আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের জন্য বলিউডের যে পাঁচটি সিনেমা অস্কারের যোগ্য!

আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের জন্য

আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের জন্য

কল্পনা করুন আপনি আপনার মুখে সুস্বাদু বিরিয়ানি নিয়ে তার স্বাদ উপভোগ করছেন। ঠিক যে মুহুর্তে আপনি বিরিয়ানি গিলতে যাবেন সেই মুহুর্তে একটি এলাচিতে আপনার কামড় পরলো! তখন কেমন অনুভব করবেন? বলিউডের এমন কিছু সিনেমা আছে যার ক্লাইম্যাক্স আপনাকে সেরকম অনুভুতি দিবে। অনেক সময়ই দেখা যায় পুরো সিনেমাটি আপনি উপভোগ করেছেন কিন্তু, শেষ মুহুর্তে এসে আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের জন্য সিনেমাটি আপনার কাছে খুবই হতাশাজনক মনে হয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সিনেমাটি আপনি পুরো সময় উপভোগ করেছেন এবং আপনার কাছে সিনেমাটির গল্প বলার ধরন যতেষ্ট ভালো লেগেছে। কিন্তু সিনেমাটির ক্লাইম্যাক্স এমন অযৌক্তিকভাবে দেখানো হয়েছে, যা পুরো সিনেমাটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এমন হতে পারে বলিউডের এই জনপ্রিয় এবং আলোচিত সিনেমাগুলো যখন আপনি প্রথম দেখেন তখন বুঝতে পারেন না। কিন্তু পরিবর্তিতে যখন এটা নিয়ে আপনি চিন্তা করেন, আপনার মনে হবে আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের এই সিনেমাগুলো অস্কারের যোগ্য! বলিউডের আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্স সমৃদ্ধ পাঁচটি সিনেমা নিয়ে আলোচনা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের জন্য

১। মোহাব্বাতে
সিনেমাটি রাজ আরিয়ান (শাহরুখ খান) এবং নারায়ণ শঙ্কর (অমিতাভ বচ্চন) এর মধ্যকার নীতিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্মিত। নারায়ণ শঙ্কর একটি প্রতিষ্ঠিত বোর্ডিং স্কুলের অধ্যক্ষ যিনি তিনটি নীতির ভিত্তিতে তার স্কুল পরিচালনা করেন – প্রতিষ্ঠা, ঐতিয্য এবং অনুশাসন। অন্যদিকে রাজ আরিয়ান প্রেমের পূজারী এবং সঙ্গীতের শিক্ষক যিনি আবার নারায়ণ শঙ্করের বোর্ডিং স্কুল থেকে বহিষ্কৃত ছাত্র। দুইজনের মধ্যকার এই নীতিগত বিরোধ এক সময় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে এবং নারায়ণ শঙ্কর রাজকে স্কুল ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন। কিন্তু যাওয়ার আগের দিন রাতে রাজ আরিয়ান এবং নারায়ণ শঙ্করের মুখোমুখি বাকবিতণ্ডার পর নারায়ণ শঙ্কর তার ভুল বুজতে পারেন। এরপর স্কুলের সব ছাত্রদের সামনে অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করে রাজ আরিয়ানকে সেই বোডিং স্কুলের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। মানে… যা ইচ্ছে তাই। একজন বহিষ্কৃত ছাত্র যে এরপর আর কোথাও পড়ালেখার সুযোগ পায়নি, সে প্রেমের প্রতি তার বিশ্বাসের জোরে একেবারে অধ্যক্ষ!! মজা করলেন নাকি আদিত্য চোপড়া!

আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের জন্য

২। ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি
‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ সিনেমাটির বানি বিভ্রান্ত এবং তর্কযোগ্যভাবে বলিউডের সবচেয়ে বিরক্তিকর একটি চরিত্র। সে নায়নাকে চায় না আবার তাকে অন্য কারো সাথে দেখলে হিংসা করে! তিনি তার কর্মজীবনের জন্য নায়নাকে দুবার ছেড়ে যান কিন্তু শেষ পর্যন্ত, আমরা তাকে একটি বেলুন এবং একটি কেক নিয়ে ফিরে আসতে দেখি যেন কিছুই ঘটেনি। সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিৎ! নায়নার উচিৎ ছিলো তাকে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে বিদায় করা। নায়না অবশ্যই এর চেয়ে ভালো কিছুর দাবী রাখে, সেই সাথে দর্শকরাও এরকম উপভোগ্য একটি সিনেমার আরো যৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের দাবী রাখেন।

আযৌক্তিক ক্লাইম্যাক্সের জন্য

৩। কবির সিং
এই সিনেমাটির ব্যাপারে কি বলবো? কবির সিং একজন উম্মাদ, মাতাল এবং প্রচণ্ড উচ্ছৃঙ্খল যার কাছে কোন বাবাই তার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইবে না। একসময় সে পুরোপুরি উম্মাদের মত আচরণ শুরু করে, কিন্তু সিনেমাটির ক্লাইম্যাক্সের তুলনায় এটা কিছুই না! দীর্ধ সময় পর একদিন পার্কে সে অন্ত:সত্ত্বা প্রীতিকে দেখতে পায়। প্রীতি জানায় এটা তার সন্তান, তারপর তারা বিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। আচ্ছা অন্ত:সত্ত্বা অবস্থার এই লম্বা সময়ে সে কখনো কবিরের সাথে যোগাযোগ করেনি বা কবিরও তার কোন খোঁজ নেয়নি কিন্তু একদিন দেখা হওয়াতেই সব ঠিক হয়ে গেলো? প্রীতি আবার সেই অসভ্য কবিরের কাছে ফিরে গেলো? আসলে বাস্তবতা বা দর্শকদের মূল্যবোধ কিছুই তোয়াক্কা করলেন না নির্মাতা? তালি হবে তালি!

৪। শাদি মে জারুর আনা
সিনেমাটির সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো। সত্তু (রাজকুমার রাও) একজন কঠোর সরকারী আমলা এবং আইএএস হওয়ার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে আরতির (কৃতি খারবান্দা) উপর মধুর প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু পরবর্তিতে আরতির হৃদয় পরিবর্তন হয়ে যায় এবং এখন সাত্তুকে ফিরে চায়। যখন অনুনয়-বিনয় করে এবং কান্নাকাটি করে এবং তাকে মন্দিরে তাড়া করে কাজ হয় না, তখন সে একটি নকল বিয়ের পরিকল্পনা করে যাতে সে স্বীকার করে যে সে এখনও তাকে ভালবাসে। আর এই সব নাটক শুধু এটা দেখার জন্য যে তিনি সাত্তুর কি এখনও তার জন্য অনুভূতি আছে কিনা! আর কিছু বললাম না!

৫। বডিগার্ড
না, সিনেমাটির প্লট টুইস্ট যতেষ্ট ভালো ছিলো যেখানে কারিনার প্রতারক বন্ধুটি তার পিঠে ছুরি মেরে সালমান খানকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এতটুকু পর্যন্ত ছিলো দুর্দান্ত এবং দর্শকদের মজা দেয়ার মত। কিন্তু এরপর সিনেমায় যা দেখানো হয়েছে তা ছিল নির্বোধের প্রলাপ এবং অযৌক্তিক। পরবর্তিতে দেখা যায় মায়া (কারিনার বন্ধু) ক্যানসারে মারা যায় এবং সালমান খান এবং কারিনাকে একসাথে করার দায়িত্ব তার ছেলেকে দেয়! মজার ব্যপার এত বছর পরও কারিনা অবিবাহিত! সিনেমাটিতে কেউ কাউকে কিছু বলে না! কেনো ছেলেটি তার বাবাকে কিছু বলেনি? কেনো কারিনা সালমানকে কিছু বলেনি? সম্ভবত পরিচালক বলেছিলেন কিছু বললে পারিশ্রমিক দিবেন না!

প্রিয় পাঠক, উপরে উল্লেখিত সিনেমাগুলোর ক্লাইম্যাক্স নিয়ে আপনার মতামত কি? উপরে আলোচিত সিনেমাগুলো ছাড়া আর কোন সিনেমার ক্লাইম্যাক্স আপনার কাছে এরকম নির্বোধ এবং অযৌক্তিক লেগেছে তা জানিয়ে দিন আমাদের মন্তব্যের মাধ্যমে।

আরো পড়ুনঃ
নির্বুদ্ধিতা আর আযৌক্তিকভাবে সাজানো বলিউডের সিনেমার ৬ টি নারী চরিত্র

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d