‘ফ্যান’ তৈরী করার জন্যই আমি বোম্বেতে এসেছিলামঃ মানিষ শর্মা

বলিউডের নবীন পরিচালক মানিষ শর্মা। এক দশক আগে ইয়াশ রাজ ফিল্মসের ‘ব্যান্ড বাজা বরাত’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ইতিমধ্যে পরিচালনা করেছেন ৪টি এবং প্রযোজনা করেছেন ৫টি সিনেমা, যার সবগুলোই ইয়াশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে। তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘ফ্যান’। শাহরুখ খান অভিনীত এই সিনেমাটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। সম্প্রতি ‘ফ্যান’ সিনেমা, আদিত্য চোপড়ার সাথে তার সম্পর্ক এবং বলিউডে তার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেন ফিল্মকোম্পানিয়নের মোহিনী চৌধুরীর সাথে। ফিল্মীমাইক পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।

আপনি ইয়াশ রাজ ফিল্মসের সাথে কাজ করছেন অনেকদিন ধরে। কিন্তু শুরুতে একজন বহিরাগত হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার স্ট্রাগল নিয়ে কিছু বলুন।

আসলে সত্য কথা বলতে, আমাকে কোন স্ট্রাগল করতে হয়নি। কিন্তু এর মানে এই না যে, আমাকে কখনো খালি হাতে ফিরতে হয়নি। আমি ‘ফ্যান’ সিনেমাটি তৈরির জন্য প্রযোজক পাচ্ছিলাম না। এখন আমি সেটাকে স্ট্রাগল বলবো না – ‘ফ্যান’ তৈরির জন্য অপেক্ষার সময়ে আমি তিনটি সিনেমা নির্মান করেছিলাম। আমি সৌভাগ্যবান যে, আমি যে বিষয় নিয়ে সিনেমা করতে চেয়েছি বা যে বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করেছে শেষ পর্যন্ত সেটা আমি করতে পেরেছি। সেটা ঠিক ছিলো না ভুল ছিলো তা ভিন্ন বিষয়। এখন পর্যন্ত প্রযোজনাসহ আমি ৯টি সিনেমা নির্মান করেছি, শুধু একটুকু বলতে পারি এই সিনেমাগুলোর ভালো বা খারাপ সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী। কোন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বা ষ্টুডিওর কাছে ‘এটা করা ঠিক হবে না’ টাইপের কথা শুনতে হয়নি।

আপনি বলেছিলেন ‘ফ্যান’ আপনার সবচেয়ে বড় ক্রিয়েটিভ ঝুঁকি না, কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় হার্টব্রেক। এই হার্টব্রেক থেকে কিভাবে উত্তরন করলেন?

এই বিষয়কে কিভাবে ব্যাখ্যা করবো আমি জানিনা। আসলে সময় সব ঠিক করে দেয়। আমি মনে করি যে সিনেমা ভালো করতে পারেনি সেটার প্রভাব আমার উপর বেশি কাজ করে। এটা নিয়ে চিন্তা করতে হয় এবং বুঝতে হয় আসলে কি হয়েছিল। ব্যাপারটা এরকম আপনি এটা থেকে কিছু শিখলেন এবং চেষ্টা করবেন ভবিষ্যতে একই ভুল যেন আপনি আবার না করেন।

আপনি কি বুঝতে পেরেছেন যে ঠিক কোথায় আপনি ভুলটা করেছিলেন?

পুরোপুরি ধারনা করতে পেরেছি বলাটা ভুল হবে। কিন্তু আপনি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো পর্যালোচনা করলে কিছুটা ধারনা পাওয়া যায়। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করে যার কোনটাই সে অর্থে সরল কোন ব্যাখ্যা না। আপনি সেই দৃষ্টিভঙ্গিগুলো থেকে হয়ত ধারনা পেতে পারেন কোন অংশটা ঠিকমত করা হয়নি। তবে এটা আমি বলতে চাই যে, ‘ফ্যান’ বা ‘মেরে পেয়ারে বিন্দু’ এই সিনেমাগুলির প্রতি দর্শকদের একটা অংশের সম্মান অবশ্যই আছে।

‘ফ্যান’র প্রতিক্রিয়া থেকে আপনি কি শিখলেন? এমন কোন সমালোচনার জায়গা কি আছে যেটা আপনার কাছে অর্থবহ মনে হয়েছে?

একটা বিষয় হয়তো এক্ষেত্রে বলা যায় যে, ‘ফ্যান’ সিনেমার দুইটা চরিত্রই গ্রে টাইপের ছিলো। আরিয়ানের চরিত্রও কিছুটা গ্রে ছিলো যেটা আসলে দর্শকদের চিন্তার সাথে সংযুক্ত করতে পারিনি। দর্শক হয়তো ভেবেছে ‘একজন ষ্টার এরকম করতে পারেনা।’ এই কারনে সিনেমাটিতে যারা ভালো এবং খারাপের লড়াই দেখতে তাদের আমি সন্তুষ্ট করতে পারিনি। এক্ষত্রে আমি ঠিক ছিলাম না ভুল ছিলাম সেটা আলোচনার দাবি রাখে। একজন গল্পকার হিসেবে দুই দিকেই আমি গ্রে চরিত্র দেখতে চেয়েছি। এই বিষয়টাই দর্শকদের বড় একটা অংশকে সিনেমার গল্প এবং চরিত্রের সাথে সংযুক্ত করতে দেয়নি।

আপনিতো শাহরুখ খানের অনেক বড় একজন ভক্ত। আপনার কি কখনও মনে হয়েছে শাহরুখ খানকে নিয়ে আরেকটা সিনেমা আপনি তৈরী করবেন এবং সেটা সফল হবে?

অবশ্যই! এই বিষয়টা নিয়ে আমি এবং শাহরুখ এখনও কথা বলি। আমি আশা করি এটা হবে। ‘ফ্যান’ সেই সিনেমা যেটা করার জন্য আমি বোম্বে আসি এবং সেটা আমি করেছি। কিন্তু এর মানে এইনা যে আবার করবো না।

আপনি রনবীর সিংয়ের সাথে ‘জায়েসভাই জোয়ার্দার’ সিনেমায় আবারও কাজ করছেন। যার সাথে আপনি শুরু করেছিলেন, তৈরী করেছেন এবং বিরতি নিয়েছেন এমন একজন অভিনেতার সাথে আবার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? তার সাথে কাজের এবং কথা ক্ষেত্রে কি আপনি আরো বেশি স্বাধীনতা অনুভব করেন?

স্বাধীনতার ব্যাপারটা আমি জানিনা তবে এটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি। আপনার জীবনে এমন বন্ধু আছে যাদের সাথে স্কুল থেকে আপনার সম্পর্ক এবং তাদের সাথে কথা বলে আপনি কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারেন। এই বন্ধু আপনার বিগত কয়েক বছরে তৈরী হওয়া বন্ধুর আলাদা। রনবীর সিং এবং অনুষ্কার ক্ষেত্রে আমার অনুভূতি সেরকমই। যখনই আপনার তাদের সাথে দেখা হবে, আপনি সেই প্রথম দিনেই যাবেন – সম্ভবত এটাই সম্পর্কের স্বাছন্দবোধ।

আপনি বলেছিলেন ‘রাব নে বানাদি জোরি’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময় আপনার মনে হয়েছে আপনার এবং আদিত্য চোপড়ার কাজের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। তাহলে আপনাদের দুইজনের এতদিনের এই একসাথে কাজ করতে পারার কারন কি?

আমার মনে হয় এটা হয়েছে দুইজনেরই সিনেমার প্রতি অনুরাগের কারনে। আমি নিঃসঙ্কোচে এটা বলতে পারি আমাদের দুইজনের কেউই সিনেমার বাইরে কিছু করতে পারবো না। সিনেমা ছাড়া অন্য কোন কিছু নিয়েই আমরা আলোড়িত হয়না। এর বাইরে দুইজনের চিন্তার সমন্বয়। এমনও অনেক সিনেমা আছে যেটার ব্যাপারে সে সরাসরি আমাকে বলে, এটা তোমার কোন বিষয় না। অন্যদের ব্যাপারে জানিনা, তবে আমাদের দুইজনের সবচেয়ে স্বাছন্দের জায়গা হচ্ছে ছোট বা বড় যেকোন স্বিধান্ত আমরা ২০ সেকেন্ডের মধ্যে নিয়ে থাকি। আমার দশ বছরের এই ক্যারিয়ারে কখনও ইটা বলতে হওনি যে, ‘প্রযোজোক তো এরকম বলতেসে।’

আপনি বলেছেন যে, যদিও আপনি আদিত্য চোপড়ার সাথে একমত না হন তাও সে আপনাকে ফিরিয়ে আনবে এই কারনে যে ইয়াশ রাজ ফিল্মসে নতুন আইডিয়া এবং মেধা আনার উদ্যেশ্য ব্যাহত হবে। আপনার নতুন মেধা খুঁজে বের করার ক্ষমতাই আপনাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে কি আপনি দায়িত্বের চাপ অনুভব করেন?

সত্য কথা বলতে কি, এই দায়িত্বজ্ঞানবোধ আমি অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি আসলে পুরোপুরি আমার সিধান্তের দ্বারা পরিচালিত। আর ষ্টুডিওতে আমার সংশ্লিষ্টতা সম্ভবত তারা মনে করে সিনেমা নির্মানের ক্ষেত্রে আমার একটা নিজস্ব ভাষা আছে। আমি কখনোই প্রযোজক হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি কিন্তু আদির আমাকে নিয়ে সেরকম চিন্তা হয়ত ছিলো।

এবার আসি নতুন মেধার কোথায়। আপনি যদি শারাত (কাটারিয়া, দম লাগাকে হেইও) এর কথা ধরেন, ওর সাথে আমার বোঝাপড়াটা খুব চমৎকার ছিল। আমি তার প্রথম সিনেমা তখন দেখিনি এবং এখনও দেখিনি, কিন্তু ক্রিয়েটিভ চিন্তার ক্ষেত্রে আমি ভালো একটা জায়গা পেয়েছি। একই কথা ভূমি এবং আয়ুষ্মানের বেলায়ও প্রযোজ্য। আসলে আমি যায় করার চেষ্টা করেছি সেটা যেকোনভাবে কাজ করেছে – এর বেশি কিছুনা।

আপনি এমন কোন গল্প খোঁজছেন যেটা ইয়াশ রাজ ফিল্মসের জন্য হবে না?

এ বিষয়ে আসলে আমার নিজের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন নোট নেই। আমি প্রচুর নতুন লেখকদের সাথে সংযুক্ত থাকি। আমি সবসময়ই এমন গল্প খোঁজি যা আমাকে কৌতূহলী করবে।

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত