অয়ন মুখার্জির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমায় অস্ত্রভার্সের শক্তিশালী অস্ত্র উপাখ্যান!

অয়ন মুখার্জির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’

অয়ন মুখার্জির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান – শিবা’ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে। আগেই ঘোষণা করা হয়েছিলো মোট তিনটি পর্বে দেখানো হবে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ট্রিলজি। মুক্তির আগে থেকেই সিনেমাটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে উত্সাহী ভক্তদের লাইন দেখা গেছে। এই ‘অস্ত্রভার্স’ তৈরিতে অয়ন যে তার হৃদয় ও আত্মাকে কাজে লাগিয়েছেন তা এই মহাকাব্যিক ফ্যান্টাসি সিনেমায় দেখানো দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মোট ৪১০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত অয়ন মুখার্জির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সে ভারতের জবাব হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

ভারতের গৌরবময় অতীতের গল্প বলা ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমার প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট এবং অমিতাভ বচ্চন। ভারতীয় পৌরনিক গল্পের ঋষিরা যে সব অস্ত্রের অধিকারী ছিলেন, ব্রহ্মাস্ত্র তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং ‘অস্ত্রের দেবতা’ নামে পরিচিত। ব্রহ্মাস্ত্র এতটাই শক্তিশালী যে এটি মহাবিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে নিমিষেই। নিজেদের অস্ত্রের ক্রমবর্ধমান শক্তির সাহায্যে এই ঋষিরা ব্রহ্মাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন।

ব্রহ্মাস্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে এই সিনেমাটিতে ঋষিদের আরো অনেকগুলো অস্ত্রের ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ব্রহ্মাস্ত্রকে মোট তিনটি অংশে বিভক্ত করে তারা মহাবিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার কাজ করেছেন। আর এইভাবে শুরু হয় শিবা (রণবীর কাপুর) এবং ইশা (আলিয়া ভাট)-এর গল্প। মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটন করতে কীভাবে ভাগ্য তাদের একত্রিত করে সেটাই দেখা গেছে সিনেমাটিতে। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক অয়ন মুখার্জির অস্ত্রভার্সের শক্তিশালী যত অস্ত্র এবং তার বিস্তারিত!

অয়ন মুখার্জির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’

০১। বানোরাস্ত্র
নাম থেকে বোঝা যায় এই অস্ত্রটি একজনকে বানরের শক্তি দেয়। একটি অ্যাঙ্কলেটের মতো আকৃতির এই অস্ত্র তার পরিধানকারীকে নৃতাত্ত্বিক তত্পরতার সাথে লাফ দিতে এবং আরোহণ করতে সক্ষম করে তোলে। শাহরুখ খান অভিনীত বানোরাস্ত্র দিয়েই শুরু হয় ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান – শিবা’ সিনেমার গল্প। সিনেমাটিতে মোহন ভার্গব নামে একজন মহাকাশ বিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। মোহন ২৫ বছর আগে স্পেসহিন্ড ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছিলেন। চরিত্রটি এই সুপারস্টার অভিনীত ২০০৪ সালের ‘স্বদেশ’ সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত।

অয়ন মুখার্জির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’

০২। নন্দী অস্ত্র
নন্দী ষাঁড় হল হিন্দু পুরাণের ভগবান শিবের কল্পিত বাহন। বলা বাহুল্য যে এই অস্ত্রটি পরিধানকারীর কাছে হাজার ষাঁড়ের শক্তি স্থানান্তর হয়। সিনেমাটিতে জনপ্রিয় তেলেগু অভিনেতা নাগার্জুনের অনীশ শেট্টি এই অস্ত্রের ধারক হিসেবে দেখানো হয়েছে। অশুভ শক্তির সাথে লড়াই করার জন্য তিনি এই নন্দী আস্ত্রটি ব্যবহার করেন। ব্রেসলেট হিসাবে পরিধান করার পর এই অস্ত্রের শক্তি তার মাঝে স্থানান্তরিত হয়। নন্দী অস্ত্র নিঃসন্দেহে সিনেমাটির অন্যতম প্রধান আকর্ষন।

০৩। প্রভাস্ত্র
বলিউডের কিংবদন্তী অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমায় সর্বশক্তিমান গুরুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমাটিতে অমিতাভকে ব্রাহ্মণ বংশের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। হিমালয়ের পাদদেশে একটি রক্ষিত আশ্রমে বসবাস করা এই গুরু পরাক্রমশালী প্রভাস্ত্র বা আলোর তলোয়ারের অধিকারী। তিনি শিবের পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন এবং তাকে তার অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলিকে চ্যানেলাইজ করতে সহায়তা করেন।

