চলচ্চিত্রের নামঃ মুম্বাই সাগা (২০২১)
মুক্তিঃ মার্চ ১৯, ২০২১
অভিনয়েঃ জন আব্রাহাম, ইমরান হাশমি, সুনীল শেঠী, কাজল আগারওয়াল, রোহিত রয়, অঞ্জনা সুখানি, মাহেশ মাঞ্জেরেকার, প্রতীক বাব্বর, অমল গুপ্ত, গুলশান গ্রোভার প্রমুখ।
পরিচালনাঃ সঞ্জয় গুপ্ত
প্রযোজনাঃ -সিরিজ এবং হোয়াইট ফিদার ফিল্মস
পরিবেশনাঃ এএ ফিল্মস
কাহিনী, চিত্রনাট্য এবং সংলাপঃ সঞ্জয় গুপ্ত, ভাইবাহ বিশাল এবং রোবিন ভাট
সম্পাদনাঃ বান্টি নেগি
চিত্রগ্রহনঃ শিখর ভাটনাগার
সংগীতঃ ওমর মাহিল, ইও ইও হানি সিং এবং পায়েল দেব
প্রারম্ভিক কথাঃ গ্যাংষ্টার ভিত্তিক সিনেমা নির্মানের ক্ষেত্রে পরিচালক সঞ্জয় গুপ্তের আলাদা একটা নাম আছে। অন্যদিকে গ্যাংষ্টার নিয়ে মুম্বাইয়ের ইতিহাসটা সবসময়ই রোমাঞ্চকর। সঞ্জয় গুপ্ত এর আগে মুম্বাইয়ের গ্যাংষ্টার এবং পুলিশের লড়াই নিয়ে নির্মান করেছিলেন ‘শুটআউটে এট লক্ষনওয়ালা’ এবং ‘শুটআউটে এট ওডালা’ সিনেমা দুটি। এবার গুপ্ত দর্শকদের জন্য নিয়ে এসেছেন তারকাবহুল সিনেমা ‘মুম্বাই সাগা’। এই সিনেমায় প্রথমবারের মত একসাথে দেখা যাবে জন আব্রাহাম এবং ইমরান হাশমিকে। সিনেমার ট্রেলারই স্পষ্ট যে, মুম্বাইয়ের গ্যাংষ্টার এবং পুলিশের লড়াই নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা। কেমন হলো সঞ্জয় গুপ্তের নতুন এই সিনেমা? দর্শকদের বিনোদনের কেমন উপাদান আছে এই সিনেমায়? চলুন রিভিউতে দেখে নেয়া যাক।
কাহিনী সংক্ষেপঃ ‘মুম্বাই সাগা’ সিনেমার প্রেক্ষাপট ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি। অমর্ত রাও (জন আব্রাহাম) তার পরিবার নিয়ে মুম্বইয়ে বসবাস করে। তার পরিবারে আছে বাবা (রাজেন্দ্র গুপ্ত), ছোটভাই অর্জুন (হার্শ শৰ্মা) এবং স্ত্রী সীমা (কাজল আগারওয়াল)। তার পরিবার রাস্তায় সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং প্রতি সপ্তাহে গাইতোন্ডে (অমল গুপ্ত) এর লোকদের চাঁদা দিতে হয়। একদিন এক চাঁদাবাজের সাথে অর্জুনের বাকবিতন্ডা হয় এবং তারা অর্জুনকে ওভারব্রিজ থেকে ফেলে দেয়। শেষ মুহূর্তে অমর্ত অর্জুনকে ট্রেনের নিচে পরে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এরপর গাইতোন্ডে’র বাহিনীর সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়। এদিকে গাইতোন্ডে জেলের মধ্যে থেকে তার দলকে পরিচালনা করে। পুলিশের সাথে মিলে গাইতোন্ডে অমর্তকে জেলে তার নিজের সেলে নিয়ে আসে এবং জেলের মধ্যে অমর্তকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু এবারও অমর্ত একা সবাইকে কুপোকাত করে ফেলে। এদিকে ভাউ (মাহেশ মাঞ্জেরেকার) যে কিনা মুম্বাইয়ের কিং বলে পরিচিত এবং গাইতোন্ডের সরাসরি প্রতিদ্বন্ধি। ভাউয়ের সহযোগীতায় অমর্ত জেল থেকে মুক্তি পায় এবং ভাউ অমর্তকে তার সাথে কাজ করতে বলে। ভাউ এবং অমর্ত একসাথে মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডে রাজত্ব কয়েক করতে সক্ষম হয়।
