বলিউডের প্রথম তারকা অভিনেত্রী যিনি শক্তিশালী পুরুষ অভিনেতা ছাড়াই তার সিনেমায দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ভিড় টানতে পারতেন তিনি ছিলেন শ্রীদেবী। এই অভিনেত্রী দেখিয়েছিলেন যে তিনি এককভাবে ‘চালবাজ’ এবং ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর মতো আর্থিকভাবে লাভজনক সিনেমা উপহার দিতে সক্ষম। সিনেমার পর্দায় গল্পকে জীবন্ত করে তোলার ক্ষেত্রে শ্রীদেবীর বিকল্প ভারতে এখন খুব কমই আছে। তার সিনেমার ক্যারিয়ার পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে যে ভারতের প্রথম লেডি সুপারস্টার শ্রীদেবী ছিলেন, যার তুলনা শুধু তিনি নিজেই!
শ্রীদেবী সাধারণত তার সংরক্ষিত মনোভাবের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। তবে তিনি তার স্পষ্টভাষী এবং পর্দায় শক্তিশালী উপস্থিতির জন্যও পরিচিত ছিলেন, যেখানে প্রায়শই তিনি একজন স্মার্ট, দৃঢ়-ইচ্ছাসম্পন্ন মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শ্রীদেবী ২০১৩ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন। এছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতিতে তার অবদানের জন্য ভারতীয় সিনেমার ১০০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৩ সালে সিএনএন-আইবিএন দ্বারা পরিচালিত একটি জাতীয় সমীক্ষায় ‘১০০ বছরে ভারতের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’ খেতাব পেয়েছিলেন।
চার বছর বয়সে, শ্রীদেবী ১৯৬৭ সালের তামিল সিনেমা ‘কান্ধন করুনাই’-এর মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে পরিচালক এম এ থিরুমুগামের পৌরাণিক তামিল সিনেমা ‘থুনাইভান’-এ প্রথমবারের মত প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি কন্নড়, তামিল, তেলেগু এবং মালায়ালাম সিনেমায় একজন শিশু অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিয়মিত কাজ করেছেন। নয় বছর বয়সে ‘রানি মেরা নাম’ (১৯৭২) সিনেমার মাধ্যমে হিন্দি সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন শ্রীদেবী। আর ১৩ বছর বয়সে, তামিল ‘মুন্ড্রু মুদিচু’ ছিলো তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে তার প্রথম পূর্নদৈর্ঘ সিনেমা।
নিজের খ্যাতির উচ্চতায় শ্রীদেবী অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এবং তার ভক্তরা তাকে সিনেমার পর্দায় দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকতেন। এমনকি যখন তিনি সন্তান এবং পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন তখনও তার জনপ্রিয়তা অটুট ছিলো। একজন তরুণ অভিনয়শিল্পী হিসেবে ১৯৬৯ সালে ‘থুনাইভান’ সিনেমার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করার পর শ্রীদেবী বেশ কয়েকটি অসাধারণ অভিনয় উপহার দিয়েছেন। ২০১৮ সালে ৫৪ বছর বয়সে মারা যান এই অভিনেত্রী৷ কিন্তু তিনি একটি সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার তৈরি করেছেন যা ভারতীয় সিনেমার ভক্তরা সর্বদা মনে রাখবেন৷ ভারতের প্রথম লেডি সুপারস্টার শ্রীদেবী অভিনীত সেরা পাঁচটি সিনেমা নিয়ে আলোচনা থেকছে এই লিখায়!
০১। মম
শ্রীদেবী সিনেমাটিতে একজন সচেতন মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি একটি পার্টিতে তার সৎ কন্যাকে ধর্ষণের পর এর প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, অক্ষয় খান্না, সজল আলি এবং আদনান সিদ্দিকী। এ আর রহমান সিনেমাটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। পুলিশ তদন্তের কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে, সে বিষয়গুলি নিজের হাতে নেয় এবং অপরাধীদের উপর প্রতিশোধ নেয়। শ্রীদেবীর অসামান্য অভিনয়ের কারণে তার চরিত্রটি একযোগে বিরক্ত, দুর্বল এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার উদাহরণ হয়ে উঠে।
০২। ইংলিশ ভিংলিশ
‘ইংলিশ ভিংলিশ’ সিনেমাটি ভারতবর্ষের সাধারণ গৃহিণীদের একটি চিত্র। বাড়িতে থাকা একজন মা যিনি তার স্বামী এবং সন্তানদের অগ্রাধিকার দেন, একটি ইংরেজিভাষী ক্র্যাশ কোর্সে নাম লেখানোর মাধ্যমে তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেন। এই মনোমুগ্ধকর, হৃদয়স্পর্শী সিনেমায় শ্রীদেবীর অভিনয় দর্শকদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা ছিলো। শ্রীদেবী অভিনীত এই সিনেমাটি বক্স অফিসে ভালো ব্যবসার পাশাপাশি সমালোচকদের কাছেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।
০৩। চালবাজ
সিনেমার পর্দায় দুটি সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ‘অঞ্জু’ এবং ‘মঞ্জু’-এর মাধ্যমে শ্রীদেবী ইয়িন এবং ইয়াংকে প্রতিফলিত করেছিলেন। সিনেমাটিতে তার চিত্রায়ন একটি ব্লুপ্রিন্ট হিসাবে কাজ করেছে। এই দুই চরিত্রে তার অভিনয় ভারতীয় সিনেমার অন্যতম শক্তিশালী দুটি চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার এই সিনেমাটিতে শ্রীদেবী তার অভিনয় দক্ষতা পুরোপুরি দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলেন।
০৪। মিস্টার ইন্ডিয়া
বলিউডের সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম যুগান্তকারী এই সিনেমাটিতে শ্রীদেবী অনিক কাপুরের বিপরীতে অভিনয় করেছিলনে। যদিও অনিল কাপুর সিনেমাটির নাম ভূমিকায় সুপারহিরো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, শ্রীদেবীকে গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গেছে। সেলিম-জাভেদের গল্প এবং চিত্রনাট্যে সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনিল কাপুর, শ্রীদেবী এবং অমরিশ পুরি। প্রধান চরিত্র অরুণ ভার্মা (অনিল কাপুর) একজন দাতব্য স্ট্রিট মিউজিশিয়ান, যাকে একটি মাস্কিং প্রযুক্তি দেওয়া হয় যা তাকে অদৃশ্য করে তোলে। সিনেমাটিতে শ্রীদেবীর অভিনয় দর্শকদের ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছিলো।
০৫। সাদমা
‘সাদমা’ সিনেমাটি যখন চিত্রায়িত হয়েছিল, শ্রীদেবী এর আগে মাত্র একটি সিনেমায় উপস্থিত হয়েছিলেন। এই সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীদেবী। রেট্রোগ্রেড অ্যামনেসিয়ার কারনে ৮ বছর বয়সী শিশুর মতো আচরণ করা এক নারীর চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। সিনেমাটিতে তার বিশুদ্ধ এবং সংবেদনশীল অভিনয় করেছেন দর্শক এবং সমালোচকদের কাছে ব্যাপভাবে প্রশংসিত হয়েছিলো। শুধু তাই নয় সিনেমাটির বেশ কয়েকটি দৃশ্য দর্শকদের চোখের পানি ফেলতে বাধ্য করেছিলো।
প্রিয় পাঠক ভারতের প্রথম লেডি সুপারস্টার শ্রীদেবী অভিনীত এই পাঁচটি সিনেমার মধ্যে কোন সিনেমাটি আপনার কাছে সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে সেটা জানিয়ে দিন মন্তব্যে। এছাড়া এই তালিকায় আর কোন সিনেমা থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করছেন সেটাও জানিয়ে দিতে পারেন মন্তব্যে। শ্রীদেবীর সিনেমা ক্যারিয়ার এতটাই সমৃদ্ধ যে তার পরবর্তি কোন অভিনেত্রীই সেটা কল্পনা করতে পারেন না। শ্রীদেবীর মেয়ে জাহ্নভি কাপুর বর্তমানে বলিউডের নিয়মিত অভিনয় করেছেন। মায়ের মত নিজের ক্যারিয়ার জাহ্নভি সমৃদ্ধ করতে পারেন কিনা সেটা হয়ত সময়ই বলে দিবে।
আরো পড়ুনঃ
‘বয়কট’ ডাক সত্ত্বেও বক্স অফিসে হিট হওয়া বলিউডের ৬টি সিনেমা
যে ছয়টি তামিল সিনেমার হিন্দি সংস্করণ আপনার অবশ্যই দেখা উচিৎ
বাস্তবের গ্যাংস্টারদের নিয়ে নির্মিত বলিউডের আলোচিত ১০ সিনেমা