ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজি তালিকাঃ খারাপ থেকে ভালো অনুযায়ী

ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস

ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস

গত ২৫ জুন আমেরিকা ও কানাডায় মুক্তি পেয়েছে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজের নবম পর্ব ‘এফ ৯’। মুক্তির পর বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে হলিউডের বহুল প্রতীক্ষিত এই সিনেমা ফ্রাঞ্চাইজি। হলিউডের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম দ্যা হলিউড রেপোর্টাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী মহামারীতে মুক্তি পেয়ে আয়ের রেকর্ড গরেছে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস নাইন’ সিনেমাটি। হলিউডের অ্যাকশনধর্মী সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা সিরিজ বলা হয় ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-কে। দ্য ইউনিভার্সেল পিকচারের প্রযোজনায় এই সিরিজটি শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। দশ বছরে এই ফ্রাঞ্চাইজিটির মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা দশটি (হব অ্যান্ড শো স্পিন-অফ সহ)। এদিকে সম্প্রতি সিনেমাটির প্রধান তারকা ভিন ডিজেল জানিয়েছেন আর মাত্র দুটি অর্থাৎ সিনেমাটির ১১তম পর্ব দিয়ে শেষ হচ্ছে এই সিরিজটি। সিনেমাটির মুক্তিপ্রাপ্ত সব পর্বগুলো নিয়ে আলোচনা থাকছে এই লিখায়। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজি তালিকা থেকে দেখে নিন সিনেমাগুলোর খারাপ থেকে ভালো অনুযায়ী ক্রম।

১০। ২ ফাস্ট ২ ফিউরিয়াস
‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজের একনিষ্ট ভক্তরাও এই সিনেমার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হতাশ হয়ে থাকবেন। প্রথম সিনেমাটি মুক্তির ঠিক দুই বছর পর মুক্তি পেয়েছিলো ‘২ ফাস্ট ২ ফিউরিয়াস’। প্রথম পর্বের চেয়ে বেশী মাত্রার একশন এবং গাড়ির স্ট্যান্ট থাকলেও সিনেমাটি এই সিরিজের প্রথম পর্বকে স্পর্শ করতে পারেনি। ডমকে বাদ দিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় ব্রায়ানকে রোমান এবং তেজের সাথে দলবদ্ধ হতে দেখা গেছে। পর্দায় ব্রায়ান এবং রোমানের রসায়ন ভালো লাগলেও ডমের সাথে ব্রায়ানের বোমান্স খুঁজে ফিরেছেন দর্শকরা। তবে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্রাঞ্চাইজিকে আরো পরিপূর্ন রুপ দিয়ে এই সিনেমার ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মনে করেন অনেকেই।

ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস

০৯। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস
ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজির চতুর্থ সিনেমার নাম ছিলো ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ যা ২০০৯ সালে মুক্তি পেয়েছিলো। এই ফ্রাঞ্চাইজিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চতুর্থ পর্বের অবদান অনেক ছিলো। কিন্তু এই সিনেমাটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সিনেমাটি অনেকটাই রেসিং নির্ভর ছিলো। এই কারনে আগের সিনেমাগুলোর তুলনায় অনেকটাই ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। তবে সিনেমাটির পরিচালক জাস্টিন লিন এবং চিত্রনাট্যকার ক্রিস মোরগান ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস পরিবারকে একসাথে করে নতুন একটি এঙ্গেল যোগ করেছেন এই সিরিজে। পরিবার কেন্দ্রিক গল্প নিয়ে পরের সিনেমাগুলো নির্মানের ভিত্তি প্রস্তর এই সিনেমার মাধ্যমেই স্থাপন করেছিলেন সিরিজের নির্মাতারা।

ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস

০৮। দ্যা ফেইট অফ দ্যা ফিউরিয়াস
ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিনেমার অন্যতম প্রধান অভিনেতা পল ওয়ালকারের সড়ক দুর্ঘটনায় আকস্মিক মৃত্যুর পর প্রথম সিনেমা ছিলো ‘দ্যা ফেইট অফ দ্যা ফিউরিয়াস’। ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজটির অষ্টম পর্বের মাধ্যমে এতে যুক্ত হয়েছিলেন হলিউডের আলোচিত অভিনেত্রী চার্লিজ থেরন। এই পর্বে সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার ক্রিস মর্গান এফ গ্যারি গ্যারি ডমকে তার নিজের সাজানো টিমের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দেন। এছাড়া হানকে হত্যাকারী ডেকার্ড শোকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো ডোমের সাথে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। ডমের পারাবারিক মূল্যবোধকে আঘাতের মাধ্যমে থেরন নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছক আঁকেন। তবে শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি তার গতানুগতিক পারিবারিক মূল্যবোধের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে।

ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস

০৭। ফাস্ট অ্যান্ড হিউরিয়াস প্রেসেন্টসঃ হব অ্যান্ড শো
ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিরিজের আগের পর্বগুলোর অন্যতম প্রধান দুটি চরিত্র ছিলো হব এবং শো। ২০১৯ সালে এই দুই চরিত্র নিয়ে ফ্রাঞ্চাইজিটির স্পিন-অফ নির্মান করেন ‘ডেডপুল ২’ নির্মাতা ডেভিড লেইচ। আর সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করেন ক্রিস মর্গান। এই সিনেমার মাধ্যমে মর্গান নতুন একটি ধারার সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সংমিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি করেন এই স্পিন-অফ। এই সিনেমায় শক্তিশালী ভিলেন হিসেবে সামনে নিয়ে আসেন ইদ্রিস এলবাকে। নিয়মিত ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজের অনুভব না পাওয়া গেলেও এই সিনেমাটির একশন দৃশ্যগুলো দর্শকদের কাছে উপভোগ্য ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই।

ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস

০৬। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৬
জনপ্রিয় এই ফ্রাঞ্চাইজিটির পঞ্চম পর্বের পর জাস্টিন লিন এবং ক্রিস মর্গান সিনেমাটির ষষ্ট পর্বে নতুন একটি ধারা নিয়ে আসেন। সুপারহিরো ধরনের একশনের মাধ্যমে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৬’ সিনেমাটি এই ফ্রাঞ্চাইজি প্রেমীদের অন্যতম জনপ্রিয় একটি সিনেমা। আর এই সিনেমায় অনেক পর্ব থেকে অনুপস্থিত ডমের বান্ধবী লেটিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো পরিবারে। তবে লেটির প্রত্যাবর্তনকে কিছুটা টুইস্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন নির্মাতারা। ফ্লাইওভারের উপরের সেই একশন দৃশ্য এবং দুর্দান্ত গাড়ির স্টান্ট অনেকদিন মনে থাকবে সিনেমাপ্রেমীদের। তবে সিনেমাটির ক্লাইম্যাক্সে এসে ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস পরিবারের আরো এক সদস্যকে হারাতে দেখা গেছে।

THE FAST AND THE FURIOUS
Vin Diesel and Paul Walker

০৫। দ্যা ফাস্ট দ্যা ফিউরিয়াস
২০০০ এর দশকের শুরুতে মুক্তি পেয়েছিলো এই ফ্রাঞ্চাইজিটির প্রথম সিনেমা ‘দ্যা ফাস্ট দ্যা ফিউরিয়াস’। মাঝারী বাজেট নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটির জনপ্রিয়তাই দর্শকপ্রিয় এরকম একটি ফ্রাঞ্চাইজির ভিত তৈরি করে দিয়েছিলো। অনানুষ্ঠানিক সুপারহিরো হয়ে উঠার আগে ‘দ্যা ফাস্ট দ্যা ফিউরিয়াস’ সিনেমার মাধ্যমে একটি পরিবারের একসাথে গড়ে উঠার গল্প দেখিয়েছেন নির্মাতারা। একজন আন্ডারকভার এফবিআই এজেন্ট এবং কার রেসিঙয়ের সাথে সম্পৃক্ত ডমের একসাথে হয়ে ভয়ঙ্কর ড্রাগ ডিলারের হয়ে কাজ করার মাধ্যমে গড়ে উঠেছিলো ডোমের টিম। এই টিমই পরবর্তিতে কখনো নিজেদের জন্য আবার কখনো পুলিশের প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় চালিয়েছে তাদের অপারেশন।

০৪। এফ ৯: দ্যা ফাস্ট সাগা
ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজির মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ সিনেমা ‘এফ ৯: দ্যা ফাস্ট সাগা’। সিরিজটি থেকে ৮ বছর বিরতির পর এই সিনেমার মাধ্যমে পরিচালনায় ফরেছেন জাস্টিন লিন। আর এই সিনেমায় আগের পর্বগুলোর একশনকে ছাড়িয়ে গেছেন এই নির্মাতা। একশনের পাশাপাশি পারিবারিক মূল্যবোধকে প্রাদান্য দিয়ে গড়ে উঠেছে সিনেমাটির গল্প। এছাড়া এই সিনেমায় ফিরে আসছেন ফ্রাঞ্চাইজিটির অন্যতম জনপ্রিয় তারকা হান। সেইসাথে আরো থাকছেন চার্লিজ থেরন সহ আরো অনেকে।

০৩। ফিউরিয়াস ৭
প্রতিশোধ, পরিবারকে নিরাপদ রাখতে শত্রুর সাথে লড়াই এবং আগের পর্বগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়া একশন আর স্টান্ট সব মিলিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশার সবকিছুই আছে ‘ফিউরিয়াস ৭’ সিনেমায়। আকাশে গাড়ির উড়াউড়ি এবং প্রায় ১৫ মিনিট ব্যাপ্তির দুর্দান্ত একশন সিকুয়েন্স দিয়ে সিনেমাটিকে সিরিজের অন্যতম আকর্ষনীয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন জেমস ওয়েন। এই সিনেমার প্রধান খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেসন স্টাথাম (ডেকার্ড শো) যে তার ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আঘাত আনে ডোমের পরিবারের উপর। সবমিলিয়ে গল্প, চিত্রনাট্য, পারাবারিক মূল্যবোধ এবং একশন দিয়ে সিরিজের অন্যতম সেরা সিনেমাগুলোর একটি ‘ফিউরিয়াস ৭’। তবে এই সিনেমার ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস প্রেমীদের কাছে স্মরণীয় কারন এই সিনেমার দৃশ্যধারন চলাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন এই সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা পল ওয়ালকের।

০২। দ্যা ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসঃ টোকিও ড্রিফট
২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত টোকিও ড্রিফট সিনেমার মাধ্যমে ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিরিজে অভিষিক্ত হয়েছিলেন জাস্টিন লিন এবং ক্রিস মর্গান। এই সিনেমার গল্প জাপানকে ঘীরে আবর্তিত এবং ডোমের পরিবারকে পিছনে ফেলে নতুন তারকাদের নিয়ে আসা হয়েছিলো এই সিনেমায়। গল্প এবং চিত্রনাট্যে নতুনত্বের মাধ্যমে সিনেমাটি আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এই সিনেমায় সাং ক্যাং প্রথমবারের মত যুক্ত হয়েছিলেন ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজির সাথে। জাস্টিন লিনের স্টাইলিষ্ট পরিচালনা সিনেমাটিকে দিয়েছে এক অনন্য গ্রহণযোগ্যতা।

০১। ফাস্ট ফাইভ 
আমার দৃষ্টিতে এই সিরিজের সেরা সিনেমা ‘ফাস্ট ৫’। জাস্টিন লিন এবং ক্রিস মর্গান তাদের যৌথ উদ্যেগে প্রতিটি পর্বতে এনেছেন অন্যরকম আবেশ। নিজেদের তৃতীয় পর্বের মাধ্যমে এই দুই নির্মাতা উপহার দিয়েছেন এই ফ্রাঞ্চাইজির সেরা পর্ব। ‘ফাস্ট ৫’ সিনেমায় ব্রায়ান পুলিশের চাকরি ছেড়ে ডোমের সাথে যোগ দেয় ভালো কিছুর উদ্যেশে। আর ব্রায়ানের পুলিশের চাকরি থেকে প্রস্থান জায়াগ করে দেয় নতুন একটি চরিত্রের – লুক হবস। এই চরিত্রে অভিনয় করেন ডুয়ান জনসন। ফিউরিয়াস সিরিজের এই পর্বে একসাথে দেখা গেছে একঝাক তারকাকে যাদের অভিনীত চরিত্রগুলো ছিলো – ডোম, ব্রায়ান, মিয়া, হান, গিসেল, রোমান, তেজ, লিও, সান্টোস এবং ভিঞ্চ। এছাড়া ২০০১ সালের পর ‘ফাস্ট ৫’ সিনেমার মাধ্যমে ফ্রাঞ্চাইজি পরিবারের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন ভিঞ্চ।

হলিউডের সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় এবং ব্যবসা সফল এই ফ্রাঞ্চাইজিটি শেষ হচ্ছে ১১তম পর্বের মাধ্যমে। প্রিয় পাঠক জনপ্রিয় এই ফ্রাঞ্চাইজিটির কোন সিনেমা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে মন্তব্যে জানিয়ে দিন ঝটপট।

আরো পড়ুনঃ
‘এফ ৯’ নতুন ট্রেলার: অ্যাকশন আর গতির খেলায় ডোমের পরিবারের পুনর্মিলনী
আবারো পেছালো ‘এফ ৯’: জুনে দেখা যাবে ডমের পরিবারের পুনর্মিলনী
১১তম সংস্করণ দিয়ে শেষ হচ্ছে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিনেমার সিরিজ

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d