আজকের ঢাকাই চলচ্চিত্রে যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, তার অনেকটাই অবদান রয়েছেন চলচ্চিত্রের নায়িকা বা নারীদের। শাবানা, ববিতা, সুবর্ণা মুস্তাফা, শাবনূর, মৌসুমী, পপিদের নিয়ে নির্মিত হয়েছে অনেক নারী প্রধান চলচ্চিত্র। যেসব ছবিগুলো ঢাকাই ছবির সোনালী অতীতের সাক্ষী। এই ছবিগুলো কেবল ব্যবসায়িক সাফল্যের ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখেনি। নারীদের মধ্যে মনোবল সৃষ্টি কিংবা নানা জনমত গঠনেও ভূমিকা পালন করেছে। চলুন দেখে নেয়া যাক নারীদের জীবন এবং লড়াই নিয়ে কথা বলা ঢালিউডের ১৫ সিনেমার বিস্তারিত।
০১। গোলাপি এখন ট্রেনে
১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আমজাদ হোসেন। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা, ফারুক, আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ, আনোয়ারা, রওশন জামিল, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ। নারীর জীবনের সংগ্রাম এই ছবির উপজীব্য যা খুব সহজেই দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিলো। সিনেমাটির সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন আলাউদ্দিন আলী। গানগুলোও বেশ জনপ্রিয় হয়। সিনেমাটি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ১২টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ববিতার ক্যারিয়ারে এটি সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
০২। তিন কন্যা
একটি নারী প্রধান চলচ্চিত্র ‘তিন কন্যা’। ২০ নভেম্বর, ১৯৮৫ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। এটি পরিচালনা করেছিলেন শিবলি সাদিক। ছবিটি বাবা হারানো ৩ বোনের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। তিন কন্যা ছবিতে প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিন বোন সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। আরো অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন।
০৩। মেয়েরাও মানুষ
১৯৯৭ সালে ‘মেয়েরাও মানুষ’ সিনেমাটি মুক্তি পায়।সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন মনোয়ার খোকন। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা জসিম ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা, কলকাতার ঋতুপর্ণা ও চাঙ্কিপাণ্ডে। ছবির গল্পটি ছিল, সমাজের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারীরাও যে এগিয়ে যেতে পারে, তারাও সাফল্য বয়ে এনে সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে তারই চিত্র। ছবিটি নারী প্রধান ছবি হিসেবে ঢাকাই ছবির ইতিহাসে আজও রেকর্ড বলা যায়।
০৪। পালাবি কোথায়
‘পালাবি কোথায়’ কমেডিধর্মী ছবি। হাস্যরসাত্বক বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে কর্মজীবী নারীর অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এখানে। শাবানা, চম্পা ও সুবর্ণা মুস্তাফা চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক মুগ্ধ করেছিলেন। হুমায়ূন ফরিদীর কমেডি অভিনয় ছবিটির প্রধান সম্পদ। শহীদুল ইসলাম খোকনের দক্ষ পরিচালনায় ছবিটি ১৯৯৬ সালে মুক্তি পেয়েছিলো। অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমাটি প্রযোজনাও করেছেন হুমায়ূন ফরিদি। কিন্তু সিনেমাটি বাণিজ্যিক সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হলে হুমায়ূন ফরিদি আর প্রযোজনা করেননি।
০৫। মোল্লা বাড়ীর বউ
পুরোপুরি কমেডি ঘরানার ছবি হলেও এটি ছিলো ধর্মান্ধতার সমাজে নারীর অসহায়ত্ব ও নারীর লড়াইয়ের চিত্র। ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’ ২০০৫ সালে মুক্তি পায়। এটি পরিচালনা করেছিলেন সালাহ উদ্দিন লাভলু। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমি, শাবনূর, রিয়াজ, এ টি এম শামসুজ্জামান প্রমুখ। এই ছবিতে রিয়াজের দুই বউয়ের চরিত্রে দেখা যায় মৌসুমি ও শাবনূরকে। ভিন্ন ধারার গল্প, অভিনয় এবং অসাধারণ কিছু গানের কারনে সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিলো। সিনেমাটির প্রতিটি চরিত্র গুরুত্বপূর্ন হলেও শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছাপিয়ে ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’ নারীদের সিনেমা হয়ে উঠেছিলো।
