এমন অনেক ছবি আছে যেগুলো আমরা বার বার দেখি। বার বার দেখার কারন এই না যে প্রথম দেখায় সিনেমাগুলো বোধগম্য ছিল না, আমরা সিনেমাগুলো বার বার দেখি আমাদের ভালো লাগার কারনে। পর্দায় ফুটিয়ে তোলা কল্পনা আর বাস্তবতার অদ্ভুত এক সমীকরন আমাদের সিনেমাগুলো বার বার দেখতে উদ্ভুদ্ধ করে। বলিউডের সেরা দশ এ আজকে থাকছে বলিউডে নির্মিত ভ্রমন কাহিনী নির্ভর এরকম কিছু সিনেমা আছে যেগুলো আমাদের সেই ভুলতে না পারার অনুভূতিকে আঘাত করে।
ভ্রমন কাহিনীর গল্পে উঠে আসা অসাধারন বিনোদনের ১০টি বলিউড সিনেমা নিয়েআলোচনা করবো আজকের এই লিখায়। এখানে উল্লেখিত সিনেমাগুলোর বাইরেও আরো অনেক সিনেমা আছে। এখানে আমার পছন্দের ১০টি সিনেমার কোথায় বলবো। আর সিনেমাগুলোর এই ক্রম বা সিরিয়েল কোন নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে করা হয়নি। আলোচনার খাতিরে একটার পর একটা রাখা হয়েছে।
১। জিন্দেগী না মিলে দোবারা (২০১১) – আইএমডিবি ৮.১
এই সিনেমাটিকে আমি বলি ‘সেলুলয়েডের ফিতায় কবিতা’! ভ্রমনকে প্রতিপাদ্য করে জীবন এবং সম্পর্কের ছবি আঁকার প্রচেষ্টার অদ্ভুত এক চিত্রায়ন। জয়া আকতারের অসাধারন নির্দেশনায় ছবিতে দেখা গেছে হৃদয় স্পর্শ করা বন্ধুত্ব, মনে রাখার মত একটি রোড ট্রিপ আর শিহরন তোলা কিছু এডভেঞ্চার। বন্ধুত্বের ফেলে আসা সময়ের স্মৃতি, সম্পর্কের টানাপোড়েন, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং আবেগ আর বাস্তবতার দ্বন্ধে নিজের সাথে লড়াই উঠে এসেছে তিন বন্ধুর ভ্রমনের গল্পে। সিনেমাটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন হৃত্বিক রোশান, ক্যাটরিনা কাইফ, ফারহান আকতার এবং অভয় দেওল।
২। কুইন (২০১৩) – আইএমডিবি ৮.৩
বলিউডের অন্যতম সেরা নারীকেন্দ্রিক একটি সিনেমা যেখানে ভ্রমনের মাধ্যমে একজন আন্তকেন্দ্রিক নারীর পরিবর্তনের গল্প উঠে এসেছে। নিজের প্রেমিক কর্তৃক প্রতারিত হওয়ার পর একই নিজের হানিমুনে যায় সেই নারী। তার এই ভ্রমনই তার জীবনে নিয়ে আসে বিশাল এক পরিবর্তন। ঘরমুখো একজন নারী থেকে উৎফুল্ল আর প্রচন্ডরকম উদ্যমী স্বভাবের হয়ে উঠে সে। সিনেমার গল্পের মুন্সিয়ানার সাথে ছিল কেন্দীয় চরিত্রে অভিনয়কারী কঙ্গনার প্রাণবন্ত অভিনয়। বলিউড প্রেমী হয়ে থাকলে এই সিনেমাটি আপনার অবশ্যই দেখা উচিত।
৩। ইয়ে জাওয়ানি হ্যা দিওয়ানি (২০১৩) – আইএমডিবি ৭.০
ভ্রমনের মাধ্যমে কলেজের বন্ধুদের রিউনিয়ন এবং অসাধারন কিছু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার গল্প ইয়ে জাওয়ানি হ্যা দিওয়ানি। তরুন প্রজন্মের পছন্দের সব উপাদানই আছে এই সিনেমায় – এডভেঞ্চার, স্বাধীনতা, একাগ্রতা এবং নিয়ন্ত্রনহীন আবেগ। সিনেমার প্রথম ভাগে দেখা গেছে মানালির দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য আর দ্বিতীয় ভাগে আছে রাজস্থানের রাজকীয় আয়োজন। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রনবীর কাপুর এবং দীপিকা পাডুকোন।
৪। তামাশা (২০১৫) – আইএমডিবি ৭.২
নির্মাতা ইমতিয়াজ আলী ভ্রমন কাহিনী নিয়েই সিনেমা নির্মান করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। ‘তামাশা’ সিনেমাটিও সেরকম একটি সিনেমা যেখানে দুইজন মানুষের একসাথে ভ্রমনের ছবি উঠে এসেছে পর্দায়। এই সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন রনবীর কাপুর এবং দীপিকা পাডুকোন। প্রধান দুই তারকার অভিনয়, দুর্দান্ত দৃশ্যায়ন, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং অসাধারন গান – সব মিলিয়ে ভ্রমন প্রেমীদের জন্য একটি মাস্ট ওয়াচ সিনেমা ‘তামাশা’।
