ফাস্ট টেন রিভিউ: ধামাকা আর চমকে ভরপুর দীর্ঘ যাত্রার ‘শেষের শুরু’

ফাস্ট টেন রিভিউ

চলচ্চিত্রের নামঃ ফাস্ট টেন (২০২৩)
মুক্তিঃ মে ১৯, ২০২১
অভিনয়েঃ ভিন ডিজেল, জেসন মোমোয়া, মিশেল রদ্রিগেজ, টাইরেস গিবসন, লুডাক্রিস, জন সিনা, নাথালি এমানুয়েল, জর্দানা ব্রুস্টার, সুং ক্যাং, ব্রি লারসন, রিটা মোরেনো, জেসন স্ট্যাথাম এবং চার্লিজ থেরন প্রমুখ।
পরিচালনাঃ লুই লেটারিয়ার
প্রযোজনাঃ ভিন ডিজেল, জাস্টিন লিন, সামান্থা ভিনসেন্ট, জেফ কিরশেনবাউম এবং নিল এইচ. মরিটজ
পরিবেশনাঃ ইউনিভার্সাল পিকচার্স
কাহিনীঃ ড্যান মাজেউ, জাস্টিন লিন এবং জ্যাচ ডিন
চিত্রনাট্যঃ ড্যান মাজেউ এবং জাস্টিন লিন
সম্পাদনাঃ ডিলান হাইস্মিথ, কেলি মাতসুমোটো, লরা ইয়ানোভিচ এবং করবিন মেহল
চিত্রগ্রহনঃ স্টিফেন এফ উইন্ডন
সংগীতঃ ব্রায়ান টাইলার

প্রারম্ভিক কথাঃ হলিউডের অন্যতম আলোচিত এবং বাণিজ্যিক সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’। চলতি বছরে মুক্তি পেয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির দশম পর্ব। আগের নয়টি পর্বের চেয়ে নতুন পর্বটি ভক্তদের জন্য বিশেষ কিছু। কারণ ইতিমধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নির্মাতারা। আগেই জানা গিয়েছিলো দুই পর্বে নির্মিত হতে যাচ্ছে সিনেমাটির সর্বশেষ সংস্করণ। তবে সম্পতি সিনেমাটির লাল গালিচা অনুষ্ঠানে দুই পর্বের পরিবর্তে ট্রিলজি নির্মানের ইঙ্গিত হয়েছেন সিনেমাটির প্রযোজক এবং প্রধান তারকা ভিন ডিজেল। মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফাস্ট টেন’ সিনেমাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই রিভিউতে।

কাহিনী সংক্ষেপঃ ডমিনিক টরেটো এবং তার পরিবারের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষের কাছ থেকে হুমকির মুখোমুখি হওয়ার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির দশম পর্ব ‘ফাস্ট টেন’। স্ত্রী লেটি (মিশেল রদ্রিগেজ), ছেলে ব্রায়ান (লিও অ্যাবেলো পেরি) এবং তার দলের সদস্য রোমান পিয়ার্স (টাইরেস গিবসন), তেজ পার্কার (লুডাক্রিস), মিয়া (জর্দানা) এর জীবনে সব ঠিক আছে ব্রুস্টার), রামসে (ন্যাথালি এমানুয়েল) এবং হান (সুং কাং)-কে নিয়ে ভালোই দিন কাটছিলো ডমিনিক টরেটোর (ভিন ডিজেল)। গল্পের শুরুতে দেখা যায় রোমান লিটল নোবডি’র (স্কট ইস্টউড) কাছ থেকে পাওয়া  রোমে একটি মিশনের নেতৃত্ব দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। সেই মিশনে রোমানের সাথে যোগ দেয় তেজ পার্কার রামসে এবং হান।

মিশনের উদ্দেশ্যে রোমান তার দল নিয়ে রোমে যাওয়ার পর এক রাতে আহত অবস্থায় টরেটোর বাসায় আসে সাইফার (চার্লিজ থেরন)। সে তাদের জানায় যে দান্তে (জেসন মোমোয়া) ডমিনিক এবং তার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে আসছে। পরের দিন, লিটল নোবডি ডমিনিক এবং লেটিকে জানায় যে সে কখনই রোমান এবং অন্যদের কোনো মিশনে পাঠায়নি। তখন টরেটো এবং লেটি বুঝতে পেরে যে এটি একটি সেটআপ এবং তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই সাথে সাথে ডমিনিক টরেটো, লেটি এবং লিটল নোবডি অবিলম্বে রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

