বলিউডের তিন খানের দুই দশকঃ অভিনেতা ও সুপারস্টার আমির খান (প্রথম পর্ব)

বলিউডের তিন খানের

বলিউডের খান সাম্রাজ্যের তিন অধিপতি – আমির খান, সালমান খান এবং শাহরুখ খান। বলিউড বা হিন্দি সিনেমার কথা উঠলে যে তিনজনের নাম, আলোচনা এবং বিতর্ক অবধারিত। বিগত দুই দশকের বেশী সময় ধরে বিশ্বব্যাপী ভারতীয় সিনেমাকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন এই তিন তারকা। তাদের সমসাময়িক সময়ে যদিও অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগণ এবং হৃতিক রোশনের মত তারকা অসাধারণ কিছু সিনেমা উপহার দিয়েছেন, কিন্তু তিন খানই রয়ে গেছেন বলিউডের প্রতিশব্দ হয়ে। ধারাবাহিক সফলতা, মিডিয়াতে আলোচনা, ফ্যানের সংখ্যা – সব দিক থেকেই সমসাময়িক সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন খান ত্রয়ী। বলিউডের তিন খানের দুই দশক নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এই লিখায়।

তবে গত দুই দশক ধরে হিন্দি সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে তিন খানের মধ্যে কে সেরা? তিন তারকার ক্যারিয়ারই উথান-পতনের সাক্ষী। বিভিন্ন সময়ে সিনেমা এবং সিনেমার বাইরের বিষয়ে আলোচনার জন্ম দিয়ে আসা এই তিন তারকার মধ্যে কে সেরা সে প্রশ্নের উত্তর যতেষ্ঠ সময় এবং আলোচনার দাবি রাখে। এই লেখাতে এই তিন খানের ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনায় অন্য দুই জনের চেয়ে স্বতন্ত্র এবং আলাদা একজন আভিনেতা এবং সুপারস্টার আমির খানের কথা উঠে আনার চেষ্টা করবো।

প্রধান চরিত্রে বলিউডে আমির খানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’ সিনেমার মাধ্যমে। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন জুহী চাওলা এবং ছবিটি পরিচালনা করেন আমির খানের কাজিন ভাই মনসুর খান। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারহিট তকমা নিয়ে চলে এবং বলিউড পায় সম্ভাবনাময়ী এক তারকার সন্ধান। কিন্তু এই সিনেমার পর আমির খান বেশ কিছু নিম্নমানের স্ক্রিপ্টের সিনেমা চুক্তি করেন যেমন, ‘লাভ লাভ লাভ’, ‘আফসানা পেয়ার কি’, ‘তুম মেরি হো’, ‘আওয়াল নাম্বার’ – যেগুলো বক্স অফিসে চরমভাবে ব্যার্থ হয়।

এই সিনেমাগুলোর ব্যার্থতা আমির খানকে পরবর্তিতে সিনেমা বাঁচাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক করে। নতুন করে নিজের ক্যারিয়ার চাঙ্গা করতে আমির বেছে নেন ‘দিল’ সিনেমাটি। ১৯৯০ সালে আমির খানের ‘দিল’ এবং সানি দেওলের ‘ঘায়েল’ একই দিনে মুক্তি পায় এবং দুইটি সিনেমাই বক্স অফিসে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

এদিকে ১৯৮৯ সালে ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’ দিয়ে বলিউডে আরো এক সুপারস্টারের আভির্ভাব হয় – সালমান খান। এই ছবির ধারাবাহিকতায় পরবর্তিতে ১৯৯০ এবং ১৯৯১ সাল জুড়ে সালমান খান একে একে উপহার দেন ‘সানাম বেওয়াফা’, ‘পাত্তার কে ফুল’ এবং ‘সাজান’ এর মত হিট সিনেমা। ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’ এখন পর্যন্ত বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাবসা সফল সিনেমা হিসেবে গন্য হয়ে থাকে।

এই সময়ে সিনেমার প্রধান তারকা হিসেবে অমিতাভ বচ্চনের গ্রহনযোগ্যতা কমে আসছিলো নির্মাতা এবং দর্শক মহলে। সবাই ধারণা করছিলেন অমিতাভ বচ্চনের পরের সুপারস্টার হতে যাচ্ছেন সালমান অথবা আমিরের মধ্যে কেউ একজন। কিন্তু ১৯৯২ সালে অমিতাভ পরবর্তি বলিউড তারকার এই ঈদুর দৌড়ে যুক্ত হইয় আরো এক নাম – শাহরুখ খান। ‘দিওয়ানা’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা শাহরুখ খান পরবর্তীতে নিজের ক্ষমতা আর প্রতিভার জানান দেন ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাজীগর’ এবং ‘ডর’ সিনেমা দিয়ে। মজার বিষয় এর মধ্যে ‘বাজীগর’ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সালমান খান এবং পরিচালক যশ চোপড়ার সাথে কোন এক কারনে বনিবনা না হওয়ায় ‘ডর’ সিনেমা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন আমির খান।

নব্বইয়ের দশকে এই তিন তারকাই হয়ে উঠেন প্রযোজক পরিচালকদের কাছে সবচেয়ে কাংখিত নাম। তবে তুলনামূলকভাবে এই দশকে আমির খান বক্স অফিসের হিসেবে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন। যেখানে তার সমসাময়িক অন্যান্য তারকারা একের পর এক সিনেমা করে গেছেন, তিনি নিজেকে কিছুটা সীমিত করে ফেলেন। এই সময়ে তার মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’ (১৯৯২) এবং ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ (১৯৯৪) বক্স অফিসে ব্যার্থ হয়। ‘হাম হ্যা রাহি পেয়ার কে’ (১৯৯৩) এবং ‘রঙ্গিলা’ (১৯৯৫) মেট্রো দর্শকদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেলেও সর্বজন স্বীকৃত ছিলো না। নব্বইয়ের দশকে আমির খানের একমাত্র ব্লকব্লাস্টার সিনেমা ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজা হিন্দুস্তানি’।

যদিও বক্স অফিসে মোটামুটি সফল ছিলো, সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা পায় আমির খান অভিনীত সিনেমাগুলো। তার সিনেমা নির্বাচন, অভিনয় এবং একগ্রতা তাকে তাকে দেয় ‘মি। পারফেকশনিশট’ উপাধি। সিনেমার মান এবং সিনেমা নির্বাচনে তার দক্ষতা আরো বেশী প্রতিফলিত হয় তার অভিনীত ‘গুলাম’ (১৯৯৮) ‘সারফারোশ’ (১৯৯৯) সিনেমাতে।

অন্যদিকে এই সময়ে অন্য দুই খান শাহরুখ খান এবং সালমান খান, বক্স অফিসের হিসেবে আমির খানের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে সবচেয়ে বেশী সফল ছিলেন সম্ভবত সালমান খান। মেট্রো থেকে শুরু করে ছোট শহর, এমনকি দেশের বাইরেও সবচেয়ে সফল ছিলেন সালমান খান। তার ‘হাম আপকে হ্যাঁ কোন’, ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’, ‘জড়ুয়া’, ‘বিবি নাম্বার ওয়ান’ এবং ‘কারন অর্জুন’ এই দশকের অন্যতম ব্যবসা সফল ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

কিন্তু ব্যবসা সফল ছবির পাশাপাশি বেশ কিছু নিম্নমানের ছবিতে অভিনয় করেন সালমান খান, যা তার সফলতাকে অনেকটাই ম্লান করে দেয়। সমসাময়িক সময়ে সবচেয়ে বেশী ফ্যান ফলোওয়ার থাকার পরও নিজের সম্ভাবনার সর্বোচ্ছ ব্যবহার করতে ব্যার্থ হন এই তারকা।

অন্যদিকে এই সময়ে ‘কারন অর্জুন’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘দিল তো পাগল হ্যাঁ’, এবং ‘কুচ কুচ হোতা হ্যাঁ’ এর মত সিনেমা উপহার দিয়ে নিজের অবস্থান এবং নাম বলিউডে দীর্ঘস্থায়ি করেন শাহরুখ খান। পাশাপাশি ব্যাবসায়িক ভাবে তেমন সফল না হলেও তিনি উপহার দেন ‘চাহাত’, ‘জানাম দিওয়ানা’, ‘দিল সে’ এবং ‘কয়লা’ এর মত বেশ কিছু আলোচিত সিনেমা। তার সময়ের অন্য দুই খান আমির খান এবং সালমান খানের থেকে তিনি সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন মিডিয়ার সাথে সুসম্পর্কে। তার বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনার কারনে মিডিয়ার কাছে তিনি ছিলেন সবসময়ই প্রিয় এক ব্যক্তিত্ব এবং সেই মিডিয়া তাকে উপাধি দেয় ‘কিং খান’।

সিনেমাতে অভিনয়ের পাশাপাশি শাহরুখ খান এই সময়ে অনুষ্ঠিত সবগুলো এওয়ার্ড অনুষ্ঠান মাতিয়েছেন। পুরো নব্বইয়ের দশক জুড়েই মিডিয়ার কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত নাম ছিলেন শাহরুখ খান, যা তাকে বলিউডের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারের স্বীকৃতি এনে দেয়। শুধু তাই নয় এখন পর্যন্ত তিনি বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম বড় সুপারস্টারদের একজন হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন: বলিউডের তিন খানের দুই দশকঃ অভিনেতা ও সুপারস্টার আমির খান (দ্বিতীয় পর্ব)

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d