নির্বুদ্ধিতা আর আযৌক্তিকভাবে সাজানো বলিউডের সিনেমার ৬ টি নারী চরিত্র

বলিউডের সিনেমার

যখন দৈন্যতা, পিতৃতন্ত্র এবং লিঙ্গবাদের কথা আসে, তখন বলিউডের সিনেমায় একটি বিশাল সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। যদিও সময় পরিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক নির্মাতারা কিছু প্রগতিশীল এবং সাহসী নারী চরিত্র উপহার দিয়েছেন, বলিউডে এমন কিছু চরিত্র রয়েছে যা খুবই বিরক্তিকর। এই সিনেমাগুলোতে বলিউড নারী চরিত্রগুলোকে বোবা এবং বোকা হিসাবে প্রচার করেছে। সিনেমায় চরিত্রগুলো সাজিয়েছে নির্বুদ্ধিতা আর আযৌক্তিকভাবে চরিত্রায়নের মাধ্যমে। বলিউডের সিনেমার এরকম ৬ টি নারী চরিত্র নিয়ে আলোচনা থাকছে এই লিখায়।

বলিউডের সিনেমার

১। কাভি খুশি কাভি গাম সিনেমার নন্দিনী (জয়া বচ্চন)
করন জোহর পরিচালিত ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ সিনেমায় নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া বচ্চন। সিনেমাটিতে তার চরিত্রটিকে খুবই বোবা ধরনের করে উপস্থাপন করা হয়েছে। নন্দিনীর স্বামী একজন অহংকারী পুরুষ যিনি তার চেয়ে কম সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করার কারনে ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। নিজের ছেলের জন্য অনবরত চোখের পানি ফেললেও স্বামীর সেই সিদ্ধান্তের কোন প্রতিবাদ করেন না। পুরো সিনেমাতে নন্দিনীকে এতোটা মেরুদণ্ডহীন দেখানো হয়েছে যে, ছেলের প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ এবং নিজের ইচ্ছেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না তিনি।

বলিউডের সিনেমার

২। জড়ুয়া ২ সিনেমায় আলিশকা (জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ)
আপনি যদি ‘জড়ুয়া ২’ না দেখে থাকেন তাহলে আপনাকে অভিন্দন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যদি সিনেমাটি দেখে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলিউডের সিনেমার নারী চরিত্র কতটা অযৌক্তিক হতে পারে। প্রেম এবং রাজ দুই জমজ ভাই যারা কাছাকাছি আসলে অনেকটা একই রকম ব্যবহার করে থাকে। আলিশকা প্রেমকে ভালোবাসে কিন্তু এত কাছাকাছি থাকার পরও প্রেম এবং রাজের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে না। বাথটবে আলিশকার সাথে প্রেম এবং রাজ এক সাথে কাটালেও দুই জনের মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পারে না আলিশকা। যদিও দুই ভাইয়ের আচার আচরণ দুই রকম আলিশকার চরিত্রটি সেটা কোনভাবেই বুঝতে পারে না।

বলিউডের সিনেমার

৩। মে হু না সিনেমায় সানজানা (অমৃতা রাও)
ফারাহ খান পরিচালিত ‘মে হু না’ সিনেমায় সানজানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমৃতা রাও, যে লক্ষনকে ভালোবাসে। লক্ষন আবার মেয়েদের বাহ্যিক সৌন্দর্য পছন্দ করে। লক্ষনের ভালোবাসা জয়ের জন্য সানজানা সবকিছু করলেও কাজ হয়না। তাই সানজানা নিজেকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে ফেলে। সুন্দর মনের চেয়ে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয়া একটি ছেলেকে কাছে পেতে নিজের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করে ফেলে সে। এরকম অযৌক্তিক এবং মেরুদণ্ডহীন চরিত্র কেবল বলিউডের সিনেমায় সম্ভব।

