বিগত দেড় দশক ধরে দেশীয় চলচ্চিত্রে শাকিব খান শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছেন। শাকিব খানের সিনেমা মুক্তি মানেই প্রেক্ষাগৃহে ভক্তদের উম্মাদনা। বিশেষ করে বিগত বছরগুলোতে ঈদে এই তারকার সিনেমার ছিলো একক রাজত্ব। গত বছরের ঈদেও মুক্তি পেয়েছিলো শাকিব খান অভিনীত দুটি সিনেমা – ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘গলুই’। সম্প্রতি সুপারস্টার শাকিব খানের তারকা খ্যাতি নিয়ে কথা বলেন পরিচালক সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি এবং কিংবদন্তী নির্মাতা কাজী হায়াৎ। মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় শাকিব খান এখনো শীর্ষে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শাকিব খান প্রসঙ্গে কাজী হায়াতের এই মন্তব্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে স্বপন চৌধুরী নামে আরেক নির্মাতার সঙ্গে এফডিসির প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির অফিসে আলাপকালে শাকিব খান প্রসঙ্গে এই রকম মন্তব্য করেছেন কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘সিনেমার এই বাজারে একমাত্র শাকিব খানের ছবি মুক্তি পেলে কমপক্ষে ১০০ বন্ধ হল খোলে, ঈদে তার ছবি এলে মুক্তির আগে কোটি টাকা উঠে আসে।‘
কারো নাম উল্লেখ না করলেও অন্য নায়কদের থেকে বাণিজ্যিক সিনেমায় শাকিব খান দশ গুণ এগিয়ে বলে মনে করেন কিংবদন্তী এই নির্মাতা। এছাড়া শাকিব খানের সিনেমায় বিনিয়োগ ফেরত নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে কাজী হায়াৎ বলেন ‘কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না; তবে এটাই সত্যি যে অন্য নায়করা যেখানে ১০, শাকিব সেখানে একাই ১০০! শাকিবকে নিয়ে ছবি করলে সিনেমা হলের বাইরে ইউটিউব চ্যানেল, টিভি রাইটস এবং ওটিটি সবকিছু মিলিয়ে ১ কোটি টাকার বেশী বিক্রি হবে।‘
শাকিব খানের সিনেমায় প্রযোজকের বিনিয়োগ ফেরত প্রসঙ্গেও আরো বিস্তারিত কথা বলতে দেখা গেছে এই নির্মাতাকে। ঈদ ছাড়াও শাকিব খানের সিনেমার বাণিজ্যিক অর্জন নিয়ে মন্তব্য করেছেন এই নির্মাতা। লম্বাসময় ধরে শাকিব খানকে দেখে কাজী হায়াৎ তার অভিজ্ঞতায় দৃঢ়ভাবে আরো বলেন, ‘মূলধারার চলচ্চিত্র বাঁচানোর চাবি এখনও শাকিবের হাতে। ঈদ ছাড়াও অন্যান্য সময় শাকিবের ছবি মুক্তি পেলে প্রযোজক নিশ্চিতে ৫০ লাখ টাকা থেকে ৭৫ লাখ টাকা অগ্রিম পায়। যা আর কারো ক্ষেত্রে হয় না।‘
সর্বশেষ নির্বাচনে পরিচালক সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন কাজী হায়াৎ। বর্তমানে দেশীয় সিনেমার অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনুদানের জন্য সরকার প্রতিবছর প্রচুর টাকা দিচ্ছে। ২০-২৫ কোটি টাকা দিলে এর অর্ধেক এফডিসিতে আনার চেষ্টা করবো। সেই টাকা দিয়ে মূলধারার নির্মাতা বাণিজ্যিক সিনেমা তৈরি করবে। এই টাকা দিয়ে ব্যবসা হলে আবার ফেরত দেবে। ইতিহাস কিংবা ভাষা আনন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ছবি বানানোর জন্য বাকি টাকা যেন সরকার ব্যয় করে।‘
এদিকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে পরিচালকদের আবাসন ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন কাজী হায়াৎ। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গণপূর্ত মন্ত্রী ও সচিবের কাছে বলবো, ১০-১২ একর জমি আমাদের দিয়ে ঘর তৈরি করে দেন। কোনো ইন্টারেস্ট নিয়েন না, যেদিন ফ্ল্যাটের মূল্যটা ভাড়ার টাকায় শেষ হবে সেদিন আমাদের লিখে দিয়েন। আমার মনে হয়, এমন সুন্দর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী, পূর্তমন্ত্রী ও সচিব মেনে নেবেন।‘
উল্লেখ্য যে, দেশীয় সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য নির্মাতা কাজী হায়াৎ। আশি এবং নব্বইয়ের দশকের একাধিক বাণিজ্যিক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। তার বিখ্যাত সিনেমাগুলোর তালিকায় রয়েছে ‘তেজী’, ‘লুটতরাজ’, ‘দাঙ্গা’, ‘আম্মাজান’, ‘ইতিহাস’ ইত্যাদি। চার দশকের ক্যারিয়ারে ৫২টি সিনেমা পরিচালনা করেছেন কাজী হায়াৎ। তার ৫০তম সিনেমা ছিলো ‘বীর’, যেটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শাকিব খান।
প্রসঙ্গত, কাজী হায়াৎ পরিচালিত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা হচ্ছে ‘জয় বাংলা’। ২০২২ সালের বিজয় দিবসে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত সরকারী অনুদান প্রাপ্ত সিনেমাটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাপ্পী এবং জাহারা মিতু। তবে এই সিনেমাটির বক্স অফিস অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো ছিলো না। প্রেক্ষাগৃহ সিনেমাটি মুখ থুবড়ে পরেছিলো। এমনটি মুক্তির এক সপ্তাহের মাথায়ই প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটির প্রদর্শনী বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুনঃ
কর্তন ছাড়াই সেন্সর ছাড়পত্র পেলো শাকিব খানের ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’
নির্মাতার উপর বিরক্ত শাকিব খানঃ ‘প্রেমিক’ সিনেমার কাজ অনিশ্চিত
থ্রিলার ঘরানার গল্পে শাকিব খানের ‘প্রেমিক’: জানুয়ারিতে শুরু দৃশ্যধারন