চলচ্চিত্রের নামঃ লাক্সমি (২০২০)
মুক্তিঃ নভেম্বর ০৯, ২০২০ (ডিজনি+হটস্টার)
অভিনয়েঃ অক্ষয় কুমার, কিয়ারা আদভানি, শারদ কেলকার, আয়শা রাজা মিশ্রা, রাজেশ শর্মা, মানু ঋষি চাড্ডা প্রমুখ
পরিচালনাঃ রাগভ লরেন্স
প্রযোজনাঃ ফক্স ষ্টার ষ্টুডিও, কেপ অফ গুড ফিল্মস, সাবিনা এন্টারটেইনমেন্ট, তুষার এন্টারটেইনমেন্ট হাউস
পরিবেশনাঃ ডিজনি+হটস্টার
কাহিনীঃ তামিল সিনেমা ‘কাঞ্চনা’ থেকে নির্মিত
চিত্রনাট্যঃ রাগভ লরেন্স, স্পাষ কেটারপাল এবং তাশা বামরা
পরিবর্তীত চিত্রনাট্যঃ ফরহাদ সমাজী
সংলাপঃ ফরহাদ সমাজী
সম্পাদনাঃ রাজেশ জি পান্ডে
চিত্রগ্রহনঃ ভেটরি পালানিসাময়, সানথানা কৃশনা রাবিচন্দ্রা, কুশ ছাবরিয়া
সংগীতঃ আমার মহিল (ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর), তানিস্ক বাগচী, শশী-ডিজে খুশি এবং উল্লুমানাতি
প্রারম্ভিক কথাঃ ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা ‘কাঞ্চনা’ তামিলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি হিন্দি টিভি চ্যানেলে সিনেমাটির হিন্দি ডাবিং সহ মুক্তি দেয়ার পর হিন্দি ভাষাভাষীদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায় সিনেমাটি। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমাটি পরিচালনাও করেছিলেন লাগভ লরেন্স। এর পরে এই সিরিজের বেশ কয়েকটি সিক্যুয়েলও নির্মান করেছিলেন নির্মাতারা। সিনেমাটির জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করে বলিউডেও এর রিমেকের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন অক্ষয় কুমার। গত বছর ঈদে মুক্তির কথা থাকলেও করোনার কারনে হলে মুক্তি না দিয়ে সিনেমাটি মুক্তি পায় ওটিটি প্লাটফর্ম ডিজনি+হটস্টার এ। কেমন হলো এই রিমেক? অক্ষয় কুমার কি পেরেছেন প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনোদন দিতে? লাগভ লরেন্স মূল সিনেমার মত এটাতেও দেখিয়েছেন তার ঝলক? এই পর্যালোচনায় উপরক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।
কাহিনী সংক্ষেপঃ আসিফ (অক্ষয় কুমার) এবং রেশমি (কিয়ারা আদভানি) বিবাহিত সুখী দম্পতি হিসেবে বসবাস করছে। রেশমির পিতামাতা তাদের ধর্মীয় রক্ষণশীল চিন্তাভাবনার কারনে একজন মুসলিমকে নিজেরদের মেয়ের স্বামী হিসেবে গ্রহন করতে অপারগতা প্রকাশ করে। অবশেষে তাদের ২৫তম বিবাহবার্ষিকীতে রেশমির মা রত্না (আয়েশা রেজা মিশ্রা) তার স্বামী শচীন (রাজেশ শর্মা)-কে পার্টিতে মেয়েকে দাওয়াত দিতে রাজী করাতে সক্ষম হয়।
এদিকে আসিফ একজন বাস্তবধর্মী মানুষ যে ভুত-প্রেতে বিশ্বাস করেনা এবং সবসময় বলে যদি কখনও ভুতের দেখা পান তাহলে চুরি পরে থাকবেন। পরবর্তীতে দেখা যায়, আসিফের উপর তৃতীয় লিঙ্গের লাক্সমির (শারদ কলকার) আত্না ভর করে যার ফলশ্রুতিতে আসিফের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। গল্পের ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায় লাক্সমি একদল মানুষের হাতে খুন হয়েছিলো। আর এখন লাক্সমির আত্না আবার ফিরে আসে এবং আসিফের সাহায্যে প্রতিশোধ নিতে চায়। আসিফের উপর লাক্সমির আত্না ভর করা আসিফের জীবন এবং পরিবারের উপর কেমন প্রভাব ফেলে সেটা নিয়েই আবর্তিত সিনেমার ঘটনাপ্রবাহ।
