বলিউডের সেরা চারজন লেডি সুপারস্টার এবং তাদের বক্স অফিস দাপট

সেরা চারজন লেডি সুপারস্টার

সেরা চারজন লেডি সুপারস্টার

পাপারাজ্জিদের কল্যানে স্টার শব্দটি আজ একটি সুন্দর অপব্যবহার করা শব্দে পরিণত হয়েছে। কারণ চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থিত প্রত্যেকেই এখন একজন তারকা। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তারকা কি? ভাবার্থ বিবেচনায় তারকা এমন কেউ যাকে সিনেমার দর্শকরা যথেষ্ট পছন্দ করেন এবং দর্শকরা তাদের দেখতে চায়। আর সুপারস্টার হচ্ছেন তাদের মধ্যকার এমন একজন যাকে পর্দায় দেখার জন্য তার ভক্ত এবং সিনেমাপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।

সুপারস্টারদের জন্য দর্শকরা তাদের সময় এবং অর্থ দুটি খরচ করতে প্রস্তুত থাকেন। আর এটিই পাপারাজ্জিদের তৈরি তারকাদের থেকে আসল তারকাদের আলাদা করে। সেখানে সত্যিকার তারকাদের সংখ্যা খুবই কম সেখানে পাপারাজ্জিদের তৈরি তারকাদের সংখ্যা অগণিত। বর্তমান দৃশ্যকল্পে বলিউডে সম্ভবত ৪ থেকে ৫ প্রকৃত বক্স অফিস তারকা রয়েছেন (সব পুরুষ) এবং সব মিলিয়ে আরও ৭ থেকে ৮ জন তারকা (পুরুষ ও মহিলা) রয়েছে৷ শুধুমাত্র এই সীমিত সংখ্যাক তারকারাই নিজেদের কারিশমা দিয়ে দর্শক টানতে সক্ষম হয়ে থাকেন।

বলিউডে গত পনেরো বছর বা তার বেশি সময়ে একজন প্রকৃত পুরুষ বক্স অফিস তারকা তৈরি হয়নি। সেখানে লেডি সুপারস্টার অনেক পরের বিবেচ্য বিষয়। সত্যিকার বক্স অফিস সুপারস্টার নিয়ে কথা বলতে গেলে তিন খানের বাইরে খুবই সীমিত কিছু নাম সামনে আসবে। অন্যদিকে এই সময়ে দক্ষিণের সিনেমায় পুরুষ তারকার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কয়েকজন লেডি সুপারস্টার। কিন্তু বলিউডে কোন মহিলা তারকা সেই স্তরে পৌঁছতে পারেনি কিন্তু এরমানে এই না যে এটি আগে ঘটেনি। বলিউডের সেরা চারজন লেডি সুপারস্টার এবং তাদের বক্স অফিস দাপট নিয়ে আলোচনা করবো আজকের এই লিখায়।

০১। মমতাজ (১৯৭০-১৯৭৪)
হিন্দি সিনেমার লেডি সুপারস্টার যিনি সত্যিকার অর্থে বক্স অফিসে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। সুপারস্টার রাজেশ খান্নার সাথে একাধিক ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। এছাড়া সঞ্জীব কুমার (খিলোনা), সঞ্জয় খান (মেলা) এবং ফিরোজ খান (মেলা, আপ্রদ) এর মতো অভিনেতারা ভালো অভিনয় করতে না পারলেও মমতাজের জনপ্রিয়তার কারণে বড় হিট পেয়েছিলেন। অনেক নবাগতরা মুমতাজের সাথে জুটি বেঁধেছিলেন কারণ পরিবেশকরা তার নামের উপর সিনেমায় বিনিয়োগ করতেন এবং এই নবাগতদের মধ্যে একজন ছিলেন সেসময়ের ভবিষ্যতের সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন। মমতাজের কারনে অমিতাভ বচ্চনের ‘বন্দে হাত’ সিনেমাটি ‘জাঞ্জির’র চেয়ে বেশি মূল্য পেয়েছিল। রাজেশ খান্না ১৯৭২ সালের শেষের দিক থেকে ১৯৭৩ সালের শুরুর দিকে সুপার স্টারডম হারিয়েছিলেন কিন্তু মমতাজের সাথে ১৯৭৪-৭৫ সালে ‘রোটি’, ‘আপ কি কসম’ এবং ‘প্রেম কাহানি’-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়েছেন।

০২। হেমা মালিনী (১৯৭৩ – ১৯৮২)
বলিউডে মমতাজ পর্বটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি কারণ তিনি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া বন্ধ করেছিলেন। যদিও দর্শকদের চোখে মুমতাজ ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তার সিনেমাগুলো মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত একটি বিশাল তারকা ছিলেন, ১৯৭২ সালে তার তারকাখ্যাতি শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর এর সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন হেমা মালিনী, মমতাজের ছেড়ে দেয়া সিনেমাগুলোর ‘সীতা অর গীতা’ সহ অনেকগুলো সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। হেমা মালিনী তখন সম্ভবত সর্বকালের সবচেয়ে বড় মহিলা তারকা হয়ে উঠেছিলেন।

মমতাজের ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলো যেখানে সত্তরের দশকের প্রথম দিকের সুপারস্টার রাজেশ খান্নার সাথে আসে, সেখানে হেমা মালিনীর ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলো সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সুপারস্টার ধর্মেন্দ্রের সাথে আসে। এরমধ্যে রয়েছে ‘শোলে’ এবং ১৫টি অন্যান্য সিনেমা যেগুলোর বক্স অফিস আয় আজকের হিসেবে ২০০ কোটির বেশী। এমনকি তিনি রাজেন্দ্র কুমার (গোরা অর কালা) এবং দেব আনন্দ (আমির গরীব) এর মতো বিবর্ণ তারকাদেরও বিশাল হিট উপহার দিয়েছেন। হেমা মালিনী অভিনীত ‘ক্রান্তি’ এবং ‘নসিব’ সিনেমাগুলোর মতো ব্লকবাস্টার আশির দশকে অব্যাহত ছিল। যদিও এই সিনেমাগুলো তারকাবহুল ছিল, হেমা মালিনী উপস্থিতি বেশ উজ্জ্বল ছিল।

০৩। শ্রীদেবী (১৯৮৪ – ১৯৯২)
শ্রীদেবী ১৯৮৩ সালে ‘হিম্মতওয়ালা’ সিনেমার মাধ্যমে বিশাল তারকা হয়ে ওঠেন। এই সিনেমাটি বক্স অফিসে বিশাল হিট ছিল এবং সেই সময়ে মহিলা তারকার শীর্ষ স্থানটিতে যে শূন্যতা ছিলো সেটা তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই দখল করেছিলেন। ‘হিম্মতওয়ালা’ সিনেমাটি তারকাবহুল সিনেমা ‘তকদীর’ এর সাথে বক্স অফিসে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছিলো। ‘তকদীর’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা, হেমা মালিনী, জিনাত আমান এবং মিঠুন চক্রবর্তী। বিশাল তারকাদের নিয়ে ‘তকদীর’ সিনেমাটি ভালো আয় করতে পারেনি কিন্তু ‘হিম্মতওয়ালা’ একটি বিশাল হিট হিসেবে আবির্ভূত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ছিলো ‘বিচারপতি চৌধুরী’, ‘মাওয়ালি’, ‘মাকসাদ’ এবং ‘তোহফা’ সিনেমাগুলো।

তারপরে মমতাজের মত হেমা মালিনীও ‘নাগিনা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ এবং ‘চাঁদনী’র মতো সিনেমায় অনেক নায়ককে ব্যবসায়িক সফলতার স্বাদ দিয়েছিলনে। বিশেষ করে ‘নাগিনা’ সিনেমাটি বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম বড় ব্লকবাস্টার সিনেমা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিল। যেমন নিজের সেরা সময়ে ‘গুরু’ নামে একটি সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী কিন্তু দ্বৈত ভূমিকায় তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। এ যেন সালমান খানের সুলতান সিনেমায় দ্বৈত ভূমিকায় থাকা নায়িকা। শ্রীদেবী বক্স অফিস নাম্বার মমতাজ বা হেমা মালিনীর মতো বেশি নাও হতে পারে তবে সে সেময় ইন্ডাস্ট্রিতে একটি খারাপ সময় যাচ্ছিলো।