এদিকে দান্তে জানতেন যে ডমিনিক তার গ্যাং সদস্যদের বাঁচাতে ইতালীয় শহরে অবশ্যই পৌঁছাবে। তাই তিনি তাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক ফাঁদ আকেন। রোমে দান্তে এমন একটি পরিকল্পনা করে যা ডমিনিক এবং সমস্ত গ্যাং সদস্যদের বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী করে তোলে। সময়ের সাথে সাথে ভয়ঙ্কর সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে থাকে টরেটো এবং তার পরিবার। টরেটো কি পারবে তার পরিবার এবং গ্যাং সদস্যদের এরকম এক ভয়ঙ্কর মানুষের হাত থেকে বাঁচাতে? দান্তে কিসের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এতোটা নির্মম হয়ে উঠেছে? সিনেমাটির বাকী অংশ জুড়ে রয়েছে এই সব প্রশ্নের উত্তর এবং পরের পর্বগুলোর প্রেক্ষাপট প্রতিষ্ঠা।

গল্প এবং চিত্রনাট্যঃ ড্যান মাজেউ, জাস্টিন লিন এবং জ্যাচ ডিনের গল্পটি খুবই আকর্ষনীয়। সেই সাথে ড্যান মাজেউ এবং জাস্টিন লিন রচিত চিত্রনাট্যটি সিনেমার ‘ফাস্ট টেন’ গল্পের প্রতি ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস ৯’ সিনেমাটির প্রথম অর্ধেকের চিত্রনাট্য অনেকটা মলিন ছিলো। তবে ‘ফাস্ট টেন’ সিনেমায় বিষয়টি হতে দেননি নির্মাতারা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত এবং আনন্দদায়ক অ্যাকশন সিকোয়েন্সের সাথে চিত্রনাট্যকে সাজিয়েছেন। এছাড়া সিনেমাটির সংলাপ ভালো মজাদার হওয়ায় সবকিছু মিলিয়ে ভালো একটি প্যাকেজ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে ‘ফাস্ট টেন’।

পরিচালনাঃ লুই লেটারিয়ারের পরিচালনা এক কথায় প্রশংসার দাবী রাখে। এই প্রথম তিনি ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমা পরিচালনা করছেন এবং এতে তার প্রতি প্রযোজকদের আস্থার সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার করেছেন তিনি। এই ধরনের একটি সিনেমা পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ দর্শকরা ইতিমধ্যেই আগের নয়টি পর্বে কিছু অবিশ্বাস্য স্টান্ট এবং অ্যাকশন দেখেছেন। লুই এবং তার দল, এ ক্ষেত্রে দর্শকদের প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে সফল হয়ছেন। খুব রোমাঞ্চকর, অভিনব এবং দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপন দর্শকদের নিঃশ্বাস কেড়ে নেবে। একই সময়ে সিনেমাটিতে খলনায়কের চরিত্রটি নিয়ে আলাদাভাবে পরিচালকের ভাবনার বহিঃপ্রকাশ আছে।

তবে, প্রথমার্ধের কিছু দর্শনীয় অ্যাকশন সিকোয়েন্সের বিপরীতে দ্বিতীয়ার্ধ তুলনামূলকভাবে ফ্যাকাশে। শুরুতে নির্মাতা দর্শকদের দান্তের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং কেন সে ডমিনিক এবং তার গ্যাংকে ধ্বংস করতে চায় সেই ধারণা দেয়া হয়। তারপরে সিনেমাটি সাইফারের আগমনে মূল গল্পে প্রবেশ করে। যদিও রোম সিকোয়েন্সটি দুর্দান্ত ছিলো, ডমিনিক এবং দান্তে প্রথমবার মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্যটি বেশ নাটকীয়তায় ভরপুর ছিলো। আর বিরতির পর সাইবার ক্যাফেতে লড়াইটা অনেকটা জোর করে আনা হয়েছে বলে মনে হতে পারে। আর এর শেষ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট চিত্তাকর্ষক এবং উত্তেজনায় ভরপুর ছিলো।

