গত ২৫শে জানুয়ারি মুক্তির পর বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ঝড় তুলতে সক্ষম হয়েছিলো শাহরুখ খানের ‘পাঠান’। সিনেমাটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির চেষ্টা করেছিলো দেশীয় একটি প্রযোজনা সংস্থা। তথ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছিলো উক্ত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কিছু সংঘটনের বিরোধীতার কারনে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি তথ্য মন্ত্রণালয়। সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তির পিছনে যুক্তি ছিলো, দেশীয় প্রেক্ষাগৃহের নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণে হিন্দি সিনেমা সাহায্য করবে। সিনেমাটি মুক্তির অনুমতি না পাওয়ায়, প্রেক্ষাগৃহ বাঁচাতে হিন্দি অথবা শাকিব খানের নতুন সিনেমা চান প্রদর্শকরা।
বিগত কয়েক বছর ধরেই অনেকটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে বেশীয় প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসায়। মানসম্পন্ন সিনেমার অভাবে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়েছে দেশে। যে কয়েকটা এখনো টিকে আছে সেগুলো লোকসান গুনছে বছরের পর বছর। দেশের প্রেক্ষাগৃহ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৬৫টির মতো সিঙ্গেল স্ক্রিন চালু আছে। এ বছর জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো দর্শকদের মাঝে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা। ফলে প্রযোজকদের পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহ মালিকদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ঢাকাই সিনেমার প্রদর্শক সমিতির ভাষ্যমতে, আশা জাগিয়েও নতুন বছরে মুক্তি পাওয়া ‘ব্ল্যাক ওয়ার’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘সাঁতাও’, ‘ভাগ্য’ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি। প্রেক্ষাগৃহ টিকিয়ে রাখতে যে পরিমাণ মানসম্মত সিনেমা দরকার তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন প্রযোজক-পরিচালকরা। তাই আমদানি করে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শন করে অন্তত প্রেক্ষাগৃহ টিকিয়ে রাখতে চান প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা। তাদের বিশ্বাস, নতুন নতুন হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেলে দেশীয় প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরবে।
এদিকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক মাল্টপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষও চাইছে বাংলাদেশে যেন হিন্দি সিনেমা মুক্তি পায়। সংশ্লিষ্টরা বিশ্বাস করেন, হিন্দি সিনেমা মুক্তি দিতে পারলে দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী একাধিক প্রেক্ষাগৃহ মালিকরাও হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমদানি করে হিন্দি ছবি মুক্তিতে অনেকেই বিরোধিতা করে বিভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন। কিন্তু প্রদর্শক সমিতি বলছে যেহেতু দেশের নির্মাতারা মানসম্পন্ন সিনেমা উপহার দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন, প্রেক্ষাগৃহ বাঁচিয়ে রাখতে আপাতত হিন্দি সিনেমাই শেষ ভরসা।
প্রেক্ষাগৃহ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবকিছুর অবাধ বাণিজ্য হচ্ছে। সংকট কাটাতে সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে ভারত থেকে কাঁচামাল (চাল, ডাল, পেয়াজ, গরু) আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে সিনেমা সংকট থাকলে আমদানিতে সমস্যা কোথায়?’ দেশীয় সিনেমা এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী সংকটের মধ্যে রয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের একক স্ক্রিনের প্রেক্ষাগৃহ জাদুগরে পাঠাতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত হাতেগোনা কিছু সিনেমা ছাড়া বেশীরভাগই ছিলো ‘বস্তাপচা’! এইসব সিনেমা দর্শকদের হলে আনতে নয়, বরং হল বিমুখ করতে সাহায্য করছে।
