায়েদ খান) কমবেশি সবাইকে ডিস্টার্ব করেন। আমার আব্বুর সঙ্গেও বেয়াদবি করেছেন। আম্মু ভেবেছিলেন, বিষয়টি খুবই সামান্য, এটা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক।’ ফারদিন আরও বলেন, ‘তিনি (জায়েদ খান) আমার ব্যবসারও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন। আমি বিষয়গুলো জানি, কিন্তু পাবলিকলি সব বলব না। উনাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ব এমন না। উনাকে এত গুরুত্বও দিচ্ছি না। জায়েদ খান আর রাস্তার ব্যাঙ এক কথা! তাই উনাকে নিয়ে ভাবছি না।’
সংসার ভাঙা নিয়ে ওমর সানীর মন্তব্য
পুরোপুরি ভিন্ন রকমের বিবৃতির কারনে অনেকেই মন্তব্য করেছেন তা হলে কি ওমর সানী-মৌসুমী দম্পতির সংসারে ভাঙনের সুর বাজছে? কেউ কেউ বলছেন তারা আলাদা থাকছেন। এ প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে ওমর সানী বলেন, ‘আমরা এখন একই ছাদের নিচে আছি। দেখুন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য, রাগ-অভিমান থাকবেই। পৃথিবীর আদি যুগ থেকে এটা হয়ে আসছে। এটা স্বাভাবিক ইস্যু। আমাদের ভিতরেও যে হয়নি তা নয়। আমার ২৭ বছরের সংসারে আমার ছেলে বড় হয়েছে বিয়ে করেছে। আমার মেয়ে ১৮ বছরে পা দিয়েছে। এই মুহূর্তে এসে আমি জায়েদ খানের বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলেছি এ বিষয়ে একদমই অটল। মৌসুমীকে আমি অসম্মান করে কথা বলতে চাই না। কারণ সে আমার সন্তানের মা।আমি তাকে অসম্মান করতে পারি না।’
শিল্পী সমিতিতে ওমর সানীর লিখিত অভিযোগ এবং ফারদিন এহসানের বিবৃতি পুরো ঘটনাতে নতুন মোড় নিয়ে এসেছে। শিল্পী সমিতির বর্তমান সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন গত নির্বাচনে জায়েদ খানের বিপরীত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে এখনো জায়েদ খান এবং নিপুণের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। নতুন এই ঘটনায় এ বিষয়গুলো আবার সামনে আসে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। এছাড়া শিল্পী সিমিতির পক্ষ্য থেকে এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটা জানার অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো কিছুটা সময়।
আরো পড়ুনঃ
শপথ পাঠ করালেন সভাপতি কাঞ্চনঃ দায়িত্ব ও শপথ নিয়ে যা বললেন জায়েদ
প্রতারণার অভিযোগে জায়েদ খানের শপথ বাতিল: অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে সায়মন