তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দিয়েছে যে সিনেমা (প্রথম পর্ব)

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে (টলিউড নামে পরিচিত) তেলুগু ভাষার সিনেমা নির্মান হয়ে থাকে। তেলুগু ভাষা অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। হায়দ্রাবাদের পাশে ফিল্ম নগর ভিত্তিক এই ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে ভারতের অন্যতম বড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯০৯ সালে নির্মাতা রঘুপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ এবং তা প্রচারের জন্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর ১৯২১ সালে নাইডু প্রথমবারের মত ‘ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা’ নামে একটি নির্বাক সিনেমা প্রযোজনা করেন। সিনেমায় তার অবদানের জন্য রঘুপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুকে তেলেগু সিনেমার জনক বলা হয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের অন্যান্য সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি তেলুগু সিনেমা দর্শকদের কাছে পেয়েছে অন্যরকম গ্রহণযোগ্যতা। বিশাল বাজেটে প্যান ইন্ডিয়া সিনেমার মাধ্যমে তেলুগু ভাষাভাষীর পাশাপাশি এই ইন্ডাস্ট্রির সিনেমাগুলোর এখন জনপ্রিয় পুরো ভারতজুড়ে। বর্তমানে তেলুগু সিনেমার তারকারা নিজেদের জনপ্রিয়তাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন ভারতজুড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, এই মুহুর্তে ভারতের সবচেয়ে বড় প্যান ইন্ডিয়া তারকা প্রবাস তেলুগু সিনেমার তারকা। এখন পর্যন্ত ভারতে সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা ‘বাহুবলী’ তেলুগু ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা। এছাড়া বর্তমানে সবচেয়ে প্রভাবশালী নির্মাতা এস এস রাজামৌলী তেলুগু সিনেমার নির্মাতা। তেলুগু সিনেমার বর্তমান রুপ এই ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের অনেকদিনের পরিশ্রমের ফসল। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত যে সিনেমাগুলো বদলে দিয়েছে তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির চেহারা সেরকম কিছু সিনেমা নিয়ে আলোচনা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির

১। খালেজা (২০১০)
ত্রিবিক্রম শ্রীনিবাস পরিচালিত ফ্যান্টাসি অ্যাকশন সিনেমা ‘খালেজা’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১০ সালে। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মহেশ বাবু, আনুশকা শেঠি এবং প্রকাশ রাজ। ভারতে অবৈধ খনন এবং পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নির্মিত হয়েছিলো এই সিনেমা। ‘খালেজা’ সিনেমার মাধ্যমে তিন বছরের বিরতির পর অভিনয়ে ফেরেন মহেশ বাবু। বিষয়বস্তু বিবেচনায় সিনেমাটি তেলুগু সিনেমার নতুন এক দ্বার উম্মোচন করেছিলো বলে মনে করেন অনেকে। সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ালেও বক্স অফিসে ব্যার্থ ছিলো আলোচিত এই সিনেমা। তবে এখন সিনেমাটিকে কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির

২। ভেদাম (২০১০)
কৃষের গল্প এবং পরিচালনায় ‘ভেদাম’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিলো ২০১০ সালে। সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আল্লু অর্জুন এবং আনুশকা শেঠি। একজন আর্মি অফিসারের ছেলের রক স্টার হয়ে উঠার গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি সমালোচকদের কাছে ব্যপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো। সিনেমাটি চারটি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার জিতেছিলো। এছাড়া ফিল্মকম্পানিয়নের হিসেবে গত এক দশকে তেলুগু ভাষায় নির্মিত ২৫তি সেরা সিনেমার একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো। পরিচালক কৃষ পরবর্তীতে সিনেমাটি তামিল ভাষায় ‘ভানাম’ নামে নির্মান করেছিলেন।

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির

৩। প্রস্থানাম (২০১০)
২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু রাজনৈতিক অ্যাকশন সিনেমা ‘প্রস্থানাম’ পরিচালনা করেছেন দেবা কাট্টা। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরবানন্দ, সাই কুমার, সন্দীপ কিষান, এবং রুবি পরিহার। মুক্তির পর সিনেমাটি সমালোচকদের প্রশংসায় ভাসে, বিশেষ করে সিনেমাটিতে সাই কুমারের অভিনয় ব্যপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো। সিনেমাটির দক্ষিনের দুটি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার এবং নন্দী পুরষ্কার জিতেছিলো। সিনেমাটি তামিল ভাষায় ‘পাধবী’ নামে মুক্তি পেয়েছিলো। পরবর্তিতে সিনেমাটি একই নামে ২০১৯ সালে বলিউডে রিমেক হয়েছিলো। এছাড়া ফিল্মকম্পানিয়নের হিসেবে গত এক দশকে তেলুগু ভাষায় নির্মিত ২৫তি সেরা সিনেমার একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো।