অন্যদিকে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের জন্য সরকার হাজার কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘হলে ছবি চালিয়ে সরকারকে ওই ঋণসুদ সহ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু যে অবস্থা চালানোর মতো তেমন ছবি নেই। তাই ঋণ নিলে শোধ করতে সমস্যা হবে। বছরে কমপক্ষে ১০টি করে হিন্দি ছবি আসার সুযোগ দিলে হলে ব্যবসা করে আমরা সরকারকে ঋণ শোধ দিতে পারবো।‘
এমতাবস্থায় প্রেক্ষাগৃহ বাঁচাতে বাংলাদেশে ‘পাঠান’ সিনেমাটি মুক্তির অনুমতি চাচ্ছে প্রদর্শক সমিতি। এই সিনেমার মাধ্যমে অন্তত কিছু ব্যবসা হবে। সেটি না হলে অন্তত শাকিব খানের নতুন চায় প্রদর্শক সমিতি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সব চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু মুক্তির এখনও অনুমতি পাইনি। যদি মিরাকল কিছু না ঘটে তাহলে হয়তো আটকে যাবে! আমাদের কথা হল হিন্দি ছবি দেন নইলে শাকিব খানের ছবি দেন। কারণ, সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতে একমাত্র শাকিব খানের নতুন সিনেমা দেখতে বেশী দর্শক আসে। চালু থাকা বেশিরভাগ হলে তার পুরান ছবি চলছে।‘
সাম্প্রতিক সময়ে শাকিব খানের নতুন সিনেমা মুক্তি না পাওয়ার কারনে প্রেক্ষাগৃহে সংকট আরো বড় আকার ধারন করছে বলে জানিয়েছে সমিতিটি। দেশীয় সিনেমায় শাকিবের বিকল্প এখনও কেউ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শাকিব খানের নতুন সিনেমা আসছে না। আগে সে বছরে ৫ থেকে ৭টি করে সিনেমা করতো। যতদূর জানি গত ঈদেও তার ছবি আসেনি। শাকিবের বিকল্প এখনও কেউ হয়ে ওঠেনি। তার ছবি পাই না, হল টিকিয়ে রাখতে হিন্দি ছবি চাইলে সেটিরও অনুমতি পাচ্ছি না। তাহলে আমরা কোথায় যাবো?’
মহামারীর কারনে বিশ্বের সবগুলো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি অনেকটাই থমকে গিয়েছিলো। কিন্তু করোনা পরবর্তী হলিউড, বলিউড সহ অন্য ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা হলেও ঢাকার সিনেমা সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এই পরিস্থিতি হেকে উত্তরণের জন্য বাণিজ্যিক সিনেমা দরকার উল্লেখ করে মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়িক মন্দা কাটেনি। মধুমিতার মতো সিঙ্গেল স্ক্রিনের জন্য কমার্শিয়াল সিনেমা লাগবে। ভালো ছবি না পেয়ে হল আপাতত বন্ধ রেখেছি। কারণ চালু রাখলে যে খরচ সেটা উঠে আসে না। আমরা পারছি না বিধায় শুরু থেকে আমি হিন্দি ছবি আমদানির পক্ষে।‘
উল্লেখ্য যে, শাকিব খান অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো গত বছরের ঈদুল ফিতরে। একই সাথে ‘গলুই’ এবং ‘বিদ্রোহী’ নামে দুটি সিনেমা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই সুপারস্টার। বর্তমানে শাকিব খানের তিনটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সিনেমাগুলো হচ্ছে তপু খান পরিচালিত ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’, বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘আগুন’ এবং ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘অন্তরাত্মা’। এছাড়া শাকিব খানকে নিয়ে সানি সানোয়রা পরিচালিত ‘সের খান’ নামে একটি সিনেমা নির্মানাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, যশ রাজ ফিল্মসের স্পাই ইউনিভার্সের অংশ হিসেবে নির্মিত হয়েছে শাহরুখের ‘পাঠান’ সিনেমাটি। শাহরুখ খানের সাথে এই সিনেমায় আরো অভিনয় করেছেন দীপিকা পাডুকোন এবং জন আব্রাহাম। দীপিকাকে সিনেমাটিতে পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা চরিত্রে দেখা গেছে। আর এতে জন আব্রাহাম থাকছেন নেতিবাচক চরিত্রে। এছাড়া এতে অতিথি চরিত্রে হাজির হচ্ছেন বলিউডের ভাইজান সালমান খান। আর সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ‘ওয়ার’ খ্যাত নির্মাতা সিদ্ধার্ত আনন্দ।
আরো পড়ুনঃ
‘কেজিএফ ২’কে পিছনে ফেলে ইতিহাসের সর্বোচ্চ আয়ের হিন্দি সিনেমা ‘পাঠান’
শাকিব খানের ‘প্রেমিক’ নিয়ে অনিশ্চয়তাঃ বাদ পড়ছেন নির্মাতা রায়হান রাফি
তিন সিনেমা নিয়ে আগামী ঈদে প্রেক্ষাগৃহে ফিরছেন শাকিব খান