অয়ন মুখার্জির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’

০৪। জল অস্ত্র
সিনেমাটির প্রকাশ না করা অস্ত্র হচ্ছে জল অস্ত্র। এই শক্তির অধিকারী একজন নারী যিনি জলেও শক্তি নিজের মধ্যে ধারন করেন। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমাটির টিজার প্রকাশের পর থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে এই চরিত্রে অভিনয় করছেন দীপিকা পাড়ুকোন। এই শক্তির অধিকারী চরিত্রের অভিনেত্রীর পরিচয় প্রকাশ না করা হলেও অস্ত্রভার্সে জল অস্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সিনেমাটিতে। আশা করা যাচ্ছে যে এই ট্রিলজির দ্বিতীয় পর্বটি এই রহস্যময় সুপারওম্যান সম্পর্কে আরও বিস্তারিত প্রকাশ করবে।

০৫। অগ্নি অস্ত্র
সিনেমাটির ট্রেলার থেকে এটা বোঝা গেছে যে রণবীর কাপুর অভিনীত চরিত্র শিবের সাথে আগুনের একটি অদ্ভুত সংযোগ রয়েছে। আগুন তাকে পোড়ায় না এবং তিনি এটিকে ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তবে আগুনের সাথে শিবের প্রেম-ঘৃণার এই সম্পর্কের পিছনে লুকিয়ে আছে একটি গভীর রহস্য। আগুনের সাথে তার এই সম্পর্কের মূল কারন আগুনের কারনে শিবের পরিবারের একটি ঘটনা। আলোচিত এই ট্রিলজির প্রথম পর্ব ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান – শিবা’ সিনেমায় রণবীর কাপুরকে শিবের চরিত্রে দেখা গেছে যে আসলে নিজেই একটি অস্ত্র – অগ্নি অস্ত্র।

এখানে উল্লেখিত শক্তিশালী অস্ত্রগুলো ছাড়াও সিনেমাটিতে অস্ত্রভার্সের আরো কয়েকটি অস্ত্র দেখানো হয়েছে। গুরুর আশ্রমে থাকা তরুণ শিক্ষানবিশদের চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন একদল অভিনেতা। তারা গুরুর কাছে দায়িত্বের সময় এই অস্ত্রগুলি ব্যবহার করার প্রাচীন জ্ঞান শিখেন। এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে পবনাস্ত্র, গজাস্ত্র এবং নাগ ধানুশ অন্তর্ভুক্ত। প্রথম পর্বের গল্পে জুনুনের সাহায্যে দেব কর্তৃক ব্রহ্মাস্ত্র দখলের গল্প দেখা গেছে। দ্বিতীয় পর্বে দেখা যাবে দেবের গল্প যেখানে মহাবিশ্বকে রক্ষা করতে এই সব অস্ত্রের একসাথে ব্যবহার হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমাটি বলিউডের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশী স্ক্রিনে মুক্তি পাওয়ার রেকর্ড গড়েছে। সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯,০০০ স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে সিনেমাটি ৫,০০০-এর বেশী স্ক্রিনে প্রদর্শিত হচ্ছে। সিনেমাটির নির্মানে প্রায় ৪১০ কোটি রুপি খরচ করেছেন নির্মাতারা। ‘অস্ত্রভার্স’ ট্রিলজির প্রথম পর্ব ‘ব্রহ্মাস্ত্র – পার্ট ১: শিবা’ হিন্দি, তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং মালয়ালাম ভাষায় প্যান ইন্ডিয়া মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটির পিছনে নিজের জীবনের দীর্ঘ দশ বছর খরচ করেছেন বলিউডের স্বপ্নবাজ নির্মাতা অয়ন মুখার্জি।

আরো পড়ুনঃ
আসছে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’তে শাহরুখ খানের চরিত্রের উপর ভিত্তি করে পূর্ণাঙ্গ সিনেমা
৫ দিনে ১৫০ কোটিঃ পঞ্চম দিনেও আয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো ‘ব্রহ্মাস্ত্র’
‘ব্রহ্মাস্ত্র’ প্রমাণ করলো বক্স অফিসে ‘বয়কট ডাক’ অপ্রাসঙ্গিক এবং অযৌক্তিক

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d