০৬। মায়ের অধিকার
ব্যবসা সফল ছবি ‘মায়ের অধিকার’ হচ্ছে অন্যতম নারী প্রধান একটি ছবি। শিবলি সাদিক পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। আরো অভিনয় করেছিলেন শাবানাজ, আলমগীর, সালমান শাহ, হুমায়ূন ফরিদী, নাছির খান প্রমুখ। মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সন্তানের লড়াই ছবির গল্পে প্রাণ ছিল। তৎকালীন সময়ে ছবিটি রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে।
০৭। নিরন্তর
হুমায়ূন আহমেদের গল্পে ‘নিরন্তর’ ছবিটি আবু সাইয়ীদ পরিচালনা করেন। এটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালে। নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘জনম জনম’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য ও সংলাপও লিখেছেন আবু সাইয়ীদ। এতে অভিনয় করেছেন শাবনূর, ইলিয়াস কাঞ্চন, আমিরুল হক চৌধুরী, ডলি জহুর, লিটু আনাম, শহীদুল আলম সাচ্চু প্রমুখ। এখানে একজন নারীর জীবনের করুণ সংগ্রামকে উপজীব্য করা হয়েছে। অন্ধ বাবা, বেকার যুবক ভাই ও অসুস্থ মায়ের সংসার চালাতে এক শিক্ষিত নারীর পতিতা হয়ে উঠার গল্প এখানে। সেই নারীর চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শাবনূর।
০৮। আম্মাজান
১৯৯৯ সালে মুক্তি পেয়েছিলো কাজী হায়াত পরিচালিত ‘আম্মাজান’ ছবিটি। ছবিতে মান্নার ঠোঁটে আইয়ূব বাচ্চুর গাওয়া ‘আম্মাজান আম্মাজান’ গানটি পেয়েছিলো তুমুল জনপ্রিয়তা। ছবিটিও আকাশচুম্বী সফলতা লাভ করে। আম্মাজান ছবিতে মান্নার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শবনম পারভীন। সন্তানের সামনে মায়ের সম্ভম হানি ও তারই প্রতিশোধ নিতে মত্ত থাকা সন্তানের গল্পের ছবি ‘আম্মাজান’। মূলত মা ও নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের ছবি এটি। এখানে আরও অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী, আমিন খান ও ডিপজল।
০৯। খাইরুন সুন্দরী
এ কে সোহেল পরিচালিত ‘খাইরুন সুন্দরী’ ছবিটি ২০০৭ সালে মুক্তি পায়। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী। তার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস। এই ছবিটি রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে। একইসঙ্গে ছবিতে মমতাজের গাওয়া ‘খাইরুন লো…’ শিরোনামের গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ছবির গল্পটি ছিল একজন নারীর প্রতি তার স্বামীর ভালোবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে। গ্রামীন নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কেমন করে স্বামীর ভালোবাসা বঞ্চিত হয়ে করুণ পরিণতি বরণ করে নেয় তারই একটি গল্প ছিলো এখানে। এই ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য মৌসুমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১০। মাতৃত্ব
‘মাতৃত্ব’ ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। পরিচালনা করেছেন জাহিদ হোসেন। একজন নারীর জীবনের সার্থকতা মাতৃত্বে। ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মৌসুমী। তার বিপরীতে ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই হুমায়ুন ফরীদি সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। আরও অভিনয় করেন নাসিমা খান, প্রবির মিত্র, অমল বোস, সিরাজ হায়দার, শহিদুল আলম সাচ্চু।
১১। অগ্নি
নারী কেন্দ্রিক গল্পের লেডি অ্যাকশন সিনেমা অগ্নি আধুনিক ঢালিউডের বাণিজ্যিক সফল সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত সিনেমাটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি। হলিউডের ‘কল্মবিয়ানা’ সিনেমার উপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘অগ্নি’ পরিচালনা করেছেন ইফতেখার চৌধুরী। দুর্দান্ত অ্যাকশনে ভরপুর সিনেমাটি রাতারাতি মাহিয়া মাহিকে তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছিলো। সিনেমাটিতে মাহির বিপরীতে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। পরবর্তিতে ইফতেখার চৌধুরী মাহিকে নিয়ে সিনেমাটির দ্বিতীয় পর্ব ‘অগ্নি ২’ নির্মান করেছিলনে। দ্বিতীয় পর্বও বক্স অফিসে বাণিজ্যিক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো।
