মামলা গ্রেফতার এবং বহিষ্কার: পরীমনি ইস্যুতে প্রতিবাদের ঝড়

মামলা গ্রেফতার এবং বহিষ্কার

সম্প্রতি সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিলো। রোববার (১৩) জুন রাত ৮টা দিকে নিজের ভেরিফাইট ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন পরীমনি নিজেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে উক্ত ঘটনার বিচারও চেয়েছেন এই অভিনেত্রী। এদিকে ঘটনা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সিনেমা এবং ছোট পর্দার শিল্পী এবং নির্মাতারা ঘটানার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গত ৮ই জুন রাতের ঘটনা হলেও এতদিন থানায় লিখিত কোন অভিযোগ জাননি এই অভিনেত্রী। অবশেষে গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশের পর আজ থানায় মামলা করেছেন পরীমনি।

ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগে সাভার মডেল থানায় দায়ের করা চিত্রনায়িকা পরীমনির মামলায় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। জানা গেছে দুপুরের মধ্যে প্রধান আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করে পরীমনি বলেন, ‘এত দ্রুতই প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন ভরসা পাচ্ছি। নিশ্চিন্ত হলাম। বাঁচতে পারব। বাকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।’ এছাড়া উক্ত ঘটনায় পরীমনির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নূরে আজম মিয়া বলেন, ‘তিনি যেহেতু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, আমাদের দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাঁকে আমরা বিশেষ প্রহরায় রাখছি। তাঁর বাসা ও আশপাশে পুলিশ আছে। তাঁর নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয়, তা–ই করা হচ্ছে।’

এরআগে মামলার এজহারে পরীমনি লিখেন, ‘নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০), অমিসহ (৪১) অজ্ঞাতনামা চারজনের বিরুদ্ধে এ মর্মে এজাহার দায়ের করছি যে ৮ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় আমার বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, বনিসহ দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হই। পথিমধ্যে অমি বলে, বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি অনুরোধ করে, এখানে পরিবেশ সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো। আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর ১ নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১ নম্বর আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন।’

মামলা গ্রেফতার এবং বহিষ্কার

পরীমনি এজাহারে আরও লিখেছেন, ‘মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমি সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পাই। ১ নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ১ নম্বর আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারে। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নম্বর আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাঁকেও মারধর করে। এ সময় আমি ৯৯৯–এ কল করতে গেলে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়। ২ নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন ১ নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।’

এজাহারে পরীমনি এও লিখেছেন, ‘আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারব। প্রকাশ থাকে যে ২ নম্বর আসামি অমি পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকে আমার বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায় এবং ২ নম্বর আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামির সহায়তায় ১ নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। আনুমানিক রাত তিনটার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় আমার সঙ্গীদের সঙ্গে ফিরে আসি। আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে। ওই বিষয়ে আমি আমার পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।’

মামলা গ্রেফতার এবং বহিষ্কার

তবে গ্রেফতারের পর পরীমনির আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাসির উদ্দিন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সে রাতের ঘটনা নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বুধবার (৯ জুন) রাতে যখন ক্লাব থেকে বের হই, তখন ক্লাবে ঢোকে তারা (পরীমনি ও তার বন্ধু)। এ সময় তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাদের মধ্যে একটা ছেলে উচ্ছৃঙ্খল ছিল। ক্লাবে ঢোকার পর আমাদের বারের কাউন্টার থেকে বড় বড় ও দামি ড্রিংকসের বোতল জোর করে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে বলি, আপনারা ড্রিংকসগুলা নিতে পারেন না। আমি তাদের বাধা দিই। আমি বলি, এটা শুধু ক্লাবের মেম্বারদের জন্য। এখান থেকে মদ নিতে হলে তোমাদের কোনো সদস্যের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে নিতে হবে। তারপর আমি আমার সিকিউরিটিদের ডাক দিই। নিরাপত্তারক্ষীরা এসে তাদের নিয়ে যায়।’

এদিকে আরো জানা গেছে ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে নাসির উদ্দিন (ইউ) মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জুন) ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা বোট ক্লাব। কমিটির সভাপতি ড. বেনজির আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির আরও আটজন সদস্য যুক্ত ছিলেন। ক্লাবের উপদেষ্টা রুবেল আজিজও এ সভায় অংশ নেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি ও নাসির ইউ মাহমুদকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরো পড়ুনঃ
ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে বিচার চাইলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত