চলচ্চিত্রের নামঃ আর্মি অফ দ্যা ডেড (২০২১)
মুক্তিঃ মে ২১, ২০২১
অভিনয়েঃ ডেব বাতিস্তা, এলা পারনেল, ওমারি হার্ডিউক, আনা দে লা রেগুরা, নোরা আর্নেযেদার, হিরোউকি সানাদা, টিগ নোটারো, হুমা কুরেশি এবং গারেট দিল্লাহান্ট প্রমুখ।
পরিচালনাঃ জ্যাক স্নাইডার
প্রযোজনাঃ জ্যাক স্নাইডার, দেবর্থ স্নাইডার এবং এসলে কোলার
পরিবেশনাঃ নেটফ্লিক্স (ওটিটি)
কাহিনীঃ জ্যাক স্নাইডার
চিত্রনাট্যঃ জ্যাক স্নাইডার, সাই হাট্টেন এবং জবি হ্যারল্ড
সম্পাদনাঃ ডডি ডর্ন
চিত্রগ্রহনঃ জ্যাক স্নাইডার
সংগীতঃ টম হলকেনবর্গ
প্রারম্ভিক কথাঃ হলিউডে জম্বি ভিত্তিক সিনেমা নতুন কিছু নয়। অনেক বড় বড় নির্মাতা অনেক বড় বড় তারকাদের নিয়ে জম্বি সিনেমা নির্মান করেছেন। তবে জ্যাক স্নাইডার যখন ঘোষনা দিলেন জম্বি ভিত্তিক সিনেমার তখন সবার প্রত্যাশাও ছিলো অন্য রকম। কারন যারা নিয়মিত হলিউড সিনেমা দেখেন তারা জানেন জ্যাক স্নাইডারের গল্প বলার ধরনের মধ্যে একটা ভিন্নতা আছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত জম্বি ভিত্তিক সিনেমা ‘আর্মি অফ দ্যা ডেড’ এর প্রতিও দর্শকদের প্রত্যাশা ছিলো অন্যরকম। আজকের রিভিউতে থাকছে সিনেমাটির প্রতি দর্শকদের প্রত্যাশার বিস্তারিত আলোচনা।
কাহিনী সংক্ষেপঃ সিনেমার শুরুতে দেখা যায় আর্মি সুরক্ষিত এলাকা থেকে একটি কার্গো নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় আর্মির গাড়িটি। সেই কার্গোতে কি ছিলো তা বহনকারী আর্মি সেনাদের জানা ছিলো না। আসলে সেই কার্গোতে একটি জম্বি বহন করা হচ্ছিলো। দুর্ঘটানার পর কার্গোতে রাখা জম্বি মুক্ত হয়ে যায় এবং সেই বহরের সব আর্মিকে মেরে ফেলে যারা পরবর্তিতে জম্বিতে পরিনত হয়। ধীরে ধীরে এই জম্বিদের আক্রমণে পুরো লাস ভেগাস জম্বি শহরে পরিনত হয়। এই পরিস্থিতিতে জম্বির বিস্তার ঠেকাতে সরকার লাস ভেগাসকে পরিত্যক্ত শহর হিসেবে ঘোষনা করে এবং লাস ভেগাসের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে একটি সুরক্ষা প্রাচীর তৈরি করে। আর এই সুরক্ষা প্রাচীরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয় আর্মিকে।
এদিকে লাস ভেগাসে অবস্থিত একটি ক্যাসিনোর মালিক ব্লাই তানাকা (হিরোউকি সানাদা) জম্বিদের আক্রমণের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া স্কট ওয়ার্ড (ডেব বাতিস্তা) এর সাথে দেখা করে। লাস ভেগাসে সেই ক্যাসিনোর ভোল্টে থাকা ২০০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারের জন্য ব্লাই তানাকা স্কট ওয়ার্ড এবং তার দলকে নিয়োগ দিতে চায়। এ জন্য স্কট ওয়ার্ড এবং তার দল পাবে ৫০ মিলিয়ন ডলার। ব্লাই তানাকার এই লোভনীয় প্রস্তাবে রাজী হয়ে স্কট ওয়ার্ড তার দল তৈরি করে যার মধ্যে রয়েছে তার আগের সহযোদ্ধা, একজন পাইলট, একজন ভোল্ট স্পেশালিষ্ট এবং তার নিজের মেয়ে। কথা মত, ক্যাসিনোর ভোল্টে থাকা সেই টাকা উদ্ধারের জন্য জম্বিল্যান্ডে প্রবেশ করে এই দল। জম্বিল্যান্ডে তাদের মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন ধরনের জম্বিদের সাথে। তারা কি পারবে তাদের সেই মিশনে সফল হতে? জম্বিল্যান্ডে কেমন জম্বির সাথে লড়তে হবে তাদের? সবাই কি পারবে জীবিত ফিরে আসতে? তাই যদি না হয় তাহলে টাকার লোভে কতজনকে জীবন দিতে হবে জম্বিদের হাতে? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগিয়ে যায় সিনেমার গল্প।
গল্প এবং চিত্রনাট্যঃ ‘আর্মি অফ দ্যা ডেড’ সিনেমার গল্প লিখেছেন পরিচালক জ্যাক স্নাইডার নিজেই। জ্যাক স্নাইডারের গল্পে ভিন্নতার যে প্রত্যাশা ছিলো সেটা পূরণ করতে পেরেছেন তিনি। অন্য সাধারণ জম্বি সিনেমা থেকে অনেকগুলো দিক থেকে আলাদা জ্যাক স্নাইডারের জম্বি। কাহিনীতে এক আলাদা ধরনের জম্বির কথা বলে হয়েছে – আলফা জম্বি। এই বিশেষ ধরনের জম্বিরা সাধারণ জম্বি থেকে অনেক দ্রুত গতিতে চলতে পারে, এর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন এবং আরো বেশী হিংস্র। এছাড়াও জ্যাক স্নাইডার দেখিয়েছেন জম্বিদের কিংডম বা রাজ্য, যেখানে জম্বিদের রাজা এবং রানীও দেখানো হয়েছে। রাজার নির্দেশে জাপিয়ে পরার মত জম্বি আর্মি, জম্বি ঘোড়া এবং জম্বি বাঘও দেখা গেছে জ্যাক স্নাইডারের গল্পে। আছে জম্বিদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্কের উপস্থাপনা।
জ্যাক স্নাইডারের সাথে যৌথভাবে সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন সাই হাট্টেন এবং জবি হ্যারল্ড। জম্বি নির্ভর অন্যান্য সিনেমা থেকে এই সিনেমাকে আলাদা করতে গল্পকে যততুকু সমর্থন করার কথা ঠিক ততটুকুই করেছে এর চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্যে নিজেদের অসাধারণ মেধার প্রদর্শনী দিয়ে সিনেমাটিকে করেছেন আরো অনন্য। পরিত্যাক্ত একটি শহরকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা থেকে শুরু করে আলফা জম্বিদের গতিবিধি সবকিছুতে অসাধারণ ভিন্নতার ছাপ ছিলো। সিনেমাটির কিছু কিছু অংশ আপনাকে ম্যাড ম্যাক্স এর কথা মনে করিয়ে দিবে।
পরিচালনাঃ ‘জাস্টিস লীগ’ সিনেমার পর ‘আর্মি অফ দ্যা ডেড’ পরিচালক জ্যাক স্নাইডারের জন্য সময়োপযোগী একটি পছন্দ বলা যায়। দুর্দান্ত একশন সিনেমা নির্মান করলেও জম্বি নিয়ে এই পরিচালকের এটিই প্রথম কাজ। জম্বিদের গতানুগতিক বিষয়কে নিয়েও তার নির্মানে ছিলো নিজস্বতা। আলফা নামে নতুন জম্বিদের নিয়ে আসা, জম্বিদের নিজস্ব রাজ্য, জম্বি বাঘ – এই বিষয়গুলোতে রয়েছে জ্যাক স্নাইডারের নির্দেশনার ঝলক। এছাড়া ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে জম্বিকে নিয়ে নতুন দেশ ভ্রমনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন স্নাইডার। তবে কিছু কিছু চরিত্রকে আরো গুরুত্ব দেয়ার সুযোগ ছিলো বলে মনে হয়েছে।
অভিনয়ঃ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেব বাতিস্তা। সিনেমাতে তার অভিনয়ে একধরনের আলস্য কাজ করেছে। বিশাল দেহের অধিকারী ডেব বাতিস্তা সিনেমাতে অনেকটা ডোয়ান জনসন, ভিন ডিজেল অথবা জেসন স্টেথামের মত হলেও তার অভিনয়ে সেই আভিজাত্য ছিলো না। ২০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প নিয়ে তার মধ্যে কোন উত্তেজনা দেখা যায়নি। তবে স্কটের মেয়ের চরিত্রে এলা পারনেল যতেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন। চরিত্রে নিজের আবেগ এবং সম্পর্কের নির্মতা সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে তার অভিনয়ে।
এছাড়া সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে অভিনয়কৃত শিল্পীরা নিজেদের চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন। তবে জম্বিদের সাথে লড়াইয়ে যে ভয় এবং অনিশ্চয়তা থাকার কথা ছিলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারকাদের অভিনয়ে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ছোট চরিত্র হলেও হুমা কুরেশি নিজের জায়গায় ভালো অভিনয় করেছেন। কিন্তু চরিত্র ছোট হওয়ার কারনে হুমার তেমন কিছু করার ছিলো না।
চিত্রগ্রহন এবং সম্পাদনাঃ পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমাটির চিত্রগ্রহনের দায়িত্বেও ছিলেন জ্যাক স্নাইডার। নিজের গল্পকে পর্দায় নিজের মত করে ফুটিয়ে তুলতে নিজের অন্যতম সেরা কাজটাই করছেন জ্যাক স্নাইডার। জ্যাক স্নাইডারের চিত্রগ্রহন সিনেমাটির বিভিন্ন দৃশ্যকে আকর্ষনীয়। অন্যদিকে সিনেমাটির সম্পদনার দায়িত্বে আছেন জ্যাক স্নাইডারের ‘জাস্টিস লীগ’ সিনেমার সম্পাদকদের একজন ডডি ডর্ন। আগের সিনেমার মত এই সিনেমাতেও হতাশ করেননি এই সম্পাদক।
উপসংহারঃ নতুন এবং পুরাতন অনেক কিছুর সমন্বয়ে উপভোগ্য একটি সিনেমা নির্মান করেছেন জ্যাক স্নাইডার। অসাধারণ স্পেশাল ইফেক্টের সাথে ভিন্ন ধারার গল্পের উপস্থাপনা জম্বি ভিত্তিক সিনেমাটিকে করেছে আরো আকর্ষনীয়। নতুন ধরনের জম্বি অভিজ্ঞতা পেতে দেখতে পারেন জ্যাক স্নাইডারের জম্বি অভিযান ‘আর্মি অফ দ্যা ডেড’।
আরো পড়ুনঃ
‘ওয়ান্ডার ওমেন ১৯৮৪’ রিভিউ: একটি সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা
টেনেট রিভিউঃ মগজের খেলার একটি পরিপূর্ন উপস্থাপন