আগামী ২৯শে আগস্ট মুক্তি পেতে যাচ্ছে চিত্রনায়ক রোশান এবং চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি অভিনীত সিনেমা ‘আশীর্বাদ’। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এই সিনেমাটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে। সম্প্রতি ‘আশীর্বাদ’ প্রচারণার জন্য আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে সিনেমাটির প্রধান তারকা রোশান এবং মাহির বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ আনেন প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস। এবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে ‘আশীবার্দ’ প্রযোজকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করলেন জিয়াউল রোশান এবং মাহিয়া মাহি।
আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মাহি প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসকে অপেশাদার প্রযোজক হিসেবে উল্লেখ করেন। সিনেমাটির দৃশ্যধারন চলাকালীন সময়ে এই প্রযোজকের বিভিন্ন অপেশাদার আচরন নিয়ে কথা বলেন এই অভিনেত্রী। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনেমাটিতে মাহির বিপরীতে অভিনয় করে চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশান। সরকার ও জনগণের টাকায় নির্মিত এই সিনেমাটিতে অনুদানে টাকা খরচ না করে বরং তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করলেন রোশান-মাহি।
জেনিফারের অপেশাদার আচরণের কথা উল্লেখ করে মাহি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি এবং সরকারি অনুদানের ছবি বলেই আশীর্বাদ করতে রাজি হয়েছিলাম। আরেকটি কারণ হচ্ছে এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। তার সঙ্গে আমার এতো ভালো বোঝাপড়া যে ১০ লাখের জায়গায় ৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেই। আমি কিন্তু শুরু থেকে বলে আসছি জেনিফারকে দেখে আমি সিনেমাটি করিনি। কিন্তু জেনিফার যে শুটিংয়ে এমন অপেশাদার আচরণ করবেন ভুলেও ভাবিনি।‘
সিনেমাটির দৃশ্যধারনের কাজ চলাকালীন অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। জেনিফারের মিথ্যাচারে তার সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘এতে করে আমি ঠকেছি। আমার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। ছবি করতে গিয়ে যে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি গত ১০ বছরের ক্যারিয়ারে কোনো প্রযোজকের সঙ্গে এমন বাজে অভিজ্ঞতা হয়নি।‘ তবে তিনি কাউকে ছোট করে কথা বলছেন না বলেও নিশ্চিত করেছেন মাহিয়া মাহি।
‘আশীবার্দ’ প্রযোজকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মাহি বলেন, ‘খুব স্বপ্ন নিয়ে অনুদানের সিনেমাটি করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কোনোভাবে যদি প্রধানমন্ত্রী কাজটি দেখেন! ৬০ লাখ টাকায় অনেক ভালো সিনেমা বানানো সম্ভব। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার মতো খরচ করেছেন প্রযোজক। বাকি টাকা প্রযোজক কোথায় খরচ করেছে সরকারের খতিয়ে দেয়া উচিত। তার জবাবদিহি করা উচিত। এই টাকা ওনার নয়। সরকারি অনুদান দেয়া হয় জনগণের ট্যাক্স থেকে।‘
অনুদানের টাকা খরচের হিসেব প্রযোজক জেনিফারের কাছে চাওয়ার দাবী জানিয়ে মাহি আরো বলেন, ‘সরকার সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের কাছে আবেদন জানাই বাকি টাকা জেনিফার ফেরদৌস কোথায় খরচ করেছেন নাকি শপিং করেছেন খুঁজে দেখার। প্রযোজক যখন সিনেমা রিলিজ দেয় তখন আগেই ভাবে কীভাবে বিনিয়োগ উঠবে। কিন্তু জেনিফারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। নিজের প্রচারের জন্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমাদের ছোট করছেন। এতে সিনেমাটি থেকে মানুষ মুখ ফেরাচ্ছে। আগামীতে যাদের সরকারি অনুদান দেয়া হবে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি, আদৌ সিনেমা বানাতে পারে কিনা জেনে বুঝে তারপর অনুদান দেয়া উচিত।‘