১২। ম্যাডাম ফুলি
‘ম্যাডাম ফুলি’ মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। শিমলা অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ম্যাডাম ফুলি। ছবিটির পরিচালক ছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন। এই চলচ্চিত্রে শিমলা ও ফুলি দুটি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই প্রথম অভিনেত্রী যিনি তার অভিষেক চলচ্চিত্রেই শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছবিটিও ছিল একটি নারী প্রধান গল্পের।
১৩। গেরিলা
সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ ও পরিচালকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নির্মিত নাসিরউদ্দিন ইউসুফের চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’। মুক্তিযুদ্ধ সময়কার গ্রামীন ও শহুরের প্রেক্ষাপটে অপূর্ব সংমিশ্রন এই ছবিতে প্রধান চরিত্র বিলকিস। সেও নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে,দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেয়। সরকারি অনুদানে নির্মিত অনন্য এই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রটি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ১১টি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী নারী চরিত্র বিলকিস রুপদানদারী জয়া আহসান জিতে নেন জাতীয় পুরস্কার।
১৪। ভাত দে
আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘ভাত দে’ ছবিতে দেখা যায়, জরি একজন গরিব বাউলের মেয়ে। ছোটবেলায় অভাবের কারণে মা চলে যায়। অন্ধ বাউল বাবার অভাব-অনটনের সংসারে সে বড় হতে থাকে। জরি যখন বড় হয়,একদিন বাবাও ভাত যোগাড় করতে গিয়়ে মারা যায়। এর পর শুরু হয় সহায়-সম্বলহীন এক দরিদ্র নারীর জীবন সংগ্রাম। আসে প্রেম ও অতঃপর করুণ পরিণতি। আলমগীর, শাবানা, আনোয়ার হোসেন অভিনীত সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার সহ মোট ৯টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। জরি চরিত্রে অভিনয় করে শাবানা তার সেরা চলচ্চিত্র দিয়ে ঘরে তুলে নেন জাতীয় পুরস্কার। এছাড়া বাংলা ছবির মধ্যে ‘ভাত দে’ প্রথম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেয়।
১৫। সূর্য দীঘল বাড়ী
আবু ইসহাকের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন মসিউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী। বাংলা ১৯৫০ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ‘পঞ্চাশের আকাল’ নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, সেই দুর্ভিক্ষে লক্ষ দরিদ্র মানুষ প্রাণ হারায়। যারা কোনোমতে শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বাঁচতে পেরেছিল তাদেরই একজন স্বামী পরিত্যক্ত জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন এক খন্ড জমিতে ঘর তৈরি করে যেটি অপয়া ভিটে বলে পরিচিতি ছিল। দুর্ভিক্ষ, দারিদ্রতা, মাতৃত্ব সর্বোপরি এক নারীর জীবন সংগ্রামের দৃশ্য ফুটে উঠেছে এই চলচ্চিত্রে। সিনেমাটি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ৬টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী নারী জয়গুন চরিত্রে ডলি আনোয়ারের অনবদ্য অভিনয় তাকে এনে দেয় জাতীয় পুরস্কার।
উপরে উল্লেখিত ১৫টি সিনেমা ছাড়াও ‘বিদ্রোহী পদ্মা’, ‘শাস্তি’, ‘শোভা’, ‘মহুয়া সুন্দরী’, ‘বস্তির রানী সুরিয়া’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘সুন্দরী বধু’, ‘মৌসুমী’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘রানী কেন ডাকাত’সহ আরও অনেক ছবি আছে যা নারী প্রধান হিসেবে ঢাকাই ছবিকে সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন সময়ে এরকম অনেক সিনেমার মাধ্যমে পর্দায় উঠে এসেছে নারীদের জীবন এবং লড়াই করে বেঁচে থাকার গল্প।
আরো পড়ুনঃ
ঢালিউডের সিনেমার পর্দায় পুলিশ এবং পুলিশের ভাবমুর্তি নিয়ে কিছু কথা
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সোনালী সময়ের সিনেমার গল্পঃ মমতাজ আলীর ‘কারণ’
মহানায়ক মান্না: ঢাকাই সিনেমার জন্য একজন অভিনেতার চেয়ে বেশী কিছু!