চলচ্চিত্রের নামঃ কুলি নাম্বার ১ (২০২০)
মুক্তিঃ ডিসেম্বর ২৫, ২০২০ (আমাজন প্রাইম ভিডিও)
অভিনয়েঃ বরুন ধাওয়ান, সারা আলী খান, পারেশ রাওয়াল, জাভেদ জাফরী, রাজপাল ইয়াদব, জনি লিভার, সাহিল ভাইর এবং শিখা তালসানিয়া প্রমুখ।
পরিচালনাঃ ডেভিড ধাওয়ান
প্রযোজনাঃ ভাসু বাগনানি, জ্যাকি বাগনানি এবং দ্বীপশিখা দেশমুখ
পরিবেশনাঃ আমাজন প্রাইম ভিডিও
কাহিনীঃ ১৯৯৫ সালের কুলি নাম্বার ১
চিত্রনাট্যঃ রুমি জাফরী
সংলাপঃ ফরহাদ সামজি
সম্পাদনাঃ রিতেশ সোনি
চিত্রগ্রহনঃ রবি কে চন্দ্রান
সংগীতঃ সেলিম সোলায়মান
প্রারম্ভিক কথাঃ ১৯৯৫ সালে ডেভিড ধাওয়ান গোবিন্দকে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন বছরের অন্যতম সেরা সফল সিনেমা ‘কুলি নাম্বার ১’। ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি গোবিন্দের কমেডি অভিনয় সিনেমাটিকে দিয়েছে বলিউডের অন্যতম কাল্ট ক্লাসিক কমেডি’র তকমা। ডেভিড-গোবিন্দ জুটি একাধারে ২৭টি সিনেমা করেছেন যেগুলোর বেশিরভাগই ছিলো বক্স অফিস হিট। কিছুদিন আগে পরিচালক ডেভিড ধাওয়ান তার ছেলে বরুন ধাওয়ানকে নিয়ে পুনঃনির্মান করেছিলেন তার সিনেমা ‘জড়ুয়া’। বরুন ধাওয়ানের প্রাণবন্ত অভিনয় দিয়ে সিনেমাটির ব্যাসায়িক সফলতা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি পুনঃনির্মান করলেন সেই ক্লাসিক ‘কুলি নাম্বার ১’। তাহলে কেমন হলো ডেভিড ধাওয়ানের নিজের সিনেমার পুনঃনির্মান? বরুন ধাওয়ান কি পেরেছেন গোবিন্দের মত দর্শকদের বিনোদিত করতে? চলুন তাহলে বিস্তারিত পর্যালোচনায়।
কাহিনী সংক্ষেপঃ রাজু (বরুন ধাওয়ান) নাম একজন কুলি ঘটনাক্রমে ছবি দেখেই মালতি (সারা আলী খান) এর প্রেমে পরে যায়। মালতির বাবা হুশিয়ার চান্দ (পারেশ রাওয়াল) কর্তৃক অপমানিত পন্ডিত শাদিরাম ঘরজোরে (জাবেদ জাফরী) রাজুকে প্রতিশ্রুতি দেন যে মালতির সাথে তিনি রাজুর বিয়ে করিয়ে দিবেন। উচ্চাবিলাসী হুশিয়ার চান্দকে অপমানের শিক্ষা দিতে শাদিরাম ঘরজোরে একটি পরিকল্পনা করে। মালতির সাথে রাজুর বিয়ের জন্য রাজুকে কুমার রাজ প্রতাপ সিং সাজিয়ে মালতির পরিবারের কাছে উপস্থাপন করে।
রাজু তার উপস্থিত বুদ্ধি এবং শাদিরাম ঘরজোরের সহায়তায় নিজেকে বড় এক ব্যবসায়ীর ছেলে হিসেবে বিশ্বযোগ্য করে তোলে। সেই সাথে নিজের চার্ম এবং ব্যক্তিত্ব দিয়ে মালতিকেও রাজি করতে সক্ষম হয়। এদিকে হুশিয়ার চান্দ রাজুর সম্পত্তির কথা শুনে নিজের মেয়েকে রাজুর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে হুশিয়ার চান্দ জানতে পারে যে রাজু আসলে কোন ব্যবসায়ীর ছেলে না সে একজন কুলি। এই সত্য জানার পর কি হয় রাজু-মালতির সংসারের? হুশিয়ার চান্দ কি নিজের ভুলের কোন মাশুল দিতে পারে? মালতি কি কুলি রাজুকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নেয়? গল্পের বাকি অংশ আসলে এই অন্তঃদ্বন্দ্যের সাথে হাস্যরসের সমন্বয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
চিত্রনাট্য এবং সংলাপঃ ১৯৯৫ সালের ওরিজিনাল ‘কুলি নাম্বার ১’ – এর মত এই সিনেমার চিত্রনাট্যও আছেন রুমি জাফারি। বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করে চিত্রনাট্যতে কিছুটা পরিমার্জন করলেও সেটা যথেষ্ট ছিলোনা। ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি সিনেমায় কথা বলার জন্য কোন মোবাইল বা টেলিফোন নেই, ড্রাইভারের পোশাক পরিহিত একজনকে প্ল্যাম্বার হিসেবে ভুল বোঝা! এরকম অসংখ্য ভূল সিনেমাকে করেছে অযৌক্তিক আর দর্শকদের করছে বিরক্ত। একটি পরিপূর্ন চিত্রনাট্যকে যখন আপনি পরিবর্তনের চিন্তা করছেন তখন সেটা অবশ্যই যথেষ্ট পর্যালোচনার দাবি রাখে। এই সিনেমার ক্ষেত্রে রুমি জাফরী সম্ভবত সেই জায়গাটা মিস করে গেছেন।
সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে আরো একবার খারাপ কাজের সাক্ষর রেখে গেছেন ফরহাদ সামজি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরহাদের সংলাপ ছাড়াই মনে হচ্ছিলো দৃশ্যটি আরো ভালো হত। সাম্প্রতিক সময়ে তার সংলাপ এতটাই নিম্নমানের হচ্ছে যে সেগুলো নিয়ে একটা বই রচনা করা সম্ভব এবং সেই বইয়ের নাম হবে ‘৫০টি মজার সংলাপ যেগুলোতে কোন মজা নেই’। এই সিনেমার ক্ষেত্রেও নিজের খারাপ সংলাপের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন ফরহাদ।
পরিচালনাঃ ডেভিড ধাওয়ান বলিউডের অন্যতম সফল একজন নির্মাতা, বিশেষ করে কমেডি সিনেমা নির্মানে তার বিকল্প মেলা কঠিন। বরুন ধাওয়ানকে নিয়ে ‘রিমেক’ ফর্মুলা অতীতে এই বাবা-ছেলে জুটিকে সফলতা দিতে পারলেও ‘কুলি নাম্বার ১’ নিঃসন্দেহে তাদের নতুন করে ভাববে। ওরিজিনাল সিনেমাটিতে ডেভিড ধাওয়ানের যে মুন্সিয়ানা ছিলো তা এখানে অনুপস্থিত। আর যাই কিছু কিছু জায়গায় ডেভিড নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন এই অসময়ের গল্প সেসব জায়গায় ডেভিড দর্শকদের ভালো কিছু উপহার দিতে পারেননি।
অভিনয়ঃ এই সিনেমার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আপনি আসল (গোবিন্দ) কুলিকে কোখনই নিজের চিন্তা থেকে আড়াল করতে পারবেন না। এই রিমেকে, বিশেষ করে বরুন ধাওয়ানের পর্দা উপস্থিতিতে ঘুরেফিরে এসেছেন গোবিন্দ। আর সিনেমাটিতে বরুন ধাওয়ান কমেডি অভিনেতা হিসেবে নিজের ইমেজের সুবিচার করতে পারেননি। গোবিন্দকে অন্ধ অনুসরণ তার সহজাত অভিনয় দক্ষতাকে ব্যাহত করেছে। দেখা গেছে জেসন দৃশ্যে গোবিন্দ না হয়ে বরুন বরুনের মত অভিনয় করেছেন সেসব দৃশ্য বেশ উপভোগ্য ছিলো।
প্রথম দুইটা সিনেমাতে মাননসই অভিনয় করলেও পরবর্তীতে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোতে তার অভিনয় ছিলো একঘেয়ে এবং বিরক্তিকর অভিব্যক্তিতে পরিপূর্ন। পর্দায় তার সৌন্দর্য ছাড়া দর্শকদের কাছে সারা আলী খানের আলাদা কোন আবেদন ছিলো বলে মনে হয়না। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয়কারী অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাই যার যার চরিত্রে মাননসই ছিলেন। তবে পারেশ রাওয়ালের অভিনয় আর কমিক টাইমিং দর্শকদের আনন্দিত করবে।
উপসংহারঃ উপসংহারে শুরু এইটাই বলতে পারি, আরো একটি ক্লাসিক সিনেমাকে রিমেকের নাম করে অপমান করা হয়েছে এই সিনেমার মাধ্যমে। সামনের দিনগুলোতে যদি আরো অনেকগুলো ‘কুলি নাম্বার ১’ রিমেক হয়, তাহলেও এই সিনেমা দ্বিতীয় সেরা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। দুর্বল চিত্রনাট্য, ফরহাদ সামজির বিরক্তিকর সংলাপ এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়কারী পাত্র-পাত্রীদের অতি-অভিনয় পুরো সিনেমাকে করেছে অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক। নষ্ট করার মত যথেষ্ট সময় এবং ধৈর্য যদি আপনার থাকে তাহলে দেখতে পারেন এই সিনেমা।