চার-পাঁচ মাস বিরতির পর ভালো লাগার মত প্রথম যে চিত্রনাট্য পাই সেটা ‘মিস ইন্ডিয়া’: কৃতি সুরেশ

কৃতি সুরেশ

দক্ষিনের সিনেমার জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী কৃতি সুরেশের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘মিস ইন্ডিয়া’। কোরোনাকালীন সময়ে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় এই সিনেমা। নিজের ক্যারিয়ার এবং ‘মিস ইন্ডিয়া’ সম্প্রতি তিনি কথা বলেন ফিল্ম কোম্পানিয়নের সাথে। বিশাল মেননের সাথে কৃতি সুরেশের এই কথোপকথনটির বাংলা অনুবাদ ফিল্মীমাইক পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

২০ বছর বয়স থেকে আপনি কাজ করে যাচ্ছেন। অবশেষে করোনা মহামারীর কারনে বিরতি পেলেন। এ থেকে বেরিয়ে আসা ভালো জিনিসটা কি?
আমরা কোন উইকেন্ড ছাড়া রাত দিন কাজ করি। যখন কাজ শুরু হয়, একটানা ২০, ৩০ অথবা ১০ দিন শুটিং চলে। আমরা বিরতি তখনই পাই যখন কোন কারনে শুটিং বাতিল হয় অথবা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হয়। আমার জন্য এই মহামারীতে সবচেয়ে ভালো জিনিস হচ্ছে পরিবারের সাথে সময়। এর আগে বাবা-মার সাথে সময় কাটিয়েছি আমি যখন ক্লাসে ১২ এর ছাত্রী ছিলাম। এই সময়ে আমি তাদের খুশি করেছি, আমি নিজেও খুশি হয়েছি।

আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট দেখলে মনে হয় আপনি প্রচুর পরিমানে যোগব্যায়াম করছেন। এটা অন্যদের তুলনায় আপনাকে বেশি ব্যস্ত রেখেছে?
করোনা মহামারীতে পাওয়া আমার আরো একটি ভালো জিনিস হচ্ছে যোগব্যায়াম। আমার মা সবসময় যোগব্যায়াম পছন্দ করেন এবং আমি তার কাছ থেকে যোগব্যায়ামের অনেক কিছু শিখেছি। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর এটা আমার কাছে এক ধরনের নেশার মত হয়ে গিয়েছিলো। আমি এখনও নিয়মিত যোগব্যায়াম করি এবং আমার মনে হয় না আমি এটা ছাড়ছি। স্কুলে আমি ভায়োলিন বাজাতাম, এই সময়ে এটাও একটু ঝালাই করে নিয়েছি। আর এতো কিছুর পরও এই সময়ে দুইটা সিনেমা মুক্তি পেয়েছে – আপনি যেমন বলছিলেন।

‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রসঙ্গে আসি, এটাইতো আপনার প্রথম সিনেমা যেখানে আপনি স্লো মোশনে আসা-যাওয়া আর সংলাপ ছিলো? কেমন অনুভব করছেন?
হ্যাঁ, আমি মনে করি এটাই আমার প্রথম সিনেমা যেখানে আমি এরকম করেছি। যখন পরিচালক (নরেন্দ্র নাথ) আমাকে বললেন তোমার এই সংলাপই দর্শকের সাথে তোমাকে কানেক্ট করবে। আমি মনে মনে বলতাম ‘হুমম। আমি এবং ম্যাস…ওকে। আমি নিজেকে কখনও এই জায়গায় ভাবিনি। এমনকি ট্রেলার মুক্তির আগেরদিন পর্যন্ত আমি বারবার দেখেছি আর ভেবেছি ‘ওহ ওকে’। কিন্তু এরপর দিনই আমি ফোনকল, ম্যাসেজ পেতে থাকি, টিভিতে দেখে ভাবি – খারাপ না। আমি এর আগে এরকম চরিত্রে অভিনয় বা এরকম সংলাপ কখনও পর্দায় দেইনি।

কৃতি সুরেশ

এবং সেটা জাগাপাতি বাবুর বিরুদ্ধে…
হ্যাঁ (হেসে)। যখন আমি সেটা দেখি খুব ভালো অনুভব করি এবং আত্নবিশ্বাসী হই। এটা এরকম কিছু যা আগে আমি কখনও করিনি।

আপনি এই সিনেমায় এমন কিছু আবেগ উপস্থাপন করেছেন যা আগে কখনও আপনি করেন নি। যেমন গতি কমিয়ে দেওয়া, রেগে যাওয়া, হাটাহাটি করা আবার ফায়ার আসা, লো-এঙ্গেল শট ইত্যাদি। এগুলো কি আপনার জন্য পুরোপুরি নতুন ছিলো?
হ্যাঁ, এসবকিছুই আমার জন্য নতুন ছিলো। আপনি যেমন বলেছেন লো-এঙ্গেল শট এবং যে দৃশ্যে আমি সবুজ পোশাকে হেটে আসি। আমার ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি সুজিত বাসুদেবন স্যার বলেছিলেন, ‘তোমার পৃথিবীরাজের মত হাটা উচিত।’ আমার এরকম মনে হচ্ছিল – পৃথিবীরাজ আর আমি! এখন আমি দেখছি, উনি যা বলেছিলেন সেটা ঠিক ছিলো। পর্দায় এটা ভালো দেখাচ্ছিলো। আমি খুব ভালো অনুভব করছি এমন কিছু করতে পেরে যা আগে আমি করিনি।

এটা কি ঠিক হবে যদি আপনার ক্যারিয়ার কে দুই ভাগে ভাগ করা হয় – ‘মোহনাতি’র আগে এবং পরে? আপনার কাছে কি এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের চিত্রনাট্য আসছে? না চিত্রনাট্য পছন্দের ক্ষেত্রে আপনার চিন্তা বদলে গেছে?
হ্যাঁ, এটা আমি মানছি। ‘মোহনাতি’র পর আমি চার থেকে পাঁচ মাসের একটা বিরতি নেই। আমি বাসায়ই ছিলাম এবং ভালো কিছু চিত্রনাট্যের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই সময়ে আমার কাছে ভালো লাগার মত প্রথম যে চিত্রনাট্য আসে সেটা ছিলো ‘মিস ইন্ডিয়া’। আমার কাছে মনে হয়েছিলো এই সিনেমাতে একদম ভিন্ন কিছু রয়েছে। ‘মোহনাতি’র মত সিনেমার পর আপনার দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। আপনার চিত্রনাট্য পছন্দ করা এবং অভিনয় থেকে শুরু করে আপনি কি পড়ছেন সেটা, সবকিছুতে আপনার দায়িত্ব বেড়ে যায়।

বিরতিটা কি আপনি ইচ্ছে করে নিয়েছিলেন?
আসলে বিরতির সময়ে আমি ভালো সিনেমার প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ‘মাহনাতি’ মুক্তির পর তিন মাস কোন প্রস্তাব পাইনি। আর মহামারীর সময়ে আমিও একটু রিলাক্সে ছিলাম। আমি প্রস্তাব না পাওয়ার কারনে মোটেও বিচলিত ছিলাম না। একটা ভালো সিনেমা দরকার ছিলো আবার চিন্তা করার জন্য পরে কি করব সেটার প্রস্তুতির জন্য। আমি অনেকগুলো সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি এবং আমি মনে করি আমি সঠিকটাই পছন্দ করেছিলাম।

যখন কোন ছবি আপনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় তখন কি অনেক কিছু নিয়ে আপনাকে ভাবতে হয়? শুধু বক্স অফিস না, ভালো বা খারাপ যায় হোক সেটা আপনার দায়িত্ব হয়ে যায়। এটা কি আপনার জন্য একটু ভয়ঙ্কর হয়ে যায়?
‘মাহনাতি’ এর ক্ষেত্রে না, কারন চরিত্রই সিনেমা এগিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়াও আমাদের আরো অনেক অভিনেতা ছিলেন সিনেমায়। সুতরাং আমি এটা বলতে পারিনা যে সিনেমাটি নারীকেন্দ্রিক ছিলো এবং আমি এটাকে বহন করে নিয়ে গেছি। কিন্তু যখন সিনেমাটা ব্লকবাষ্টার হয়ে যায় এবং আপনি আরো একটি নারীকেন্দ্রিক সিনেমা করছেন তখন মানুষ ভেবে নেয় সিনেমাটি আপনি বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। ‘মাহনাতি’র পর আমার নিজেকে প্রমান করার সিনেমা ‘মিস ইন্ডিয়া’।

কিছু কিছু সময় এটা আপনার জন্য ভয়ংকর হয়ে যেতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার কি করার আছে? আপনি যখন কিছু একটা পছন্দ করবেন তখন সেটার মত করেই আপনাকে এগোতে হবে এই আশা নিয়ে যে এটা কাজ করবে। ‘মাহনাতি’র পর খুব বেশি নারীকেন্দ্রিক সিনেমা করতে চাইনি কারন তখন শুধু এই রকম সিনেমাই আপনার কাছে আসতে থাকবে। আমি বাণিজ্যিক সিনেমা করতে চাই, সব ধরনের সিনেমা করতে চাই।

কৃতি-সুরেশ

‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের জন্য নির্মিত; এটাতে অনেক ‘ম্যাসি’ মুহূর্ত আছে। আপনার ক্যারিয়ারের এরকম সময়ে সিনেমাটি দর্শকদের সাথে প্রথম দিনের প্রথম শো দেখতে না পারার কোন আক্ষেপ কি আছে আপনার?
আমার কিছু বন্ধু আমাকে বলেছে সিনেমাতে অনেক ‘ম্যাস’ মুহূর্ত আছে এবং এটা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এরকম সময়ে আপনার কি করার আছে? মহামারীর সময়ে ওটিটিতে সিনেমাটি মুক্তি দিতে পেরে আমি খুশি। আমার মনে হয় আমাদের খুশি হয় উচিত যে আমরা একটা কিছু করতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি যাই হয় ভালোর জন্য হয়। সুতরাং এটা নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই।

আপনার মায়ের আপনার সবচেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্র কোনগুলো? এমন কোন সিনেমা কি আছে যা আপনি এই লোকডাউনে আবিষ্কার করেছেন?
আমি আমার মায়ের সব ছবি দেখেছি। আমার পছন্দের তালিকায় আছে ‘অপ্পল’, ‘পচাক্করু মকুঠি’।

আপনার বাবা প্রজোযক সুরেশের কোন প্রিয় সিনেমা আছে?
‘আরাম থামবুরান’ এবং ‘বাটারফ্লাই’।

আরো পড়ুনঃ
একজন সাধারন মেয়ের চেয়ে বেশি কিছু আমি নিজেকে ভাবতে চাইনা: দীপিকা পাডুকোন
দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পুরষ্কার পাওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ : মঞ্জু ওয়ারিয়র
পার্থক্য তৈরী করার জন্য আমি এখানে এসেছি, অর্থ উপার্জনের জন্য নয়: বিজয় সেতুপতি

By নিউজ ডেস্ক

এ সম্পর্কিত