শাহরুখ খানের যে ছয়টি সিনেমা জীবন সম্পর্কে আমাদের আশাবাদী করে!

শাহরুখ খানের যে ছয়টি

শাহরুখ খানের যে ছয়টি

বলিউডে কিং অফ রোমান্স শাহরুখ খান। সাধারণত রোম্যান্টিক সিনেমায় তার অনবদ্য অভিনয় এবং নায়িকাদের সাথে পর্দা রসায়নের কারনে তিনি এই পরিচয়ে পরিচিত। এর বাইরে তাকে ‘বলিউড বাদশা’, ‘বক্স অফিস কিং’ এবং ‘কিং খান’ নামের ডাকেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই তারকা সম্ভবত তার তারকা জীবনের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সিনেমার ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর ছেলে আরিয়ান খানের মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতায় ব্যাক্তিগতভাবেও হতাশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। সুপারস্টার হওয়ার পর থেকে এই প্রথম নিজের জন্মদিনে ভক্তদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য তাকে দেখা যায়নি মান্নাতের বেলকনিতে। দুই হাত প্রসারিত করে ভক্তদের ভালোবাসার জবাব দেয়ার সেই পরিচিত দৃশ্য দেখতে না পাওয়াটা নিঃসন্দেহে হতাশ করেছে তার কোটি ভক্তকে। এই সময়ের বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের যে ছয়টি সিনেমা জীবন সম্পর্কে আমাদের আশাবাদী করেছে, সেগুলো নিয়ে একটু কথা বলবো এই লিখায়।

১। বীর-জারা
যশ রাজ ফিল্মসের রোম্যান্টিক ড্রামা সিনেমাটি আজ এত বছর পরও আপনাকে কাঁদানোর ক্ষমতা রাখে। ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটিতে শাহরুখ খানের অভিনয় তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়গুলোর একটি। এই সিনেমাটি আপনাকে শেষ পর্যন্ত নিজের আশা বাঁচিয়ে রাখা শেখাবে। দুইজন মানুষের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা কিভাবে তাদের নিজস্ব পরিসরে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে সেটাই উঠে এসেছে এই সিনেমায়। শাহরুখ খান ছাড়াও সিনেমাটির প্রতিটি চরিত্র ছিলো চিন্তাকে প্রভাবিত করতে পারার মত শক্তিশালী। কিরন খের, রানী মুখার্জি এবং প্রীতি জিনতা সবাই ছিলেন যার যার চরিত্রে অনবদ্য। আদিত্য চোপড়ার গল্প এবং চিত্রনাট্যে সাথে যশ চোপড়ার পরিচালনা চরিত্রগুলোকে করেছে অনেক বেশী জীবন্ত। এছাড়া সিনেমাটির গানগুলোও ছিলো কালজয়ী এবং মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার মত।

শাহরুখ খানের যে ছয়টি

২। মাই নেম ইজ খান
বলিউডের সর্বকালের সেরা রোম্যান্টিক জুটি শাহরুখ খান এবং কাজলকে নিয়ে করন জোহর নির্মান করেন ‘মাই নেম ইজ খান’। করন জোহরের অন্যান্য সিনেমা থেকে এই সিনেমাটি বিভিন্নভাবে আলাদা। সিনেমাটিতে শাহরুখ খান অভিনীত চরিত্রের নাম রিজওয়ান খান, যে কিনা এস্পারগার সিনড্রোমে রোগী। সে মন্দিরা (কাজল) একজন সিঙ্গল মায়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর পাল্টে যায় এই দম্প্রতি জীবন। মুসলমান হওয়ার কারনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের রোষানলে মারা যায় কাজলের ছেলে। তার ছেলের মৃত্যুর জন্য কাজল শাহরুখ খান এবং তার মুসলমান হওয়াকে দায়ী করে। এই প্রেক্ষিতে রিজওয়ান খান শপথ করে যে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করে মুসলমান মানেই যে সন্ত্রাসী নয় সেটা বলতে চায়। পুরো সিনেমাজুরে অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে নিজের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয় রিজওয়ান। নিঃসন্দেহে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম একটি মাস্টারপিস সিনেমা হয়ে থাকবে ‘মাই নেম ইজ খান’।

শাহরুখ খানের যে ছয়টি

৩। স্বদেশ
শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারের অন্যতম প্রশংসিত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আশুতোষ গোয়ারিকর। ভারতের এনআরআই অরবিন্দ পিল্লালামরি এবং রবি কুচিমাঞ্চি দম্পতির জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এই দম্পতি ভারতের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে আলোর ব্যবস্থা করতে পাওয়ার জেনারেটর তৈরির জন্য দেশে ফিরে আসেন। মোহান চরিত্রে শাহরুখ খান সিনেমাটিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। নিজের দেশ এবং দেশের মানুষের প্রয়োজনে বিলাসবহুল জীবনে পিছনে ফেলে নতুন কিছুর জন্য নিজেকে নিবেদিত করতে অনুপ্রাণিত করবে বলিউডের এই কাল্ট ক্ল্যাসিক সিনেমাটি। যদিও বক্স অফিসে সিনেমাটি ব্যার্থ হয়েছিলো এখন পর্যন্ত শাহরুখ খানের সেরা সিনেমার তালিকায় প্রথমদিকেই থাকবে ‘স্বদেশ’।