একই অভিযোগ করেছেন সিনেমাটির প্রধান তারকা জিয়াউল রোশান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র একলাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছি। বলেছি আমার বাকি টাকা সিনেমাটির ভালোর জন্য খরচ করতে। কিন্তু জেনিফার তা করেনি। বরং নিজের মন মতো যা ইচ্ছে তাই করছেন। আমাদের না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন যাতে তার ব্যক্তিগত প্রচার বাড়ে। আমাকে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে নিজের কাটতি বাড়াচ্ছেন। যা আমি কোনোভাবে আশা করিনি। বাধ্য হয়েই আজ সবাইকে কথাগুলো জানাতে হলো।‘
এছাড়া জেনিফারের রিরুদ্ধে সিনেমাটিতে অভিনয় শিল্পীদের পারিশ্রমিক নিয়েও গড়মিলের অভিযোগ করেছেন মাহিয়া মাহি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে সিনেমাটি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জেনিফার গোজামিল করে সিনেমার বাজেট কমিয়ে শেষ করেছে। শুটিংয়ে ক্যারেক্টারের সঙ্গে যায় না এমন অনেককে ডেকে ডেকে এনে শুটিং করিয়েছে। কারও পারিশ্রমিকও ঠিকমতো দেয়নি। তবে আমি আমারটা আগেই বুঝে নিয়েছি। জেনিফার সিনেমাটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এই অধিকার তার নেই। কারণ এটা তার নিজের টাকার সিনেমা নয়।‘
জিয়াউল রোশান এবং মাহিয়া মাহি ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনেমাটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। রোশান-মাহির কথার প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই নির্মাতা বলেন, ‘প্রযোজক জেনিফার যেসব অভিযোগ তুলেছেন সবটাই অবান্তর। রোশান-মাহি যা বলেছেন একেবারেই ঠিক। তারা দুজনেই ভীষণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।‘
সিনেমাটির নির্মাণে নিজের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে মানিক আরো বলেন, ‘এখন সিনেমার একটা জোয়ার চলছে। পরাণ, হাওয়া হিট যাচ্ছে। দর্শক হলে ফিরছে। অথচ এই সময়ে আমার একটা ছবি মুক্তি পেলেও সেটি নিয়ে পজিটিভ কিছু বলতে পারছি না। একজন নির্মাতা হিসেবে এরচেয়ে কষ্টের বিষয় আর কি হতে পারে? যে সময়ে ঢাকা অ্যাটাক, মিশন এক্সট্রিম, অপারেশন সুন্দরবন-এর মতো ছবি হচ্ছে, সেই সময়ে আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একটা জিপ পাইনি শুটিংয়ের জন্য। এটা আমার গল্পের ডিমান্ড ছিলো। আমি একটা গান প্রপারলি শুট করতে পারিনি। যা করেছি জোড়াতালি দিয়ে। এজন্যই বলছি, অনেক আশা নিয়ে শুরু করেও ছবিটা আমি ঠিকঠাক মতো বানাতেই পারিনাই।‘
উল্লেখ্য যে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছে ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটি। গত বছর শুরু হয় সিনেমাটির দৃশ্যধারন। সত্তর দশকের ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি কয়েকটি ধাপে উঠে আসবে সিনেমাটির গল্পে। রোশান ও মাহিয়া মাহি ছাড়াও সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করছেন কাজী হায়াৎ, রেহানা জোলি, রেবেকা, সৌরভ ফারসী, অরণ্য বিজয়, সীমান্তসহ অনেকে। সিনেমাটি প্রযোজনার পাশাপাশি কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তাহেরা ফেরদৌস জেনিফার। আর সংলাপ লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু।
আরো পড়ুনঃ
‘আশীর্বাদ’ প্রচারণা: পরস্পর বিরোধী অবস্থানে প্রযোজক এবং মূল তারকারা
প্রকাশ্যে ফার্স্টলুক পোষ্টারঃ আগামী মাসে আসছে সৈকত নাসিরের ‘বর্ডার’
বাংলা সিনেমায় সুদিনের ইঙ্গিতঃ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কতটুকু প্রস্তুত ঢালিউড