আয়ের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি হলিউড। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ডেডলাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী হলিউডের সিনেমার মোট ব্যবসা ছিলো ৪২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যাকিনা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। এর মধ্যে নর্থ আমেরিকায় সিনেমার টিকেট বিক্রি থেকে আয় ছিলো ১১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বিশ্বের বাকি অংশ থেকে আয়ের পরিমান ছিলো ৩১.১ বিলিয়ন ডলার। এদিকে করোনা মহামারীর কারনে ২০২০ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হলিউডে চলছে স্থবিরতা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড ভ্যাকসিন রোলআউটের প্রেক্ষিতে হলিউড আশাবাদী যে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ফিরিয়ে আনবে মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলো।
বর্তমানে হলিউডের মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্ভেল,ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্স, জেমস বন্ড, ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস এবং ওয়ার্নার ব্রোসের মতো শীর্ষস্থানীয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির নতুন সিনেমা। আলোচিত এবং জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির সিনেমা কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসকে শক্তিশালী করেছে। নতুন করে সিনেমাগুলির মুক্তি প্রেক্ষাগৃহে টিকিট বিক্রি পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
মহামারী পরবর্তী নতুন সময়ে হলিউডের সিনেমা মুক্তির প্রেক্ষিতে সবচেয়ে শক্তিশালী সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছে আলোচিত ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমা। আলোচিত এই ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক আয়ের ফ্রাঞ্চাইজি নিয়ে আজকের এই লিখা। হলিউডের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে এই তালিকা। এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত আয়ের পরিমান আমেরিকান ডলারে বোঝানো হয়েছে।
১৩। পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ান – ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার
২০০৩ সালে ‘কার্স অফ দ্যা ব্ল্যাক পার্ল’ সিনেমার পর এই সিরিজের মোট পাঁচটি সিনেমা মুক্তি দিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডিজনি। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমাগুলো এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে আয় করেছে ৪.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আমেরিকা এবং কানাডার বাইরে আয় করেছেন ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শোনা যাচ্ছে এই সিরিজের ষষ্ঠ সিনেমা নির্মানের পরিকল্পনা করছে ডিজনি।
১২। ট্রান্সফর্মার – ৪.৮৬ বিলিয়ন ডলার
মাইক্যাল বে পরিচালিত ‘ট্রান্সফর্মার’ সিরিজের প্রথম সিনেমা মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। প্রথম সিনেমা মুক্তির পর এই ফ্রাঞ্চাইজিটি প্যারামাউন্ট এর জন্য অন্যতম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফ্রাঞ্চাইজির মোট ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এবং বক্স অফিসে আয়ের পরিমান ৪.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আমেরিকা এবং কানাডার বাইরে আয় করেছেন ৩.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১১। ব্যাটম্যান – ৪.৯০ বিলিয়ন ডলার
ডিসি ইউনিভার্সের অন্যতম জনপ্রিয় সুপারহিরো চরিত্র ব্যাটম্যান নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলোর মোট আয়ের পরিমান প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাইক্যাল কেতন, ভাল কিলমার, জর্জ ক্লুনি, ক্রিস্টিয়ান বেল, বেন এফ্লেক এবং রবার্ট পাটিসন সবাইকে বড় পর্দায় দেখা গেছে এই চরিত্রে। উল্লেখ্য যে, ব্যাটম্যান ফ্রাঞ্চাইজির এই আয়ের হিসেবে ‘জাস্টিস লীগ’ সিনেমার আয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে এখানে ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডাউন অফ জাষ্টিস’ সিনেমার আয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১০। জুরাসিক পার্ক – ৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার
এই সিরিজের মাত্র ৫টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এখন পর্যন্ত। আর পাঁচ সিনেমার মোট বক্স অফিস আয়ের পরিমান ৪.৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সবকিছু ঠিক থাকলে এই ফ্রাঞ্চাইজির ষষ্ঠ সিনেমা মুক্তি পাবে ২০২২ সালে। ১৯৯৩ এবং ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিরিজের প্রথম তিনটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন স্যাম নেইল, লরা ডার্ন এবং জেফ গোল্ডব্লুম। আর সিনেমাটির ট্রিলজি মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৫ সালে।
০৯। ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্স – ৫.৬ বিলিয়ন ডলার
মার্ভেল ফিল্মস দিয়ে ডিজনির সফলতার প্রথম জবাব নিয়ে ডিসি দর্শকদের সামনে আসে ২০১৩ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যান অফ স্টীল’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর বিগত সাত বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে এই ফ্যাঞ্চাইজির মোট ৯টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। আর বক্স অফিসে এই সিনেমাগুলোর মোট আয়ের পরিমান ৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এই সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘জোকার’ সিনেমাটি অন্তর্ভুক্ত নয়। এই ফ্রাঞ্চাইজির যে সিনেমাগুলো সামনে আসতে পারে তার মধ্যে ‘দ্যা সুইসাইড স্কোয়াড’, ‘ফ্ল্যাশ’, ‘একুয়াম্যান ২’, ‘সাজাম’ এবং ‘ব্ল্যাক এডাম’ উল্লেখযোগ্য।
০৮। মিডল আর্থ – ৫.৮৬ বিলিয়ন ডলার
জে. আর. আর. টোলকিয়েন এর লিখা অবলম্বনে ‘মিডল আর্থ’ ফ্রাঞ্চাইজির মোট ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে আছে ‘দ্যা লর্ড অফ দ্যা রিংস’ ট্রিলজি এবং ‘দ্যা হবিট’ ট্রিলজি। বক্স অফিসে এই ছয়টি সিনেমার মোট আয়ের পরিমান ৫.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এই ফ্রাঞ্চাইজির নতুন কোন সিনেমার খবর সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া যায়নি।
০৭। দ্যা ফাষ্ট এন্ড দ্যা ফিউরিয়াস – ৫.৯ বিলিয়ন ডলার
দুর্দান্ত স্টান্ট এবং একশনে ভরপুর সিনেমাটির এখন পর্যন্ত মোট ৯টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে আর এই সিরিজের দশম সিনেমাটি চলতি বছরে মুক্তির কথা রয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো থেকে মোট আয়ের পরিমান প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফ্রাঞ্চাইজিটির মোট আয়ের মধ্যে আনুমানিক ৪.২ মার্কিন ডলার আয় করেছে আমেরিকা এবং কানাডার বাইরের বাজার থেকে। মুক্তি প্রাপ্ত নয়টি সিনেমার মধ্যে ফাষ্ট সাগার অন্তর্ভুক্ত মোট ৮টি আর স্পিন-অফ হিসেবে মুক্তি পেয়েছে একটি সিনেমা।
০৬। এক্স-ম্যান – ৬.০৩ বিলিয়ন ডলার
২০০০ সালে শুরুর পর এক্স-ম্যান ফ্রাঞ্চাইজির মোট ১৩টি সিনেমা মুক্তি দিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফক্স। মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো থেকে মোট আয় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটু বেশী। এই ফ্রাঞ্চাইজিটি মার্বেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের অন্যান্য কমিক চরিত্র থেকে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।মার্বেলের এমসিইউ এবং ফক্সের এক্স-ম্যান চরিত্রগুলোর মধ্যে কোন ক্রসওভার দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
০৫। স্পাইডার ম্যান – ৬.৩৫ বিলিয়ন ডলার
ব্যাটম্যানের মত স্পাইডার ম্যানও একটি আলাদা ফ্রাঞ্চাইজি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ফ্রাঞ্চাইজির এখন পর্যন্ত মোট ৭টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। আর বক্স অফিসে এই সিনেমাগুলোর মোট আয়ের পরিমান ৬.৩৫ মার্কিন ডলার। টবে মকগুইরে, এন্ড্রু গারফিল্ড এবং টম হল্যান্ড এখন পর্যন্ত স্পাইডার ম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এখানে সেই সিনেমাগুলোর আয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেগুলোতে স্পাইডার ম্যান প্রধান চরিত্র ছিলেন।
০৪। জেমস বন্ড – ৬.৮৯ বিলিয়ন ডলার
পৃথিবীর সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে চলা ফ্রাঞ্চাইজি চরিত্র জেমস বন্ড। ১৯৬৩ সালে প্রথম সিনেমার মুক্তির পর এখন পর্যন্ত ২৪টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে আর ২৫তম ‘নো টাইম টু ডাই’ সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এই সিরিজের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো থেকে বক্স অফিসের মোট আয়ের পরিমান ৬.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন পর্যন্ত এজেন্ট ০০৭ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শেন কানেরি, ডেভিড নিভেন, জর্জ লাজিনবি, রোগার মুর, টিমথিয় ডাল্টন, পিয়ার্স ব্রসনান এবং ডেনিয়েল ক্রেগ।
০৩। দ্যা উইজারডিং ওয়ার্ল্ড – ৯.১৮ বিলিয়ন ডলার
হ্যারি পোর্টার ফ্রাঞ্চাইজিটি হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় এবং নন্দিত সিনেমার সিরিজ। হ্যারি পোর্টার চরিত্রকে ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে মোট ৮টি সিনেমা। এই সময়ে ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস নামে এই ফ্রাঞ্চাইজির আরো একটি সিরিজ শুরু করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রোস। এই ফ্রাঞ্চাইজির মোট ১০টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এবং মোট আয়ের পরিমান ৯.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস সিরিজের আরো তিনটি সিনেমা সামনে মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে।
০২। ষ্টার ওয়ার্স – ১০.২ বিলিয়ন ডলার
১৯৭০ সালে একটি কাল্পনিক প্রজন্মের গল্প নিয়ে শুরু হয়েছিলো ষ্টার ওয়ার্স। এরপর এখন পর্যন্ত এই সিরিজের সিনেমাগুলো বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে বিভিন্ন সময়ে। এই ফ্রাঞ্চাইজির এখন পর্যন্ত মোট ১২টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এরমধ্যে ৯টি সিনেমা স্কাইওয়াকার সাগার অন্তর্ভুক্ত আর দুইটি সিনেমা স্পিন-অফ হিসেবে মুক্তি পেয়েছে। এর বাইরে এই ফ্রাঞ্চাইজির একটি এনিমেশন সিনেমা রয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত ১২টি সিনেমা থেকে বক্স অফিস আয়ের পরিমান ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
০১। দ্যা মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স – ২২.৫৯ বিলিয়ন ডলার
১২ বছরে মোট ২৩টি সিনেমার মাধ্যমে পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক এবং জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি দ্যা মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স। ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত এই ফ্রাঞ্চাইজির মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো থেকে মোট আয়ের পরিমান ২২.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিছুদিন আগেও এই ফ্রাঞ্চাইজির সিনেমা ‘এভেন্জার্স:এন্ড গেম’ সর্বকালের সবচেয়ে বেশি আয়ের সিনেমার তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলো।গুঞ্জন অনুযায়ী আগামী ৫ বছরে এই ফ্রাঞ্চাইজির আরো ১২টির মত সিনেমা মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের।
বিঃদ্রঃ অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে বক্স অফিসের হিসেবের কথা বলা হয়েছে। মোট আয়ে হিসেবে কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
হলিউড ২০২১: নতুন বছরে বক্স অফিস মাতাতে পারে যে সিনেমাগুলো