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির

৪। ইগা (২০১২)
এসএস রাজামৌলী পরিচালিত ফ্যান্টাসি অ্যাকশন সিনেমা ‘ইগা’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১২। সিনেমাটি একই সাথে তেলুগু এবং তামিল ভাষায় নির্মিত হয়েছিলো। মানুষের উপরে একটি মাছির প্রতিশোধের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন কিচ্ছা সুদীপ, ন্যানি এবং সামান্তা। নব্বই দশকের শেষের দিকে বাবা কে ভি ভিজেন্দ্র প্রসাদের কাছে সিনেমাটির ব্যাপারে ধারনা পেয়েছিলেন নির্মাতা রাজামৌলী। এরপর ২০১১ সালে নিজের অন্য সিনেমা থেকে ভিন্ন ধারার একটি সিনেমা নির্মানের চিন্তা থেকে এই সিনেমাটি নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ‘ইগা’ মুক্তির পর বক্স অফিসে সাফল্যের পাশাপাশি ‘ইগা’ সিনেমাটি একাধিক পুরষ্কার জিতেছিলো।

তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির

৫। মিঠুনাম (২০১২)
তানিকেল্লা ভরণী পরিচালিত তেলুগু ড্রামা সিনেমা ‘মিঠুনাম’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১২ সালে। সিনেমাটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন এসপি বালাসুব্রাহ্মণ্যম এবং লক্ষ্মী। শ্রী রামনা রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিলো এই সিনেমা। তেলুগু ভাষায় ‘মিঠুনাম’ শব্দের অর্থ দম্পতি। সিনেমাটি পরিচালনার জন্য তানিকেল্লা ভরণী সেরা পরিচালক হিসেবে বিশেষ বিচারক পুরষ্কার জিতেছিলেন। ফিল্মকম্পানিয়নের হিসেবে গত এক দশকে তেলুগু ভাষায় নির্মিত ২৫তি সেরা সিনেমার একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো। এছাড়া সিনেমাটিতে লক্ষ্মীর অভিনয় সেরা ১০০ অভিনয়ের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো। এএমআর প্রডাকশন্সের ব্যানারে সিনেমাটি ২০১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর ভারতজুড়ে মুক্তি পেয়েছিলো।

৬। স্বামী রা রা (২০১৩)
তেলুগু ভাষার ক্রাইম কমেডি সিনেমা ‘স্বামী রা রা’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৩ সালে। লক্ষ্মী নরসিংহ এন্টারটেনমেন্টের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন অভিষিক্ত নির্মাতা সুধীর বর্মা। আর সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন নিখিল সিদ্ধার্থ, স্বাথী রেড্ডি, পূজা রামচন্দ্রন এবং রবি বাবু। সিনেমাটি ফিল্মকম্পানিয়নের হিসেবে গত এক দশকে তেলুগু ভাষায় নির্মিত ২৫তি সেরা সিনেমার একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো। ২০১৩ সালের ২৩শে মার্চ মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি বক্স অফিসেও ভালো ব্যবসা করেছিলো। পরবর্তিতে সিনেমাটি কান্নড় ভাষায় ‘জাম্বুর সাভারি’ নামে পুননির্মিত হয়েছিলো।

৭। ১: নেনোক্কাদিন
নিজের বাবা-মায়ের খোঁজে এক ছেলের যাত্রার গল্প নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা ‘১: নেনোক্কাদিন’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৪ সালে। সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মহেশ বাবু। আর তার বিপরীতে অভিনয় করেন কৃতি শেনন। সিনেমাটি কৃতি শেননের অভিষিক্ত সিনেমা ছিলো। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি ছিল না। সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছিল, কিন্তু বক্স অফিসে আশানুরূপ ব্যবসা করতে সক্ষম হয়নি এই সিনেমা। ফিল্মকম্পানিয়নের হিসেবে গত এক দশকে তেলুগু ভাষায় নির্মিত ২৫তি সেরা সিনেমার একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো এই সিনেমা।

৮। বাহুবলী (২০১৫ এবং ২০১৭)
গত দশকের সবচেয়ে আলোচিত এবং ব্যবসা সফল সিনেমা ‘বাহুবলী’ পরিচালনা করেছেন তেলুগু সিনেমার স্বপ্নবাজ নির্মাতা এস এস রাজামৌলী। মোট দুই পর্বে মুক্তি পেয়েছিলো ভারতের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আয় করা এই সিনেমা। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রভাস, রানা দগ্গুবতী, অনুষ্কা শেঠি, তামান্না, রাম্যা কৃষ্ণ, সত্যরাজ এবং নাসার। সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন ভারতের আলোচিত চিত্রনাট্যকার কে ভি ভিজেন্দ্র প্রসাদ। বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসার পাশাপাশি সিনেমাটি জাতীয় পুরষ্কারসহ বিভিন্ন বিভাগে একাধিক পুরষ্কার জিয়েছিলো। শুধু তাই নয় ‘বাহুবলী’ সিনেমাটি প্রবাসকে ভারতের সবচেয়ে বড় প্যান ইন্ডিয়া তারকা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।

প্রিয় পাঠক, তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দেয়া সিনেমাগুলো নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে থাকছে আরো কয়েকটি সিনেমার কথা। এই তালিকায় অন্য কোন সিনেমা থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করছেন তা আমাদের জানিয়ে দিন মন্তব্যে।

আরো পড়ুনঃ
পুষ্পা থেকে আইকন: আল্লু অর্জুনের নির্মানাধীন প্রতীক্ষিত যত সিনেমা
মালায়ালাম ছাড়া অন্য ভাষার সিনেমায় মোহনলালের সেরা দশ অভিনয়
ফাহাদ ফাসিল অভিনীত সেরা ৮টি সিনেমাঃ দেখে নিন সিনেমার ক্রম তালিকা

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d