অভিনয়ঃ বরাবরের মতই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে ভিন ডিজেল ভালো অভিনয় করেছেন। আর দান্তে চরিত্রে জেসন মোমোয়া অসাধারণ অভিনয় করেছেন। অভিনয়ে পাগলের সূক্ষ্মতা যোগ করে চরিত্রটিকে অনেক উপভোগ্য করেছেন মোমোয়া। মিশেল রদ্রিগেজ, এবং লিও অ্যাবেলো পেরি বরাবরের মতই আরাধ্য। টাইরেস গিবসন, লুডাক্রিস, নাথালি এমানুয়েল এবং সুং কাং নিজেদের চরিত্রকে উপভোগ্য করতে সক্ষম ছিলেন। অন্যদিকে শার্লিজ থেরন দুর্দান্ত এবং স্মরণীয় অভিনয় উপহার দিয়েছেন। জেসন স্ট্যাথাম (ডেকার্ড শ)-এর চরিত্রটি অনেকটা অতিথি হিসেবে ছিলো যা পরের পর্বগুলোতে আরো পূর্নতা পাবে। জন সিনা (জ্যাকব টরেটো) একটি বিশাল চিহ্ন রেখে গেছেন যায় এবং নিজের পর্দা উপস্থিতিতে দর্শদকের হাস্যরস উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন। ব্রি লারসন (টেস) চিত্তাকর্ষক এবং সামনের পর্বগুলোতে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন।

চিত্রগ্রহন এবং সম্পাদনাঃ লুই লেটারিয়ারের পরিচালনাকে আরো দুর্দান্ত করেছে স্টিফেন এফ উইন্ডনের চিত্রগ্রহণ। দারুণ সব স্টান্ট এবং অ্যাকশন দৃশ্যগুলোকে পর্দায় দৃষ্টিনন্দন ভাবে ক্যামেরায় ধারণ করতে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন স্টিফেন এফ উইন্ডন। ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম প্রধান আকর্ষনের জায়গাগুলোকে ভালোভাবে তুলে এনেছেন তিনি। সেই সাথে সিনেমাটির সম্পাদনাও ছিলো প্রশংসা করার মত। দর্শকদের গল্প এবং চরিত্রের সাথে বেঁধে রাখতে বেশ সক্ষমতা দেখিয়েছেন সম্পাদকরা।

উপসংহারঃ সামগ্রিকভাবে, ‘ফাস্ট টেন’ সিনেমাটি একটি বিনোদনধর্মী উপস্থাপনা। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ, ফ্র্যাঞ্চাইজির জনপ্রিয়তা, দর্শনীয় অ্যাকশন দৃশ্য এবং মূলধারার আবেদনের কারণে সবসময়ই বড় ধরণের সাফল্যের সম্ভাবনা ছিলো। এছাড়া শেষ সংস্করণের প্রথম পর্ব হিসেবে গল্পের শুরুটা ভালো ছিলো। অনেকগুলো চরিত্রকে একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসার প্রাথমিক কাজটি নির্মাতারা সফল ভাবেই সম্পন্ন করেছেন। পরিশেষে বলতে চাই যে, হলে লাইট জ্বলে না উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুণ। চমক আছে, যা পরের পর্বগুলোর প্রতি আপনার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিবে।

ফাস্ট টেন রিভিউ

আরো পড়ুনঃ
তিন পর্বে নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজের দশম সংস্করণ
‘অ্যাভেঞ্জার্সঃ এন্ডগেম’ স্মৃতি ফিরে আসছে ‘ফাস্ট এক্স’ সিনেমার গল্পে
‘ফাস্ট এক্স’ ট্রেলার: পরিবারকে বাঁচাতে পুরনো শত্রুর মুখোমুখি ভিন ডিজেল

By হোসেন মৌলুদ তেজো

এ সম্পর্কিত

%d