৫। দিল চাহতা হ্যা (২০০১) – আইএমডিবি ৮.২
বলিউডের পট-পরিবর্তনের সিনেমা বলা হয় ফারহান আকতার পরিচালিত এই সিনেমাকে। শুধু তাই নয়, গোয়াকে ছুটি কাটানোর একটি আদর্শ জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এই সিনেমার অবদান অনস্বীকার্য। তিন গোয়া ভ্রমনের পর সম্পর্কের টানাপোড়নে বিচ্ছেদ এবং শেষ পর্যন্ত আবার একসাথে সেই গোয়া ভ্রমন – সব মিলিয়ে অনিন্দ সুন্দর এক সিনেমাটিক অভিজ্ঞতার নাম ‘দিল চাহতা হ্যা।’
৬। হাইওয়ে (২০১৪) – আইএমডিবি ৭.৬
নামের মধ্যেই ভ্রমনের একটা আমেজ রয়েছে। ইমতিয়াজ আলী পরিচালিত সিনেমাটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রনদীপ হুদা এবং আলিয়া ভাট। ঘটনাক্রমে দুইজন মানুষের একসাথে যাত্রা আর সেই যাত্রায় অভাবনীয় দৃশ্যের ছবি সিনেমাটিকে করেছে উপভোগ্য।
৭। যাব উই মেট (২০১৭) – আইএমডিবি ৮.০
কারিনা কাপুরের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা সম্ভবত শহীদ কাপুরের সাথে তার এই ভ্রমনের সিনেমা। এই সিনেমাটিও পরিচালনা করেছেন ইমতিয়াজ আলী। ঘটনাক্রমে একই ট্রেনে যাত্রা করতে গিয়ে একে ওপরের জীবনে জড়িয়ে যান কারিনা এবং শহীদ। সিনেমাটিতে আপনি শিমলা, মানালি এবং ভাটিন্ডার অসাধারন কিছু জায়গা দেখতে পাবেন যা আপনাকে আলোড়িত করবে নিঃসন্দেহে।
৮। দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৫) – আইএমডিবি ৮.২
ভ্রমনের সিনেমার চেয়ে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ প্রেমের সিনেমা হিসেবেই বেশি সমাদৃত। তবে আমার কাছে এটাও ভ্রমন ভিত্তিক অন্যতম সেরা একটি সিনেমা। একটি ভ্রমনের মাধ্যমে দুইজন মানুষের কাছাকাছি আসা এবং সেখান থেকে অনন্য প্রেমের উপাখ্যান রচনা। সিনেমাটিতে আপনি ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে শুরু করে পাঞ্জাবের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবেন।
৯। পিকু (২০১৫) – আইএমডিবি ৭.৬
একজন বাবা এবং তার মেয়ের একসাথে ভ্রমনের গল্প নিয়ে সিনেমা ‘পিকু’। একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কের অভিযাত্রায় নতুন সম্পর্ক তৈরির ছবি এঁকেছেন সিনেমাটির নির্মাতারা। এছাড়া সিনেমাতে বারানসি এবং কলকাতার অসাধারন কিছু দৃশ্য দেখতে পাবেন আপনি।
১০। লন্ডন প্যারিস নিউ ইয়র্ক (২০১২) – আইএমডিবি ৫.৭
তিনটি শহরের ভ্রমন কাহিনীর সিনেমাটিতে আপনি দেখতে পাবেন এই তিন শহরের মনোরম সব দৃশ্য। বন্ধুদের নিয়ে দেখতে পারেন ভ্রমনকে উপজীব্য করে নির্মিত উপভোগ্য এই সিনেমাটি।
এই সিনেমাগুলো ছাড়াও বলিউডে নির্মিত ভ্রমন কাহিনী নির্ভর অন্যান্য সিনেমার মধ্যে দিল ধাড়াকনে দো (২০১৫), ফাইন্ডিং ফ্যাননি (২০১৪), চেন্নাই এক্সপ্রেস (২০১৩), চলো দিল্লি (২০১১), আনজানা আনজানি (২০১০), দ্যা দার্জিলিং লিমিটেড (২০০৭), লুটেরা (২০১৩) উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে ভ্রমন কাহিনী নির্ভর আপনার পছন্দের আর কোন সিনেমা আছে, কমেন্টে জানিয়ে দিন আমাদের।
আরো পড়ুনঃ
এক দশকের হলিউড: গত দশ বছরে হলিউডের সেরা দশটি সিনেমা
ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি: জেনে নিন কতগুলো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আছে ভারতে