এরপর সিনেমার গল্প ১২ বছর এগিয়ে যায়। অর্জুন (প্রতীক বাব্বর) বড় হয়ে গেছে এবং অমর্ত তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে মুম্বাইয়ের বিশিষ্ট শিল্পপতি সুনীল খৈতান (সামির সোনি) নিজের কারখানার সকল কর্মীকে ছাটাই করে, কারখানা ভেঙে এই জায়গা বিক্রি করে দিতে চায়। এ কাজের জন্য সুনীল গাইতোন্ডেকে নিয়োগ করে কিন্তু ভাউ নিজের ভোট ব্যংক বাঁচাতে অমর্তকে কারখানাকে টিকিয়ে রাখতে নির্দেশ দেয়। অমর্ত সুনীলের সাথে দেখা করে কারখানা চালু রাখার জন্য হুমকি দেয়। সুনীল অমর্তের এই হুমকির কথা গাইতোন্ডেকে বললে গাইতোন্ডে অর্জুনকে হত্যার চেষ্টা করে। এতে ক্ষুব্ধ অমর্ত প্রকাশ্যে সুনীলকে গুলি করে হত্যা করে। সুনীলের স্ত্রী সোনালী (অঞ্জনা সুখানি) পুলিশ হেডকোয়ার্টারে গিয়ে ঘোষনা দেয় – যে পুলিশ অফিসার অমর্তকে হত্যা করবে তাকে ১০ কোটি রুপি পুরস্কার দেয়া হবে। বিজয় সাভারকার (ইমরান হাশমি) এতে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যেকোন মূল্যে এই ১০ কোটি সে জিতে নিবে। সিনেমার বাকি অংশ অমর্ত-বিজয়ের আঘাত-পাল্টাআঘাতের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায়।
চিত্রনাট্য এবং সংলাপঃ সঞ্জয় গুপ্ত এবং রবিন ভাটের চিত্রনাট্য প্রশংসার যোগ্য। চিত্রনাট্য এবং গল্পের মাঝে থ্রিল এবং টুইস্ট সিনেমাকে করেছে উপভোগ্য। পুরো সিনেমার চিত্র্যনাট্য জুড়ে সিনেমার মূল প্রেক্ষাপটকে প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখার পর্যাপ্ত উপাদান ছিলো। কিছু কিছু দৃশ্য আলাদা প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়া সঞ্জয় গুপ্তের সংলাপ (ভাইভাহ বিশালের সাথে যৌথভাবে) সিনেমাটিকে সবশ্রেণীর দর্শকদের মাঝে আবেদন তৈরী করতে সক্ষম।
তবে সিনেমাটির দ্বিতীয় অংশ কিছুটা কম আবেদনময়ী মনে হতে পারে। কিছু কিছু দৃশ্য প্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসংগিক ভাবে উঠে এসেছে। এছাড়া অমর্তের চরিত্রের উত্থান অনেক দ্রুতগতিতে চিত্রায়িত হয়েছে। আর সিনেমার ক্লাইমেক্সের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ সংলাপ। তবে চারিত্রিক ব্যাপ্তির দিক থেকে ইমরান হাশমির চরিত্রের প্রতি যথেষ্ঠ ন্যায় বিচার করা হয়নি।
