ঢাকাই সিনেমার নতুন আশার আলো আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’

আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’

আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহের সবচেয়ে বড় হতাশা দর্শক শূন্যতা। মাঝে মাঝে কিছু সিনেমা দর্শক আকৃষ্ট করতে পারলে ছিলো না ধারাবাহিকতা। আর মরার উপর খরার ঘা হয়ে আসে করোনা। প্রায় দুই বছর নতুন কোন সিনেমা নিয়ে দেখা যায়নি দর্শক এবং প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের মধ্যে উত্তেজান। অবশেষে করোনা মহামারী শেষে নতুন দিনের আলো দেখাচ্ছে ৩রা ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘মিশন এক্সট্রিম’। দেশের ৫০টি প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি বহুলপ্রতীক্ষিত এই সিনেমাটি একই দিনে মুক্তি পেয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার আরো ২৪টি প্রেক্ষাগৃহে। জানা গেছে ঢালিউডের জন্য নতুন আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমাটি।

সিনেমাটি দেখতে দর্শক সমাগম প্রসঙ্গে ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’-এর ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবারের প্রতিটি শো হাউসফুল গেছে। সনি, সীমান্ত সম্ভার, মহাখালী ও বসুন্ধরার প্রতিটি শাখাতেই চলছে ছবিটি। করোনা-পরবর্তী যেকোনো ছবির তুলনায় মিশন এক্সট্রিম ভালো চলছে বলা যায়। করোনার কারণে অনেক দিন সিনেপ্লেক্স বন্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে চালু হওয়ার পর দর্শকের সংখ্যা অতটা বাড়েনি। তবে এই ছবিটির ক্ষেত্রে আমরা যা ভেবেছিলাম সে অনুযায়ী দর্শক পাচ্ছি। গড়ে আসনসংখ্যার ৫০ শতাংশই পরিপূর্ণ হচ্ছে। এতেই সন্তুষ্ট আমরা।‘

এদিকে যশোরের মণিহারে চলছে ‘মিশন এক্সট্রিম’। দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই প্রেক্ষাগৃহটির টিকিটের মূল্য ৮০, ৬০ ও ৪০ টাকা। মণিহারে সিনেমাটির বক্স অফিস রিপোর্ট প্রসঙ্গে এর ব্যবস্থাপক আলী আকবর সোহাগ বলেন, ‘শুক্রবার আমাদের সেল ছিল ৩৩ হাজার ২০০ টাকা। শনিবার ২২ হাজার ৬০০ টাকা ও রবিবারে ১১ হাজার ৪০০ টাকা। সাধারণত ঈদের সময় হিট ছবির টিকিট বিক্রি হয় দিনে দেড় লাখ টাকার মতো। তবে আমরা আশাহত নই। কারণ করোনার পর আর কোনো ছবি এত ভালো চলেনি। এমনকি জিতের বাজি সিনেমার সেলও এর ধারেকাছে ছিল না।‘

এছাড়া রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত মধুমিতা হলের টিকিট বিক্রেতা রনি বলেন, ‘শুক্রবারে ৫১ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে মধুমিতায়। শনিবার তা নেমে হয়েছে ২১ হাজার টাকা এবং রবিবারে ১১ হাজার টাকা।‘ তবে তিনি জানান, সিনেমাটি নিয়ে খুশি মধুমিতা কর্তৃপক্ষ। অনেক দিন প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আসছিল না, ‘মিশন এক্সট্রিম’ দিয়ে সেই খরা কেটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দিনাজপুরের মডার্ন সিনেমা হল মালিকও। প্রেক্ষাগৃহটির বুকিং এজেন্ট বাদল খান বলেন, ‘আমরা বাইরে কাউকে সেল রিপোর্ট দিই না। এটা ব্যবসার পরিপন্থী। তবে এ ছবিটি নিয়ে আমরা খুশি। সেল ভালো। মাঝখানে যত ছবি মুক্তি পেয়েছে সেগুলোর চেয়ে এই ছবির দর্শক প্রতিক্রিয়া অনেক ভালো’।

সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের এই প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্ট  এর নির্মাতাদ্বয়ের একজন সানী সানোয়ার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা হলে হলে ঘুরছি। দর্শকদের সঙ্গে কথা বলছি। সবাই ছবিটি নিয়ে ভালোলাগা প্রকাশ করছেন। গতকাল বগুড়ার মধুবন হলের কর্ণধার ফোন দিয়ে বললেন, সানী ভাই কী ছবি বানিয়েছেন! আমার হলে যারা কখনো আসেনি তারাও ছবিটি দেখতে আসছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বই-খাতা নিয়ে হলে ঢুকছে। আমি সত্যিই এই ধরনের মন্তব্য শুনে আবেগাপ্লুত। ছবিটির পরিচালকের পাশাপাশি প্রযোজকও আমি। এখনো ঠিক জানি না লগ্নিকৃত অর্থের কতটুকু ফিরে আসবে, তবে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটা অতুলনীয়। এটা টাকা দিয়েও পাওয়া যাবে না তা জানি।’

উল্লেখ্য যে, সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। এছাড়াও সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত তাসকিন রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, সাদিয়া নাবিলা ও সুমিত সেনগুপ্ত। আরো কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, মাজনুন মিজান, ইরেশ জাকের, মনোজ প্রামাণিক, আরেফ সৈয়দ, সুদীপ বিশ্বাস দীপ, রাশেদ মামুন অপু, এহসানুল রহমান, দীপু ইমাম, সৈয়দ নাজমুস সাকিবসহ অনেকে।

কুল নিবেদিত আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে কপ ক্রিয়েশনের ব্যানারে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘সিটিটিসি’র কিছু শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা। সিনেমাটির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পুলিশ সুপার সানী সানোয়ার নিজেই। সিনেমাটির সহযোগী প্রযোজক হিসেবে রয়েছে মাইম মাল্টিমিডিয়া ও ঢাকা ডিটেকটিভ ক্লাব।

আরো পড়ুনঃ
‘মিশন এক্সট্রিম’ দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিরলেন দর্শকঃ টিকেট বিক্রিতে রেকর্ড
যে পাঁচটি কারনে আপনার দেখা উচিৎ আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’
সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে বিগ বাজেট পুলিশ থ্রিলার ‘মিশন এক্সট্রিম’

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত

%d