০৪। মাধুরী দীক্ষিত (১৯৯১ – ১৯৯৭)
মাধুরী দীক্ষিত হলেন বলিউড সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির শেষ মহিলা বক্স অফিস তারকা। কয়েক বছরের সংগ্রামের পর ‘তেজাব’ সিনেমাটি তাকে একজন বিশাল তারকায় পরিণত করেছিলো। ‘তেজাব’ সিনেমার সাফল্যের এক মাসে তিনি আরও একটি বড় ব্লকবাস্টার ‘রাম লখন’ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময়ে শ্রীদেবী রাজত্বকারী তারকা ছিলেন এবং ‘দিল’, ‘সাজন’ এবং ‘বেতার’-এর মতো সিনেমাগুলো মাধুরী দীক্ষিতকে বক্স অফিসের তারকা বানিয়েছিল। ‘দিল’ সিনেমায় আমির খান ছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি একটি মাধুরী দীক্ষিতের সিনেমা হয়ে ওঠে। এছাড়া কাকতালীয়ভাবে আমির খানের প্রথম চারটি বড় হিট (কেয়ামত সে কেয়ামত তক, দিল, রঙ্গিলা এবং রাজা হিন্দুস্তানি) সবই নায়িকাদের কৃতিত্বের সাথে প্ররোচিত করেছিল।

অন্যদিকে ‘সাজন’ সিনেমায় সঞ্জয় দত্ত এবং সালমান খান ছিলেন, ‘বেটা’-তে অনিল কাপুর ছিলেন কিন্তু সিনেমাগুলোর জনপ্রিয়তার কৃতিত্ব পেয়েছেন ‘মাধুরী দীক্ষিত। শাহরুখ খান ‘আনজাম’ সিনেমায় মাধুরী দীক্ষিতের সাথে অভিনয় করেছিলেন, কিন্তু এই সিনেমাটিতে দর্শকরা শাহরুখ খানকে সরাসরি খলনায়ক হিসাবে গ্রহণ করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে এই সিনেমাটি দর্শক প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারপরে ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ এবং ‘রাজা’ সিনেমাগুলোর মাধ্যমে নিজের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। বলিউডে অন্য কোনও নায়িকা কখনও এই স্তরে পৌঁছেনি যা তার প্রতি দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলো।

মাধুরী দীক্ষিতের পর বলিউডে বেশ কয়েকজন মহিলা তারকা জন্ম নিয়েছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন কাজল, কারিশমা কাপুর, ঐশ্বরিয়া রাই, রানী মুখার্জি, প্রীতি জিনতা, কারিনা কাপুর, ক্যাটরিনা কাইফ এবং দীপিকা পাড়ুকোন। কিন্তু এই তারকাদের কেউই সেই অর্থে লেডি সুপারস্টার হয়ে উঠতে পারেননি। এই অভিনেত্রীদের সবাই একটি নির্দিষ্ট সময়ে এক নম্বর নায়িকা হয়েছেন কিন্তু সাধারণত এমন পর্যায়ে নেই যেখানে তারা সময়ের শীর্ষ পুরুষ লিডের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। বলিউডের লেডি সুপারস্টার হওয়ার দৌড়ে এই মুহুর্তে রয়েছেন আলিয়া ভাট, যিনি তার প্রজন্মের নায়কদের চ্যালেঞ্জ করার সক্ষমতা রাখেন। শেষ পর্যন্ত উপরের চারজন লেডি সুপারস্টারের সাথে আলিয়া ভাটের নাম উচ্চারিত হবে কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে।

আরো পড়ুনঃ
বয়কট প্রচারণা কি সিনেমার বক্স অফিস সংগ্রহকে প্রভাবিত করছে?
‘দৃশ্যাম’ ছাড়াও যে পাঁচটি সিনেমার অসাধারণ সিক্যুয়েল আপনার দেখা উচিত
হারিয়ে যাচ্ছে স্টারডাম সংস্কৃতিঃ শাহরুখ খানই বলিউডের শেষ সুপারস্টার!

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d