৪। গজিনী সিনেমায় কল্পনা (আশ্বিন)
একজন সংগ্রামী মডেল যে কিনা স্বভাবের দিক থেকে এখনো কিশোরী। দেশের অন্যতম বড় একজন ব্যবসায়ী তাকে ভালোবেসে বলে সবার নজর কারে। এরকম একজন ব্যবসায়ী, যার ছবি প্রতিনিয়ত পত্রিকায় আসে তাকে সামনে দেখেও চিনতে পারে না কল্পনা! আসলেই… বলিউডে যেকন কিছুই সম্ভব। এছাড়া একদিনের পরিচয়ের একজন অজানা মানুষকে ভালোবেসে ফেলে কল্পনা, যার ব্যাপারে কিছুই সে জানে না। হতে পারে সেই অজানা ব্যক্তি একজন খুনি, ধর্ষক, স্মাগলার – কিন্তু কল্পনার জন্য এরকম কোন বিবেচনাই খাটে না। সব মিলিয়ে কল্পনা বলিউডের সিনেমার অন্যতম অযৌক্তিক চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি।

৫। রাব নে বানা ডি জোড়ি সিনেমায় তানি (আনুশকা শর্মা)
বলিউডের সিনেমার অযৌক্তিক চরিত্রের রানী – ‘রাব নে বানা ডি জোড়ি’ সিনেমার তানি। একজন সাধারণ চাকরিজীবী সুরির সাথে সংসারে অসুখী তানি। নাচের ক্লাসে গিয়ে প্রেমে পরে যায় একজন আধুনিক ছেলের। মজার ব্যাপার হচ্ছে রাজ নামের সে ছেলেটি আসলে সূরিরই অন্য একটি রূপ। শুধু মাত্র গোঁফ এবং কাপর বদলে সে সুরি থেকে রাজ হয়ে সামনে আসে। কিন্তু তানি এই ছোট পরিবর্তনের পরও নিজের স্বামীকে চিনতে পারে না। দিনের পর দিন একসাথে ঘুরে বেড়ালেও সুরিকে চিনতে পারে না তানি।

৬। কবির সিং সিনেমায় প্রীতি (কিয়ারা আদভানি)
একজন এমবিবিএস ডাক্তার হয়েও ‘কবির সিং’ সিনেমায় প্রীতি ভালোবাসার ব্যাপারে পুরোপুরি নির্বুদ্ধিতার উদাহরণ। সিনেমাটিতে এই চরিত্রকে কবির সিং এর একটি জড় পদার্থ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার অনুমিত ছাড়া কবির তাকে চুমু দেয়, প্রীতির সবকিছু কবির ঠিক করে দেয় – এত কিছুর পরও এরকম একটি অসভ্য ছেলেকে ভালোবাসে প্রীতি। পুরো সিনেমাতে এই চরিত্রের মধ্যে কোন আত্মসম্মানবোধ দেখানো হয়নি। এমনকি কবির সিং তাকে থাপ্পড় মেরে যেকোন মূল্যে তার সাথে প্রীতির সম্পর্কের জন্য পরিবারকে রাজী করাতে বলে তখনও সে ব্যাপারে প্রীতি থাকে নির্বিকার। বরং পরবর্তি দৃশ্যে দেখা যায় কবির সিং এর সাথে একাধিক বার যৌনমিলন করেছে বলে এই সম্পর্ক মেনে নেয়ার জন্য পরিবারকে চাপ দেয় প্রীতি। আসলেই… বলিউড আর কিছু বাকী আছে দেখানোর মত?

প্রিয় পাঠক উপরে উল্লেখিত সিনেমাগুলোর মধ্যে কোন চরিত্রটি আপনার কাছে বেশী অযৌক্তিক মনে হয়েছে তা আমাদের জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে। এছাড়া এর বাইরে আর কোন চরিত্রটি এই তালিকায় থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করছেন তাও জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে। আর প্রিয় বলিউড, অনুগ্রহ করে এরকম চরিত্র লিখার আগে বাস্তবের একজন নারীর সাথে একটু আলাপ করে নিলে মনে হয় ভালো হত।

আরো পড়ুনঃ
মাধুরী দীক্ষিতের ছেড়ে দেওয়া ১০টি বড় সিনেমা এবং আলোচিত যত চরিত্র!
ঘোষনার পর সিনেমা থেকে বাদ পড়েছিলেন বলিউডের যে তারকারা
বক্স অফিস ধামাকাঃ বলিউডের মুক্তি প্রতীক্ষিত সেরা দশটি অ্যাকশন সিনেমা

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d