মহামারী পরবর্তি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটি আয়ের ভারতীয় সিনেমা

মহামারী পরবর্তি বিশ্বব্যাপী বক্স

করোনা মহামারীর প্রভাব বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা গেছে। ব্যাক্তিক্রম ছিলো না বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিগুলো। ২০২০ এবং ২০২১ সালের বেশীরভাগ সময় প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাগুলোর মুক্তি অনিয়মিত ছিলো। ২০২১ সালের শেষভাগে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করলে, প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তির অনুমতি দেয় বিভিন্ন দেশের সরকার। মহামারী চলে গেলেও, এর প্রভাবে মানুষের সিনেমার দেখার অভ্যাসে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত বেশীর ভাগ সিনেমাই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরেছে। মহামারী পরবর্তি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটির বেশী আয় করা ভারতীয় সিনেমা নিয়ে আলোচনা থাকছে এই বিশেষ প্রতিবেদনে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটি তেমন বড় কোন মাইলফলক ছিলো না। কিন্তু এরপর করোনা মহামারী বক্স অফিসে এই হিসেবনিকেশ পুরো উলটপালট করে দিয়েছে। মহামারী পরবর্তি সময়ে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি সিনেমা বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটি রুপির বেশী আয় করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এবং ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমাগুলোর আয়ের মূল কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা। এই দুই সিনেমাকে হিসেবের বাইরে রাখলে, সিনেম্যাটিক মূল্য বিবেচনায় মহামারী পরবর্তি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটির বেশী আয় করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র তিনটি বলিউড সিনেমা।

মহামারী পরবর্তি সময়ে দক্ষিণ ভারতের মোট সাতটি সিনেমা বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটি রুপির মাইলফলক অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ‘আরআরআর’ এবং ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’ মূলত রাজামৌলী (বাহুবলী ফ্র্যাঞ্চাইজি) এবং আগের পর্বের সাফল্যের কারনে আলোচনায় ছিলো। ইন্ডাস্ট্রির বাজার এবং পরিধি বিবেচনা করলে দক্ষিণের সিনেমার জন্য ৩০০ কোটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। কিন্তু বলিউড সিনেমার জন্য আসলে বিশ্বব্যাপী ৫০০ কোটি হচ্ছে গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড। আর মহামারী পরবর্তি এই মাইলফলক অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে শুধুমাত্র শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ সিনেমাটি।

বিশ্বব্যাপী বক্স অফিস আয়ের হিসেবে তামিল সিনেমা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো অবস্থানে এসেছে। বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে তামিল সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা মহামারী পরবর্তি সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। চলতি বছরে থালাপাতি বিজয় অভিনীত ‘ভারিসু’ সিনেমাটি অল্পের জন্য বিশ্বব্যাপী ৩০০ কোটি রুপির মাইলফলক অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে সিনেমাটির মোট আয়ের পরিমাণ হচ্ছে ২৯৩ কোটি রুপি। একই ভাবে ২৯৯ কোটি রুপি আয়ের মাধ্যমে অল্পের জন্য বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটি রুপির মাইলফলক অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছে বলিউড সিনেমা ‘সুরিয়াবংশী।‘

মহামারী পরবর্তি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে এখন পর্যন্ত মোট বারোটি ভারতীয় সিনেমা ৩০০ কোটির বেশী আয় করতে সক্ষম হয়েছে। মহামারীর আগে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে অনেকগুলো হিন্দি সিনেমা ৩০০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিলো। তবে মহামারী হিন্দি সিনেমার দর্শকদের চাহিদা এবং পছন্দে ব্যাপক প্রভাব ফেলে গেছে। এই সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত অনেকগুলো বড় বাজেটের সিনেমাও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরেছে। এই তালিকা থেকে বাদ যাননি অক্ষয় কুমার, সালমান খান, আমির খান, রনভির সিং, রনবীর কাপুর এবং শাহীদ কাপুরের মোট তারকাও। তবে স্রোতের বিপরীতে ৩০০ বা ৫০০ নয়, বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ১,০০০ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে শাহরুখ খানের সিনেমা ‘পাঠান’।

অন্যদিকে মহামারী পরবর্তি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে দক্ষিণ ভারতের মোট সাতটি সিনেমা ৩০০ কোটির বেশী আয় করেছে। এই প্রতিটি সিনেমাই দক্ষিণের পাশাপাশি হিন্দিতেও মুক্তি পেয়েছিলো। শুধু তাই নয়, এই সাতটি সিনেমার মধ্যে দুটি সিনেমা আবার বিশ্বব্যাপী ১,০০০ কোটি রুপির বেশী আয় করেছে। যেখানে মহামারীর আগে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটি রুপির বেশী আয় করেছে হাতে কয়েকটি দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা। মহামারীর আগে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটির বেশী আয় করা দক্ষিণের সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এনথিরান’ (রোবট), ‘কাবিল’, ‘বাহুবলীঃ দ্য বিগিনিং’, ‘বাহুবলীঃ দ্য কনক্লুশন’ এবং ‘টু পয়েন্ট জিরো’।

বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি থেকে মহামারী পরবর্তি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটির বেশী আয়ের ভারতীয় সিনেমাগুলোর তালিকা নীচে দেওয়া হলো –

হিন্দি (বলিউড) তামিল (কলিউড) তেলুগু (টলিউড) কন্নড় (সেন্ডেলউড)
দ্য কাশ্মীর ফাইলস বিক্রম পুষ্পাঃ দ্য রাইজ কেজিএফ চ্যাপ্টার ২
ব্রহ্মাস্ত্র পন্নিয়ন সেলভান ১ আরআরআর কান্তারা
দৃশ্যাম ২ পন্নিয়ন সেলভান ২
পাঠান
দ্য কেরালা স্টোরি

তবে চলতি বছরের শেষে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে আয়ের হিসেবে বলিউড সিনেমার হিসেবনিকেশ অন্যরকম হতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত। ২০২৩ সালের বাকী সময়ে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩০০ কোটির বেশী আয়ের সম্ভাবনা নিয়ে মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘অ্যানিম্যাল’, ‘রকি অর রানী কি প্রেম কাহানী’, ‘জওয়ান’, ‘টাইগার থ্রী’, ‘ডানকি’ ইত্যাদি। অন্যদিকে দক্ষিণেরও বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তি অপেক্ষায় রয়েছে, যেগুলো ৩০০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘আদিপুরুষ’, ‘সালার’, ‘লিও’, ‘জেলার’ ইত্যাদি। ২০২৩ সাল শেষে তালিকা কততুকু লম্বা হয় এখন সেটাই দেখার বিষয়।

আরো পড়ুনঃ
দক্ষিণের সিনেমার বলিউড রিমেকঃ মহামারী পরবর্তি বক্স অফিসের নতুন সমীকরণ
২০২২ সালে বক্স অফিস ডিজাস্টার উপহার দিয়েছেন যে আটজন দক্ষিণ তারকা
বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ১০০০ কোটির সিনেমা উপহার দেয়া ভারতীয় তারকারা

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d