পরিচালনাঃ গ্যাংষ্টার ভিত্তিক সিনেমার ক্ষেত্রে সঞ্জয় গুপ্তের একটি নিজস্ব ধারা রয়েছে। তার গল্প বলার ধরন এই প্রেক্ষাপটের সিনেমাকে আকর্ষণীয় করে তুলে। ‘মুম্বাই সাগা’ সিনেমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এই সিনেমায় তার নির্দেশনা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। গল্পকে ড্রামা এবং বিনোদনের অনেক উপাদান দিয়ে পর্দায় উপস্থিত করেছেন। প্রতিটি দৃশ্যে সবশ্রেণীর দর্শকদের জন্য সব উপাদান রেখেছেন সঞ্জয় গুপ্ত। তবে সিনেমাটির বেশ কিছু চরিত্রের পর্দা উপস্থিতি আরো বেশী রাখার সুযোগ ছিলো। এছাড়া ক্লাইমেক্স আরো তীক্ষ্ণ করার দরকার ছিলো।
অভিনয়ঃ অমর্ত রাও চরিত্রে জন আব্রাহাম মোটামুটি ভালো হলেও মনে রাখার মত অভিনয় করতে পারেননি। কিছু কিছু জায়গায় (বিশেষ করে রাগান্বিত হওয়ার দৃশ্য) তার অভিনয়কে কিছুটা অতিঅভিনয় মনে হতে পারে। তবে একশন দৃশ্যে জন আব্রাহাম বরাবরের মতই দুর্দান্ত ছিলেন।
বিজয় সাভারকার চরিত্রে ইমরান হাশমি ভালো অভিনয় করলেও তার চরিত্রটা কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। সিনেমার গল্পের চাহিদার অনুপাতে তার পর্দা উপস্থিতি বা গুরুত্ব কিছুটা কম দেখানো হয়েছে। বিজয়ের চরিত্রটির ব্যাপ্তি এবং গুরুত্ব দিয়ে দৃশ্যায়ন করলে সিনেমাটিতে ভালো প্রভাব ফেলতে পারতো।
কাজল আগারওয়ালের এই সিনেমায় কিছুই করার ছিলোনা। অমর্তের স্ত্রী ছাড়া তার চরিত্রের আর কোন বিশেষ্যত্ব ছিলোনা। একজন রাজনীতিবিদের চরিত্রে মাহেশ মাঞ্জেরেকার ছিলেন অসাধারন। সম্ভবত সিনেমার সবচেয়ে ভালো অভিনয়টা করেছেন মাহেশ মাঞ্জেরেকার।
মাহেশ মাঞ্জেরেকার ছাড়া আরো একজনের অভিনয় উল্লেখযোগ্য তা হলো অমল গুপ্ত। দর্শকদের বিনোদনের সবকিছুই ছিলো তার অভিনয়ে। প্রতীক বাব্বার, রোহিত রয় এবং সাদ রান্ধাও যার যার চরিত্রে ঠিকঠাক অভিনয় করেছেন। সুনীল শেঠী এবং গুলশান গ্রোভারকে ছোট দুইটি চরিত্রে দেখা গেছে।
চিত্রগ্রহন এবং সম্পাদনাঃ শিখর ভাটনাগার এর চিত্রগ্রহন ভালো ছিলো এবং প্রশংসার যোগ্য। কিছুকিছু দৃশ্যের চিত্রগ্রহন সঞ্জয় গুপ্তের পরিচালনাকে সাহায্য করেছে। বান্টি নাগি’র সম্পাদনা মোটামুটি ছিলো, দ্বিতীয় ভাগ আরো সংকূলিত করা জেত।
উপসংহারঃ সবশেষে ‘মুম্বাই সাগা’ এর সিনেমাটিক মূল্য অবশ্যই আছে – আপনি যদি গ্যাংষ্টার ভিত্তিক সিনেমার ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই এই সিনেমা দেখা উচিত। আর সঞ্জয় গুপ্তের নির্দেশনা আপনাকে হতাশ করবে না।
আরো পড়ুনঃ
দৃশ্যাম ২ রিভিউ: প্রথম সিনেমার উত্তেজনাকে ছাড়িয়ে গেলো মোহনলালের এই নতুন সিনেমা
প্রথমে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘মুম্বাই সাগা’: শীগ্রই ঘোষনা
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আসছে জন আব্রাহামের ‘অ্যাটাক’