ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়ে অক্ষয় কুমারঃ এক বছরে চারটি ডিজাস্টার

খারাপ সময়ে অক্ষয়

বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা অক্ষয় কুমার। অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্য বাণিজ্যিক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই তারকা। বিশেষ করে অ্যাকশন এবং কমেডি নির্ভর সিনেমায় তার জুরি মেলা ভার। মহামারীর আগের কয়েক বছর এই তারকার সিনেমাগুলো বক্স অফিসে দুর্দান্ত আয় করেছিলো। এ সময়ে একের পর এক বক্স অফিস সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই তারকা। কিন্তু ২০২২ চারটি ডিজাস্টার সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়ে অক্ষয় কুমার।

মহামারী শুরু আগের বছর ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ আয়ের ১০টি বলিউড সিনেমার চারটি ছিলো অক্ষয় কুমার অভিনীত। এর মধ্যে ‘হাউজফুল ৪’, ‘গুড নিউজ’ এবং ‘মিশন মঙ্গল’ সুপারহিট তকমা পেয়েছিলো। অন্য সিনেমা ‘কেসারি’ হিট হয়েছিলো। ২০২০ সালের প্রথমভাগে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী আকার ধারণ করলে সিনেমার মুক্তির ধারাবাহিকতায় ছেদ পরে। দীর্ঘদিন প্রেক্ষাগৃহে কোন সিনেমা মুক্তি দেননি নির্মাতারা। এই ধারাবাহিকতা আবার শুরু হয়েছিলো ২০২১ সালের অক্টোবরে।

বলিউডের খিলাড়ী খ্যাত অক্ষয় কুমার একসাথে একাধিক সিনেমার কাজের জন্য বিখ্যাত। মহামারী শুরুর পর তার বেশ কয়েকটি সিনেমার মুক্তি আটকে গিয়েছিলো। তবে মহামারীর সময়েই ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পেয়েছিলো অক্ষয়ের ‘লক্ষ্মী’ সিনেমাটি। কিন্তু এটি দর্শক বা সমালোচক কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এছাড়া করোনার কারনে সীমিত পরিসরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বেল বটম’ সিনেমাটিও বক্স অফিসে ডিজাস্টার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলো।

মহামারী পরবর্তি বলিউডের সিনেমা মুক্তির ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিলো অক্ষয় অভিনীত সিনেমার মাধ্যমে। ২০২১ সালের দীপাবলিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুরিয়াবংশী’ সিনেমাটি অনেকটা ইভেন্ট সিনেমা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। রোহিত শেঠি পরিচালিত এই সিনেমাটি বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছিলো। ‘সুরিয়াবংশী’ সিনেমার বাণিজ্যিক সাফল্যে নির্মাতারা মুক্তি দিতে শুরু করেন আটকে থাকা সিনেমাগুলো। কিন্তু বলিউড বক্স অফিসে ছিলো না আগের সেই জৌলুস।

এরপর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো একে একে বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরতে থাকে। বড় তারকার বড় বাজেটের সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে চরমভাবে। এমনকি ঈদ এবং দীপাবলির উৎসবে মুক্তির পরও সিনেমাগুলো বক্স অফিসে ডিজাস্টার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। চলতি বছরে বলিউডের সিনেমাগুলোর বক্স অফিসের এই চিত্র দেখা গেছে বছরের শেষ ভাগে এসেও। এই ডিজাস্টার সিনেমা উপহারে সবার শীর্ষে আছেন অক্ষয় কুমার।

২০২২ সালে অক্ষয় কুমার অভিনীত মোট চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এই সিনেমাগুলোর সবকটি বক্স অফিসে ডিজাস্টার হিসেবে আবর্ভুত হয়েছে। ২০১৯ সালে চারটি বাণিজ্যিক সফল সিনেমার পর ২০২২ সালে চারটি ডিজাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই তারকা। এছাড়া এই তারকার সরাসরি ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাও দর্শকদের কাছ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। সবদিক থেকেই এটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে এই মুহুর্তে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়ে অক্ষয় কুমার।

অক্ষয় কুমারের মুক্তিপ্রাপ্ত চারটি সিনেমার প্রথমতি মুক্তি পেয়েছিলো চলতি বছরের মার্চে। ‘বচ্চন পান্ডে’ সিনেমার সিনেমাটি মুক্তির পর বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরেছিলো। বিশাল বাজেটের সিনেমাটি বক্স অফিসে ৫০ কোটি রুপিও আয় করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। অক্ষয় কুমার, কৃতি শেনন এবং আরশাদ ওয়ার্সি অভিনীত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ফারহাদ সামজি। সাজিদ নাদিওয়ালা প্রযোজিত সিনেমাটি থেকে এই প্রযোজকের আর্থিক ক্ষতি এক কোটি রুপির বেশী বলে জানা গেছে।

এরপর মুক্তি পেয়েছিলো অক্ষয় কুমারের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমাটি ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমাটিও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরেছে। পৃথ্বীরাজ চৌহানের জীবনী নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় অক্ষয় কুমারের অভিনয়ও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলো। প্রায় ২০০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত সিনেমাটি বক্স অফিসে আয় করেছে মাত্র ৬৫ কোটি রুপি। বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম বড় ডিজাস্টার সিনেমায় খাতায় নাম লিখিয়েছে ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’।

এই বছরে অক্ষয় কুমার অভিনীত শেষ দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো উৎসবকে কেন্দ্র করে। স্বাধীনতা দিবস এবং দীপাবলিতে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ‘রক্ষা বন্ধন’ এবং ‘রাম সেতু’। উৎসবের ছুটির সময়েও এই সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে চরমভাবে। প্রত্যাশা থাকা স্বত্বেও সিনেমাগুলো মুখ থুবড়ে পরেছে। শুধু তাই নয় দর্শকশূন্যতার কারনে মুক্তির কয়েকদিনের মাথায় ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাগুলো প্রদর্শনী বাতিল করেছেন প্রেক্ষগৃহ মালিকরা।

অক্ষয় কুমারের এই সিনেমাগুলোর সবকটি সিনেমাই ছিলো বড় বাজেটের। কিন্তু এর কোনটিই শেষ পর্যন্ত প্রযোজকদের বিনিয়োগ ফেরত নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রায় প্রতিটি সিনেমায় নির্মাতাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিলো ১০০ কোটি রুপির মত। অবশ্য করোনা মহামারী পরবর্তি সময়ে বলিউডের প্রতিটি সিনেমার বক্স অফিস ভাগ্য একই রকম। তবে এক বছরে চারটি ডিজাস্টার সিনেমা উপহার দিয়ে অক্ষয় কুমার বক্স অফিসে নিজের অবস্থান নষ্ট করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমাগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা বক্স অফিসে বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘গাঙ্গুবাই কাঠিওয়ারি’, ‘কাশ্মীর ফাইলস’, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ এবং ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছাড়া আর কোন সিনেমাই বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এর বিপরীতে বক্স অফিসে ডিজাস্টার হিসেবে আবর্ভুত হয়েছে অনেকগুলো বড় বাজেটের সিনেমা। নতুন বছরের বলিউড বক্স অফিসে তার হারানো জৌলুস ফিরে পাবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

আরো পড়ুনঃ
মহামারী পরবর্তি বলিউড বক্স অফিসঃ উৎসবে মুক্তির পরও ব্যর্থ বড় বাজেটের সিনেমা
ঈদের পর দীপাবলিঃ বলিউড বক্স অফিসের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত
২০২২ সালের সর্বোচ্চ আয়ের ৫টি সিনেমাঃ দক্ষিণের ৪টির বিপরীতে বলিউডের ১টি

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d