চিত্রনাট্য এবং সংলাপঃ যদিও অরিজিনাল ‘কাঞ্চনা’ সিনেমা থেকে গল্পের প্লট এবং চিত্রনাট্যে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে সেটা সিনেমাতে সেরকম কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। সম্ভবত সিনেমাটির সবচেয়ে দুর্বল দিক ছিলো ফরহাদ সামজির দুর্বল চিত্রনাট্য। গল্প উপস্থাপনকে আকর্ষণীয় করতে চিত্রনাট্যের যে সহযোগিতা দরকার ছিল সেটা এখানে পুরোপুরি অনুপস্থিত। প্রথমার্ধের কিছু কমেডি এবং দ্বিতীয়ার্ধে শারদ কলকারের পর্দায় আবির্ভাবের দৃশ্য কিছুটা স্বস্থির কারন হতে পারে দর্শকদের কাছে।
এছাড়া ওরিজিনাল ‘কাঞ্চনা’ মুক্তি পেয়েছিলো ২০১১ সালে আর ‘লাক্সমি’ মুক্তি পেয়েছে ২০২০ সালে। এই ৯ বছরে দর্শকদের রুচি এবং সিনেমা গ্রহনের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে স্বল্পপরিসরে চিত্রনাট্যের এই পরিবর্তন সেটাকে ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বর্তমানের স্মার্ট কমেডির যুগে এই ধরনের মেলোড্রামা গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা। ফরহাদ সামজির পরিবর্তিত চিত্রনাট্য এবং রাগভ লরেন্সের সিনেমা বলার ধরনে বড় ধরনের একটা বৈপরীত্য দৃশ্যমান।
সংলাপের দিক থেকে মোটামুটি ঠিকঠাক বলা চলে। মনে ধরার মত বা সিনেমা শেষ হওয়ার পরও বলতে থাকবেন এরকম শক্তিশালী কোন সংলাপ সিনেমাতে দেখা যায়নি।
পরিচালনাঃ ওরিজিনাল ‘কাঞ্চনা’ সিনেমারও পরিচালক ছিলেন রাগভ লরেন্স। কিন্তু এই সিনেমা পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিলো একটি সময়পোযোগী চিত্রনাট্য। পরিচালক হিসেবে সিনেমার যেসব জায়গায় তার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন ছিলো সম্ভবত দুর্বল গল্প আর চিত্রনাট্যের কারনে সে জায়গাগুলোতে ব্যর্থ হয়েছেন রাগভ লরেন্স। তাই, একঝাঁক ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী থাকার পরও একটি সফল সিনেমা উপহার দিতে পারেননি এই প্রচালক।
অভিনয়ঃ সিনেমাটির গল্প এবং চিত্রনাট্য পুরোটাই অক্ষয় কুমারের জন্য ছিলো। দ্বিতীয়ার্ধে শারদ কলকারের কিছুটা পর্দা উপস্থিতি ভিন্নতা এনেছে। তবে সিনেমাটির সবচেয়ে বড় শক্তি সন্দেহাতীতভাবে অক্ষয় কুমারের অভিনয়। এই চরিত্রের জন্য যে এনার্জি দরকার সেটা এই বয়সে দিতে পারা শুধুমাত্র অক্ষয় কুমারের পক্ষেই সম্ভব। বাকি চরিত্র রূপদানকারী অভিনেতা এবং অভিনেত্রীবৃন্দ যার যার চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন।
উপসংহারঃ সিনেমাটি ঘোষনার পরই সবাই বলছিলেন ‘কাঞ্চনা’ পুনঃনির্মাণের তেমন কোন প্রয়োজন বা যুক্তিকতা নেই। আর পুননির্মাণ করতে হলে সময়পজোগী গল্প এবং চিত্রনাট্য জরুরি। ‘লাক্সমি’ সিনেমাটি সেটাকেই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। অক্ষয়ের মত একজন তারকাকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা যতটুকু আবেদনের দাবি রাখে ‘লাক্সমি’ সেটা পূরণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ।