মহামারীর সময় আমি পাঁচটি সিনেমা সম্পন্ন করেছিঃ অক্ষয় কুমার

মহামারীর সময়

অক্ষায় কুমার – বলিউডের বর্তমান সময়ের অন্যতম ব্যস্ত তারকা। করোনা মহামারীর সময় একাধিক সিনেমার দৃশ্যধারন শেষ করে সবার জন্য একটি অনন্য উদাহরন স্থাপন করেছেন বলিউডের খিলাড়ি। চলতি মাসেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘বেল বটম’। মহামারীর সময় প্রায় ২০০ জনের ক্রু মেম্বার নিয়ে দেশের বাইরে সিনেমাটির কাজ শেষ করেছেন নির্মাতারা। ‘বেল বটম’ সিনেমার মুক্তি এবং করোনাকালীন সিনেমার কাজ নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেন হিন্দুস্থান টাইমসের সাথে। ফিল্মীমাইক পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কবিতা আওয়াস্তি।

লকডাউন শিথিলের পর ২০২০ সালের আগস্টে সিনেমার কাজ শুরু করা প্রথম অভিনেতা ছিলেন আপনি। যুক্তরাজ্যে সেই সময়ের অভিজ্ঞতা, অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
আমার এখনো সেই ফ্লাইটের কথা মনে আছে, যেখানে ২০০ জনের বেশী সদস্য ছিলেন। সবার মধ্যেই সেই অনিশ্চয়তা এবং আশঙ্কা ছিলো যে যেকোন সময় আমরা নির্দেশনায় পরিবর্তন দেখতে পারি এবং আমরা সেখানে আটকা পরতে পারি। কিন্তু যখনই আমরা ফ্লাইটে ছিলাম, পুরো ক্রু উল্লাসে চিৎকার করে উঠল। সময়টা এমন বিশেষ ছিলো যে, সম্ভবত এখন পর্যন্ত এটাই আমাদের সবচেয়ে স্মরণীয় ভ্রমন।

কোভিড-১৯ নিয়ে আমরা গত ১৭ মাস ধরে আছি। আগামীতে আপনি সিনেমা নির্মান, প্রেক্ষাগৃহ এবং এই এই সম্প্রদায়ে কি পরিবর্তন দেখছেন?
আমি অন্যদের কথা বলতে পারবো না আমি আমার কাজ স্বাভাবিকভাবেই চালিয়ে যাবো। চলমান মহামারীর সময় আমি পাঁচটি সিনেমা সম্পন্ন করেছি। আমার পরবর্তি সিনেমা ‘বেল বটম’ টিমের সাথে ‘সিন্ডেরেলা’, পরিচালনা করছেন রাঞ্জিত রিওয়ারি এবং প্রযোজনায় পূজা এন্টারটেইনমেন্ট। এরপর আমি যেভাবে কাজ করি সেভাবেই করবো – বছরে গড়ে চারটি সিনেমা। তবে হ্যাঁ, আমাদের প্রদর্শনের জায়গাতে কিছুটা পরিবর্তন সাতে পারে। যেমন আমি জানি কিছু সিনেমার কাজ শুরু আগেই ওটিটি’তে মুক্তির পরিকল্পনায় এগিয়ে যায়। এছাড়া সম্প্রতি প্রেক্ষাগৃহ এবং ওটিটি দুই জায়গায় একসাথে মুক্তির কথাও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যেভাবেই হোক সবকিছু চালিয়ে যেতে হবে, এটাই এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।

‘ধুম ৪’ সিনেমায় বার বার আপনার নাম শোনা যাচ্ছে, যার ব্যাখ্যা আপনি দিয়েছেন। এছাড়া নিরাজ চোপড়ার জীবনীভিত্তিক সিনেমা নিয়ে আপনার মিমও দেখা গেছে। এগুলোকে আপনি কিভাবে হ্যান্ডেল করেন?
মিমগুলো আসলেই অনেক মজার, মানুষ অনেক ক্রিয়েটিভ। সম্প্রতি ‘সৌগন্ধ’ সিনেমার একটি স্থিরচিত্র দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম ‘নিরাজ চোপড়ার বায়োপিকের প্রস্তুতি শুরু করেছেন অক্ষয় কুমার।‘ যত মানুষ এটা আমার কাছে পাঠিয়েছে তাতে বোঝা যায় মিমটি অনেক ভালো হয়েছে। একজন অভিনেতার জন্য সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা হচ্ছে মানুষের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া। বিভিন্ন ধরনের সিনেমায় কাজ করাটা ভালোই হচ্ছে আমার জন্য। এইকারনে ‘ধুম’ সিরিজের মত স্টাইলিষ্ট অ্যাকশন সিনেমা হোক কিংবা বায়োপিক হোক মানুষ সেখানে আমাকে ভাবতে পারছে।

আপনার সিনেমা কেসারি (২০১৯), মিশন মঙ্গল (২০১৯), গোল্ড (২০১৮), এয়ারলিফট (২০১৬), বেবি (২০১৫) সবগুলোই উগ্রতাহীন দেশপ্রেম নিয়ে। এটা কি আপনি নিজে বেছে নেয়ার কারনে না সুযোগে হয়েছে?
আমি সেই বিষয়টি বেছে নেই যেটাতে আমি বিনোদন দেখতে পাই এবং যেটা আমাকে উত্তেজিত করে। আর যদি সেটা দর্শকদের কোন সামাজিক বার্তা দেয় তাহলে সেটা আমার পছন্দ হয়ে যায়। আর উগ্রতা নিয়ে যেটা বললেন সেটা আমার সচেতন পছন্দ। দর্শকরা খুবই স্মার্ট। আপনি যদি কিছুতে বাহুল্য করেন দর্শক সেটা দেখতে পারে। আমি সবসময় সবকিছু বাস্তব এবং বিশ্বাসযোগ্য পর্যায়ে রাখতে পছন্দ করি। আমাদের কম পরিচিত নায়কদের দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা, যারা আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, তাদের সম্মান করা এবং তাদের অর্জন নিয়ে অহংকার বোধ করা। আমরা যদি সেটা করতে পারি, আমরা বলতে পারি আমাদের মিশন সফল।

‘বেল বটম’ সিনেমায় আপনি একজন গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করছেন যে শেষ পর্যন্ত ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হন। সিনেমাটির কোন জিনিসটা আপনাকে আকর্ষিত করেছিলো?
আমাদের দেশের অনেক অজানা গল্প আছে যেটা মানুষ এখনো জানে না। যেমন আমি যখন এয়ারলিফট (২০১৬) সিনেমাটি করি তখন এরকম কিছু হয়েছিলো সেটা আমার জানা ছিলো না। আমাদের বিমান বাহিনীর এরকম একটি উদ্ধার কার্যক্রম আমাদের কাছে অজানা ছিলো। এরপর অনেকেই আমাকে বলছেন এরকম একটি ঘটনা তাদের কাছে অজানা ছিলো। একই জিনিস ঘটেছে প্যাডম্যান, গোল্ড, কেসারি, মিশন মঙ্গল, টয়লেটঃ এক প্রেম কথা সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রে। আমি বাস্তব জীবনের গল্প পছন্দ করি এবং যখনই এরকম অসাধারণ কোন ঘটনা শুনি আমার মনে হয় আরো বেশী মানুষের এই গল্পটা জানা উচিত। ‘বেল বটম’ সিনেমাটিও এর ব্যাতিক্রম নয়। ভারতের প্রথম কভার্ট অপারেশনের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।

ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে লারা দত্তের লুক নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। নির্মাতা রঞ্জিত তিওয়ারি জানিয়েছেন এই চরিত্রের জন্য লারা দত্তের নাম আপনিই প্রস্তাব করেছিলেন। এই সিদ্ধান্ত কিভাবে আসলো আপনার?
রঞ্জিত যখন সিনেমাটির গল্প আমাকে শোনান, আমরা জানতাম ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং আমাদের সঠিক তারকা নির্বাচন জরুরী। সে আমাকে ইন্দিরা গান্ধীর কিছু ভিডিও দেখান, যেখানে দেখতে পাই ইন্দিরা গান্ধীর নিজস্ব একধরনের শারীরিক ভাষা রয়েছে এবং আমার কাছে মনে হয়েছে এই চরিত্র পর্দায় ফুরিতে তুলতে লারাই সেরা পছন্দ হবে। আমাদের মেকআপ আর্টিস্ট বিক্রম গাইকোয়ারকে অভিনন্দন লারাকে এরকম অসাধারন লুক দেয়ার জন্য।

‘বেল বটম’ এমন এক সময় মুক্তি পাচ্ছে যখন প্রেক্ষাগৃহগুলো সব আসনে সিনেমা প্রদর্শন শুরু করেনি। বিষয়টি কি আপনাকে বিরক্ত করছে?
এটা আমাকে আগে বিরক্ত করত, কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় একটি জিনিস আমি শিখেছি যে যা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই সেটা নিয়ে চিন্তা যত কম করবেন আপনি তত খুশি থাকবেন। স্বাভাবিক সময়ে প্রেক্ষাগৃহ সব আসন নিয়ে খুলবে কিন্তু এই কেইসে সেরকম হচ্ছে না। আমাদের সবচেয়ে বড় এলাকা মহারাষ্ট্র এখনো সিনেমা প্রদর্শনের জন্য খোলেনি। আমাদের কাছে দুটি উপায় ছিলো – আবারো সিনেমাটির মুক্তি পিছিয়ে দেয়া অথবা মক্তি দিয়ে সিনেমার ভাগ্য সিনেমার হাতে ছেড়ে দেয়া। যেহেতু সিনেমা মুক্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে তাই আমরা দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছি।

বেলবটম, সূর্যবংশী, আত্রঙ্গি রে, পৃথ্বীরাজ, বচ্চন পান্ডে, রাম সেতু এবং রক্ষাবন্ধন সিনেমাগুলোর মাধ্যমে আপনি বর্তমানে সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছেন যা একজন অভিনেতার স্বপ্নের মত। আপনি কি তা মনে করেন না?
এরকম বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটা অবশ্যই সৌভাগ্যের। এরকম বিভিন্ন ধরনের চিত্রনাট্য পাওয়াটাও সৌভাগ্যের ব্যপার। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি অ্যাকশন হিরো হিসেবেই স্বছন্দবোধ করতাম। এরপর আমার সৌভাগ্য যে প্রিয়ান (প্রিয়দর্শন) স্যার আমাকে ‘হেরা ফেরি’ সিনেমার জন্য প্রস্তাব দেন এবং অভিনয় করতে রাজী করান। এই সিনেমাটি আমাকে আমার কমফোর্টজোন থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। এরপরই আসলে আমি ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করি, সেটা হোক একজন ট্রান্সজেন্ডার কিংবা সমকামী অথবা প্যাদম্যান। ‘হেরা ফেরি’ সিনেমার সেই সুবিধা আসলে আমি এখনো উপভোগ করছি।

বছরে আপনার সাধারণত চার থেকে পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পেয়ে থাকে, কিন্তু মহামারী সবার পরিকল্পনা ওলটপালট করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আপনার শেষ হওয়া সিনেমাগুলোর বাইরে ‘সূর্যবংশী’ সিনেমার জন্য দর্শকরা অপেক্ষায় আছে। সিনেমাটির মুক্তির ব্যাপারে কোন খবর আছে?
আমি এই প্রশ্নটা দুইজনের কাছে পাঠিয়ে দিতে চাই ঈশ্বর এবং রোহিত শেঠি। আপনি এই দুই জনের কাছ থেকে খবর নিয়ে দেখতে পারেন এবং যদি আপনি কিছু জানতে পারেন তাহলে আমাকে জানিয়ে দিবেন দয়া করে। তবে ‘বেল বটম’ সিনেমা দিয়ে আমরা বড় পর্দায় ফেরার একটি পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করি সিনেমাটির ফলাফল অন্যদের আত্মবিশ্বাসী করবে।

যেখানে সহ-শিল্পীরা তাদের একমাত্র সিনেমা মুক্তি অপেক্ষায় আছেন সেখানে আপনার ছয়টি সিনেমা মুক্তির জন্য প্রস্তুত। এছাড়া আপনার আরো কয়েকটি সিনেমা বর্তমানে নির্মানাধীন রয়েছে। এটাকি শুধুই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত না এই ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পৃক্ত হাজারো মানুষের জীবন এবং জীবিকার সুযোগ তৈরি করে দেয়া?
গত বছর মহামারীর সময় আমাদের মধ্যে অনেকেই নিরাপদে বাসায় থাকতে পেরেছি, বাসা থেকে কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের ডাক্তার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জরুরী সেবা প্রদানকারী সেই পরিস্থিতিতেও কাজ করেছেন। আমি আসলে তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। আমি আমার স্বাভাবিক কাজে দেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সৌভাগ্যবশত আমার প্রযোজক এবং পরিচালকরাও সব ধরনের নিরাপত্তা মেনে কাজ শুরুর জন্য রাজী হয়েছেন। এছাড়া যদি একটা সিদ্ধান্ত আমার সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের সাহায্য করে থাকে তাহলে সেটা আমার জন্য গর্বের।

আরো পড়ুনঃ
খিলাড়ি কুমার থেকে বায়োপিক কুমারঃ জীবনী ভিত্তিক অক্ষয়ের সেরা দশ!
অক্ষয় কুমার: করোনা বিধ্বস্ত বলিউডের সবচেয়ে বড় বাজির ঘোড়া!

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d