৪। কাল হো না হো
ধর্ম প্রডাকশন্সের অন্যতম সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘কাল হো না হো’। ট্র্যাজিক রোম্যান্টিক গল্পের এই সিনেমাটিতে শাহরুখ খানের সাথে আরো অভিনয় করেছেন প্রীতি জিনতা এবং সাইফ আলী খান। সিনেমাটিতে শাহরুখ খানের প্রথম দৃশ্য থেকে শুরু করে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ছিলো প্রাণবন্ত এবং উচ্ছ্বাসে ভরপুর। আমান চরিত্রে শাহরুখ খান আরো একবার দেখিয়ে দিয়েছেন কেনো তিনি কিং অফ রোমান্স। মৃত্যু পথযাত্রী একজন মানুষ কিভাবে অন্যকে খুশি রাখতে নিজেকে উজার করে দিতে পারে সেই শিক্ষাই আমরা পাই সিনেমাটি থেকে। আশা-নিরাশার দোলাচলে জীবন্ত একটি চরিত্রের রূপকার হিসেবে পর্দায় আবির্ভুত হয়েছিলেন বলিউড বাদশা। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, পরিবার এবং জীবন – সব মিলিয়ে বলিউডের অন্যতম ক্ল্যাসিক একটি সিনেমা হয়ে থাকবে ‘কাল হো না হো’।

শাহরুখ খানের যে ছয়টি

৫। ডিয়ার জিন্দেগী
‘ডিয়ার জিন্দেগী’ সিনেমাটি সে অর্থে শাহরুখ খানের সিনেমা নয়। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন আলিয়া ভাট। আর শাহরুখ খান অভিনয় করেছেন এক্সটেন্ডেড ক্যামিও চরিত্রে। সিনেমাটিতে শাহরুখ খানকে দেখা গেছে একজন মনোবিজ্ঞানী চরিত্রে। আলিয়া ভাট পার পেশাদারী এবং ব্যাক্তিগত জীবনের জটিলতা নিয়ে শাহরুখ খানের কাছে গেলে শাহরুখ খান আলিয়াকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করেন। বিভিন্ন থেরাপি এবং কথার মাধ্যমে তিনি আলিয়া ভাটকে সাহায্য করেন যা নতুন প্রজন্মের অনেকের জন্য শিক্ষণীয়। গৌরী সিন্দে পরিচালিত সিনেমাটি শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারের অন্যতম ভালো কাজ হিসেবে দর্শকদের মনে থাকবে অনেক দিন। জীবনে সব ক্ষেত্রে ব্যার্থতা, পরিবারের মানুষদের সাথে মনাসিক দূরত্ব সবকিছু মিলিয়ে হতাশায় ডুবতে থাকা জীবনকে নতুন করে আশার আলো দেখাবে এই সিনেমাটি।

শাহরুখ খানের যে ছয়টি

৬। চাক দে! ইন্ডিয়া
শাহরুখ খানের ভিন্ন ধরনের সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’। যেখানে পর্দায় নায়িকাদের সাথে রোমান্সের জন্য শাহরুখ খান বিখ্যাত সেখানে এই সিনেমায় তিনি হাজির হয়েছেন গ্ল্যামারবিহীন একটি চরিত্রে। তার সাথে পর্দায় ছিলেন না কোন নায়িকা। সিনেমাটিতে শাহরুখ খান অভিনীত চরিত্রের নাম ছিলো কবির খান। নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিস করে দেশদ্রোহীর খেতাব পাওয়া কবির খান ফিরে আসেন ভারতের জাতীয় মহিলা হকি দলের কোচ হিসেবে। যে দলের কাছে তার ফেডারেশনের কোন রকম প্রত্যাশা ছিলো না, সেই দলকে নিয়ে তিনি জিতেন মহিলা হকি বিশ্বকাপ। না পাওয়ার ব্যাথাকে জেদে রূপান্তর করে কিভাবে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তাই দেখা গেছে সিনেমাটিতে। এছাড়া বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে দলকে উজ্জীবিত করতে তার ‘সত্তর মিনিট’ সংক্রান্ত সেই ভাষণটি আজো অনেককে অনুপ্রেরণা যোগায়।

শূন্য থেকে বলিউডের শীর্ষে পৌঁছানোর এই যাত্রা শাহরুখ খানের জন্য মোটেও সহজ ছিলো না। এতটুকু পথ পারি দিতে তার শরীরের কত ফোঁটা রক্ত ঘাম হয়ে ঝরেছে সেটা সম্ভবত শুধু তিনিই জানেন। এই সাময়িক ব্যার্থতা এইদিনের অর্জনকে ধূলিসাৎ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে বলে আমি মনে করি না। আর শাহরুখ খান নিজেই বলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে শিক্ষক হচ্ছে সফলতা। মানুষকে সবচেয়ে ভালো শিক্ষাটা তার ব্যার্থতা দেয় বলেই মনে করেন বলিউড বাদশা। শাহরুখ খানের সিনেমাগুলো যেমন আমাদের জীবন সম্পর্কে আশাবাদী করে, তেমনি আমরাও চাই তা যেনো শাহরুখকেও আশাবাদী করে তোলে। এই সাময়িক ব্যার্থতাকে পিছনে ফেলে বাদশা ফিরে আসুন বাদশার মত। আবারো ঝড় উঠুক কোটি ভক্তের মনে। আরো একবার শাহরুখ খান নিজের জীবন এবং সফলতাকে আলিঙ্গন করুন প্রসারিত দুই হাতে। সেই যাত্রাটা যেন খুব তাড়াতাড়ি আমরা দেখতে পাই – ভক্ত হিসেবে বলিউড বাদশার কাছে এটাই চাওয়া।

আরো পড়ুনঃ
শাহরুখ খানের জন্মদিনের স্পেশাল: সুপারস্টারের জন্য ভক্তদের কিছু পাগলামি
যে দশটি সিনেমা শাহরুখ খানকে বলিউড বাদশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত