বলিউড বক্স অফিসের যে রেকর্ডে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী সালমান খান

বলিউড বক্স অফিসের

বছরের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সিনেমা এমন একটি রেকর্ড যা প্রত্যেক সুপারস্টার তাদের ক্যারিয়ারে অন্তত একবার উপহার দিতে চায়। একজন তারকাকে একজন সুপারস্টার থেকে যেটা আলাদা করে তা হল তাদের অভিনয় ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী একাধিক সিনেমা প্রদান করার ক্ষমতা। এই নিবন্ধে আমরা সেই তারকাদের সম্পর্কে কথা বলব যারা সর্বোচ্চ সংখ্যক বার বছরের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা প্রদান করেছেন। বলিউড বক্স অফিসের এই রেকর্ডে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রয়েছেন বলিউডের ভাইজান সালমান খান।

ইতিমধ্যে সিনেমায় নিজের ক্যারিয়ারের ৩৪ বছর সম্পন্ন করেছেন সুপারস্টার সালমান খান। বিশেষ করে গত এক দশকে বক্স অফিসে সালমান খান ছিলেন সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। একের পর এক ব্লকবাস্টার সিনেমার উপহার দিয়ে সালমান খান নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়। ভাইজান এখন পর্যন্ত বছরের সর্বাধিক উপার্জনকারী ১০টি হিন্দি সিনেমা প্রদান করেছেন, যা এক ধরণের রেকর্ড। এই বছরগুলোতে সালমান খানের বক্স অফিস রেকর্ডগুলো নিজের মাঝেই এক অনন্য অবস্থান তৈরি করেছে।

হ্যাঁ, সালমান খানই সবচেয়ে বড় সুপারস্টার যখন সর্বোচ্চ সংখ্যক বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা উপহার দেওয়ার কথা আসে। তিনি ১৯৮৯ সালে প্রথম ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ এবং ২০১৭ সালে সর্বশেষ ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ সহ আজ পর্যন্ত ১০টি সর্বাধিক উপার্জনকারী সিনেমার প্রদান করেছেন। এখানে, আমরা শুধুমাত্র হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের সিনেমাগুলির কথা বলছি। মুক্তির বছরগুলোতে এই সিনেমাগুলো অন্য সব সুপারস্টারদের সিনেমাকে পিছনে ফেলে সেই বছরের সবচেয়ে বেশী আয়ের সিনেমা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো।

‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ থেকে ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ সিনেমাগুলো মধ্যে সালমান খানের বছরের সর্বোচ্চ আয়ের অন্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সাজন’ (১৯৯১), ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ (১৯৯৪), ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ (১৯৯৯), ‘নো এন্ট্রি’ (২০০৫), ‘দাবাং’ (২০১০), ‘বডিগার্ড’ (২০১১), ‘এক থা টাইগার’ (২০১২) এবং ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ (2015)। সালমান খান ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি বছরের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সিনেমা উপহার দিয়েছেন এবং অমিতাভ বচ্চন ব্যতীত অন্য কোন তারকা আজ পর্যন্ত এই রেকর্ডটি অর্জন করতে পারেননি।

সর্বাধিক সংখ্যক বছরের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। তিনি মোট ৯টি বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা প্রদান করেছেন। ১৯৪৭ সালে তার প্রথম বছরের সর্বোচ্চ আয়কৃত সিনেমা ছিল ‘জুগনু’। ‘জুগনু’র পর দিলীপ কুমার অভিনীত ‘শহীদ’ (১৯৪৮), ‘আঁ’ (১৯৫২), ‘মধুমতি’ (১৯৫৮), ‘মুঘল ই আজম’ (১৯৬০), ‘গঙ্গা যমুনা’ (১৯৬১), ‘ক্রান্তি’ (১৯৮১), ‘বিধাতা’ (১৯৮২) এবং ‘কারমা’ (১৯৮৬) সিনেমাগুলো নিজ নিজ বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো।

বছরের সর্বোচ্চ আয়ের এই ৯টি সিনেমার মধ্যে আবার ৩টি সিনেমা দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্বে মুক্তি পেয়েছিল। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্বেও এই তারকার বক্স অফিসে এমন সাফল্য তার অর্জনকে সত্যি ঈর্ষণীয় করে তোলে। এছাড়াও এই তিনটি সিনেমায় দিলীপ কুমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন, তা সেটা ‘ক্রান্তি’, ‘বিধাতা’ বা ‘কারমা’ যেটার কথাই বলি না কেন। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসেও বক্স অফিসে ঝড় তোলা এই সিনেমাগুলো দিয়ে দিলীপ কুমার প্রমাণ করেছিলেন যে তিনিই বলিউডের চিরসবুজ তারকা।

এই তালিকায় তৃতীয় সাথেন রয়েছেন বলিউডের মিঃ পারফেকশনিস্ট আমির খান। আমির খান এখন পর্যন্ত ৭টি সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা প্রদান করেছেন। আমির খানের বছরের প্রথম সর্বোচ্চ আয়কারী ছিলো ১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিল’ এবং তার শেষ সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা হচ্ছে ২০১৬ সালের ব্লকবাস্টার ‘দাঙ্গাল’। ‘দাঙ্গাল’ সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে আয়ের হিসেবে সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় সিনেমায় পরিণত হয়েছিল। তার বছরের সবচেয়ে বেশি আয় করা অন্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ (১৯৯৬), ‘গজিনি’ (২০০৮), ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯), ধুম ৩ (২০১৩) এবং পিকে (২০১৪)।

আমির খানের পরই এই তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছেন মহানায়ক অমিতাভ বচ্চন যিনি তার বিশাল ক্যারিয়ারে ৬টি সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা প্রদান করেছেন। অমিতাভ বচ্চনের বছরের প্রথম সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা ছিলো ‘রোটি কাপরা অর মাকান’ যা ১৯৭৪ সালে মুক্তি পেয়েছিলো, তবে এতে অমিতাভ বচ্চন একটি ছোট ভূমিকায় ছিলেন। তারপরে এই তারকার ‘শোলে’ (১৯৭৫), ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’ (১৯৭৭), ‘মুক্কাদ্দার কা সিকান্দার’ (১৯৭৮), ‘সোহাগ’ (১৯৭৯) এবং ‘কুলি’ (১৯৮৩) সিনেমাগুলো বছরের অন্যান্য সর্বোচ্চ উপার্জনকারী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলো। সালমান খানের মতোই অমিতাভ বচ্চন ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বছরের পরপর ৩টি সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমার রেকর্ড গড়েছেন।

এই তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রাজ কাপুর, ধর্মেন্দ্র এবং শাহরুখ খান। তাদের প্রত্যেকেই তাদের ক্যারিয়ারে ৫টি বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা প্রদান করেছেন। রাজ কাপুরের ৫টি সর্বাধিক উপার্জনকারী সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘বারসাত’ (১৯৪৯), ‘আওয়ারা’ (১৯৫১), ‘শ্রী ৪২০’ (১৯৫৫), ‘আনারি’ (১৯৫৯) এবং ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪)। আর মাচো অ্যাকশন তারকা ধমেন্দ্র অভিনীত বছরের সর্বোচ্চ আয় করা ৫টি সিনেমা হচ্ছে ‘ফুল অর পাথর’ (১৯৬৬), ‘আঁখে’ (১৯৬৮), ‘সীতা অর গীতা’ (১৯৭২), ‘শোলে’ (১৯৭৫) এবং ‘হুকুমত’ (১৯৮৭)।

অন্যদিকে ‘কিং অফ রোমান্স’ খ্যাত শাহরুখ খান এখন পর্যন্ত মোট ৫টি বছরের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তার এই তালিকার সবগুলো সিনেমাই রোম্যান্টিক গল্পে নির্মিত। সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ (১৯৯৫), ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ (১৯৯৮), ‘দেবদাস’ (২০০২), ‘বীর জারা’ (২০০৪) এবং ‘ওম শান্তি ওম’ (২০০৭)। তবে শাহরুখ খানের কাছে রাজ কাপুর এবং ধর্মেন্দ্রকে এই তালিকায় টপকে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি তিনি আরও একটি সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা উপহার দিতে পারেন তাহলে তার অবস্থান ৬ নম্বরে চলে আসবে। চলতি বছরের ২৫শে জানুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ সিনেমাটি ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের হিন্দি সিনেমা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে।

উপরে উল্লিখিত হিসাবে, সালমান খানই হলেন বলিউডের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার যখন বছরের সর্বাধিক সংখ্যক উপার্জনকারী সিনেমা প্রদানের হিসেব আসে। শুধু তাই নয়, সালমান খানই একমাত্র সুপারস্টার যিনি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে বছরের সর্বোচ্চ আয়কারীর সংখ্যায় দুই অঙ্কে পৌঁছেছেন। চলতি বছরে সালমান খান অভিনীত দুটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ এবং ‘টাইগার থ্রী’। এর মধ্যে ‘টাইগার থ্রী’ সিনেমাটি ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যশ রাজ ফিল্মসের ‘টাইগার’ ফ্র্যাঞ্ছাইজির জনপ্রিয়তা বিবেচনা করলে তার সংখ্যা বাড়ানোর একটি ভাল সুযোগ রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ
‘বয়কট’ ডাক সত্ত্বেও বক্স অফিসে হিট হওয়া বলিউডের ৬টি সিনেমা
যে ছয়টি তামিল সিনেমার হিন্দি সংস্করণ আপনার অবশ্যই দেখা উচিৎ
বাস্তবের গ্যাংস্টারদের নিয়ে নির্মিত বলিউডের আলোচিত ১০ সিনেমা

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d