অজয় সিং দেওল (সিনেমায় যাকে সবাই সানি দেওল হিসেবে চেনে) একাধারে বলিউডের একজন অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক এবং রাজনীতিবিদ। অভিনয় জীবনে দুইবার করে জাতীয় পুরষ্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার জিতেছেন এই অভিনেতা। ১৯৮৩ সালে ‘বেতাব’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন সানি দেওল। এরপর দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে বলিউডের, বিশেষ করে অ্যাকশন সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেতা হিসেবে রাজত্ব করেছেন। অভিনয় জীবনে উপহার দিয়েছেন ৫০টিরও বেশী সিনেমা যার বেশীরভাগই ছিলো ব্যবসা সফল। তার অভিনীত ‘বর্ডার’ এবং ‘গাদ্দারঃ এক প্রেম কথা’ সিনেমা দুটি বলিউডের সর্বকালের অন্যতম সফল সিনেমা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তার অ্যাকশন দৃশ্য, সংলাপ বলার ধরন – সবকিছু মিলে সানি দেওল অন্যতম জনপ্রিয় তারকাদের একজন। নব্বইয়ের দশকে অ্যাকশন তারকা সানি দেওয়লের সেরা ৫টি অভিনয়ের সিনেমা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের এই লিখায়।
১। ঘায়েল
রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত অ্যাকশন ড্রামা ‘ঘায়েল’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯০ সালে। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছিলেন সানি দেওলের বাবা ধর্মেন্দ্র সিনেমাটিতে সানি দেওল ছাড়া আরো অভিনয় করেছেন মীনাক্ষী শেশাদ্রী, রাজ বব্বর এবং অমরিশ পুরী। সানি দেওলের দুর্দান্ত অ্যাকশন এবং সংলাপ নির্ভর সিনেমাটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছিলো। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরষ্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার জিতেছিলেন সানি দেওল। অজয় মেহরা চরিত্রে সানি দেওলের অভিনয় দর্শক এবং সমালোচক সবার কাছেই ব্যপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো।
২। দামিনী
বলিউডের সর্বকালের অন্যতম সেরা নারী কেন্দিক সিনেমাগুলোর একটি ‘দামিনী’। বলিউডে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘দামিনী’ সিনেমাটিকে অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ধর্ষনের মত স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে সামাজিক কিছু ভ্রান্ত ধারনার বিরুদ্ধে একধরনের আন্দোলন ছিলো এই সিনেমা। সিনেমাটিতে সানি দেওলের সাথে আরো অভিনয় করেছেন মীনাক্ষী শেশাদ্রী এবং ঋষি কাপুর। এই সিনেমায় আদালতে সানি দেওলের ‘তারিখ পে তারিখ’ এবং ‘ঢাই কিলো কা হাত’ সংলাপ দুটি এখনো সবাই মনে রেখেছেন।
৩। বর্ডার
জেপি দত্ত প্রযোজিত এবং পরিচালিত যুদ্ধের সিনেমা ‘বর্ডার’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯৭ সালে। ১৯৭১ সালে সংঘঠিত ভারত এবং পাকিস্থানের যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিলো এই সিনেমা। লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি বলিউডের অন্যতম ব্যবসা সফল সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি। সানি দেওল ছাড়া সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন সুনীল শেঠি, অক্ষয় খান্না, জ্যাকি শ্রফ, সুদেশ বেরি এবং পুনিত ইসার। ‘বর্ডার’ সিনেমায় সানি দেওল একজন সেনা কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রে তার অভিনয় সে সময় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলো।
৪। অর্জুন পণ্ডিত
নব্বইয়ের দশকের অ্যাকশন তারকা সানি দেওয়ল অভিনীত অ্যাকশন ক্রাইম সিনেমা ‘অর্জুন পণ্ডিত’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯৯ সালে। এন আর পাচিসিয়া প্রযোজিত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন রাহুল রাওয়াইল। সিনেমাটিতে সানি দেওলের বিপরীতে অভিনয় করেছেন জুহি চাওলা। ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কান্নড় সিনেমা ‘ওম’ এর রিমেক ছিলো ‘অর্জুন পণ্ডিত’। একজন প্রফেসরের শহরের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হয়ে উঠার গল্পের এই সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সানি দেওল। এই চরিত্রে সানি দেওলের অভিনয় সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিলো এবং ‘অর্জুন পণ্ডিত’ সিনেমাটিও বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছিলো।
৫। ঘাতক
সানি দেওল, মীনাক্ষী শেশাদ্রী এবং অমরিশ পুরীকে নিয়ে নির্মাতা রাজকুমার সন্তোষীর তৃতীয় সিনেমা ‘ঘাতক’। এর আগে এই তিন তারকাকে নিয়ে রাজকুমার সন্তোষীর ‘ঘায়েল’ এবং ‘দামিনী’ সিনেমা নির্মান করেছিলেন। আগের দুই সিনেমার মত ‘ঘাতক’ সিনেমাটিও বক্স অফিসের ভালো ব্যবসার পাশাপাশি একাধিক পুরষ্কার জিতেছিলো। শুধু তাই নয় ‘ঘাতক’ সিনেমাটি ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি ছিলো। এই সিনেমায় কাশি নাথ চরিত্রে সানি দেওলের অভিনয় ব্যপকভাবে আলোচিত হয়েছিলো।
আমরা সবাই জানি যে নব্বইয়ের দশকের অন্যতম সফল এবং আলোচিত অভিনেতা ছিলেন সানি দেওল। নিজের অ্যাকশন তারকা ইমেজের জন্য বলিউডের হি-ম্যান হিরো হিসেবেও পরিচিত তিনি। নব্বইয়ের দশকের অ্যাকশন তারকা সানি দেওয়লের সংলাপগুলো এখনো দর্শকদের মুখেমুখে ঘোরে। উল্লেখ্য যে, ‘ঘায়েল’ সিনেমাটির সিক্যুয়েলও নির্মান করেছেন সানি দেওল। তার নিজের পরিচালনায় ‘ঘায়েলঃ ওয়ান্স এগেইন’ সিনেমাটি ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিলো।
আরো পড়ুনঃ
ঘোষনার পর সিনেমা থেকে বাদ পড়েছিলেন বলিউডের যে তারকারা
বক্স অফিস ধামাকাঃ বলিউডের মুক্তি প্রতীক্ষিত সেরা দশটি অ্যাকশন সিনেমা
বলিউডের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কিছু বক্স অফিস সংঘর্ষ এবং তার ফলাফল