মিস্কনের ‘মুগামডি’ দিয়ে তামিল এবং হৃত্বিকের বিপরীতে ‘মহেঞ্জাদারো’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় পূজা হেগের। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এই তারকার এবং শুটিং চলছে আরো কয়েকটি সিনেমার যার মধ্যে প্রবাসের বিপরীতে ‘রাধে শ্যাম’ অন্যতম। সম্প্রতি নিজের মুক্তিপ্রাপ্ত এবং মুক্তিপ্রতীক্ষীত সিনেমাগুলো নিয়ে তিনি কথা বলেন অনুপমা চোপড়ার সাথে। ফিল্মীমাইক পাঠকদের জন্য এই আলাপচারিতার বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো।
প্রবাসের সাথে একটি আলাপচারিতায় তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন যে তিনি খুব লাজুক স্বভাবের। সিনেমার সেটে অনেক মানুষ হলে তিনি অস্বস্থিতিতে ভোগেন। লাজুক সহ-অভিনেতার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
আসলে সিনেমার সেটে তিনি এতটা লাজুক না। মানুষকে তিনি কি বলছেন জানিনা কিন্তু তার সাথে সিনেমার শুটিং খুবই মজাদায়ক ছিলো। আমার সাথে তিনি অনেক প্রফুল্ল ছিলেন। এছাড়া ‘রাধে শ্যাম’ যেহেতু একটি রোমান্টিক সিনেমা আমরা দুজন প্রথম দিন থেকেই একসাথে শুটিং করছি এবং আমাদের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়ার জায়গা তৈরী হয়েছে। আমাদের পর্দা রসায়নও দুর্দান্ত হয়েছে বলে মনে করি। পুরো শুটিং জুড়েই আমরা উপভোগ্য সময় পার করেছি।
আপনারা যখন সিনেমাটির শুটিং করেছেন তখন তিনি লজ্জিত ছিলেন না, কারন সম্ভবত সিনেমার প্রযোজকরা তার…
বন্ধু, আপনি জানেন, আমি মনে করি এই কারনেই তিনি শুটিং করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন এবং সময়টা অনেক মজাদার ছিলো। শুটিং সেটে সে আমাকে বা অন্য কোনও কিছুর বিষয়ে রেগ করতে থাকে। আমি মনে করি তিনি জানেন না এমন লোকদের সাথে তিনি কেবল লাজুক।
প্রবাস অবশ্যই অনেক বড় একজন ষ্টার। আপনি প্রবাস ছাড়াও অন্য বড় তারকা যেমন আল্লু অর্জুন, মহেশ ভাট এবং এখন কাজ করছেন সালমান খান এবং রনবীর সিংয়ের বিপরীতে। এরকম বড় তারকাদের সাথে অভিনয়ের সময় আপনি কিভাবে নিশ্চিত করেন যে আপনি যেন কোনভাবেই একপাশ না হয়ে যান?
আমি মনে করি এটি আত্মবিশ্বাস থেকে আসে। প্রভাসের সিনেমায় অবশ্যই আমার খুব বড় ভূমিকা আছে। এটি একটি প্রেমের কাহিনী, সুতরাং সেখানে কোনও একপাশ হয়ে যাওয়ার যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যেমন আল্লু অর্জুনের সাথে ‘আলা বৈকুণ্ঠপুরমুলু’ সিনেমায় গান এবং হিট হওয়া দৃশ্যগুলি নিয়ে মানুষ কথা বলেছে।
এছাড়া আমার সিনেমার ডাবিং আমি নিজেই করি, তাই আমি মনে করি আপনার কাজ নিয়ে আপনি যখন একটু বেশী সময় এবং পরিশ্রম দিবেন মানুষ সেটার স্বৃকৃতি দিবে। আমি তেলুগু নই, তবুও আমি নিজের জন্য ডাবিং করেছি, এবং লোকেরা এটির প্রশংসা করেছে এবং এখন আমাকে আমার অন্যান্য ছবিতেও ডাব করতে বলছেন। সুতরাং, আমি মনে করি যে আপনি যদি পরিশ্রম করেন তবে তা পাশছাড়া হয়ে যায় না এবং আপনি স্বীকৃতি পাবেন। দিনের শেষে, এটিও নিয়তি।
চার বছর আগে বলিউডের সিনেমা ‘মহেঞ্জো দারো’ করেছিলেন আপনি এবং মজার ব্যাপার এই মুহূর্তে বলিউডের চেয়ে দক্ষিণী সিনেমায় আপনি বড় তারকা। এটাকি এই কারনে যে, আপনি আপনার পুরোটা এক জায়গায় না দিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং এখন আপনার পছন্দ করার মত একটা অবস্থান আছে?
এটা সত্য যে পছন্দ করার ক্ষমতার মধ্যে একটা ‘এমপাওয়ারিং’ অনুভূতি আছে। ‘মহেঞ্জো দারো’ যখন ব্যর্থ হলো আর বিশেষ করে আপনি যখন এই ইন্ড্রাস্ট্রির নন তখন আপনার দ্বিতীয় সিনেমা প্রথম সিনেমার চেয়ে অনেক কারনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বের কাছে আপনার একটা পরিচিত তাও আবার হৃত্বিক এবং আশুতোষ এর সাথে…
এরপর আমার মনে হয়েছে আমার দ্বিতীয় সিনেমাটি এমন হওয়া উচিত যা মানুষের ম্যাচে গ্রহনযোগ্য হবে। আমি অনেক সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি কিন্তু আমি এর মধ্যে কোনটাই করতে চাইনি। সেই সময়ে দক্ষিনে অনেক বড় বড় সিনেমা তৈরী হচ্ছে যা আমাকে আগ্রহী করে তোলে তাই আমি সেসময়ে অন্য সিনেমাকে না বলতে থাকি দক্ষিনের সিনেমায় নিজেকে সংযুক্ত করি। ধীরে ধীরে তেলুগু সিনেমায় দর্শক আমাকে পছন্দ করতে শুরু করে এবং আমার একটা জায়গা তৈরী হয়ে যায়।
বলিউড এবং দক্ষিনের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। দক্ষিনের দর্শকরা তাদের তারকাদের ভালোবাসে এবং পূজা করে, সম্ভবত এটাই আমাকে একটা প্যান-ইন্ডিয়া পরিচিত দিয়েছে যেটা আমি অনেকভাবে ব্যবহার করতে পারি। আমি অনেক হিন্দি সিনেমাকে না বলেছি যেগুলো শেষ পর্যন্ত খুব একটা ভালো করতে পারেনি। সম্প্রতি রোহিত (শেঠী) স্যার দক্ষিনের একটি সিনেমায় আমাকে দেখেন এবং এখন ‘সার্কাস’ হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে যে বর্ডার আছে সেটা ধীরে ধীরে অস্পষ্ঠ হচ্ছে।
বিভিন্ন ফিল্মইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক পার্থক্যের মধ্যে আপনি কীভাবে সামঞ্জস্য কিভাবে করেন? ‘আলা বৈকুণ্ঠপুরমুলু’ একটি বিশাল ব্লকবাস্টার।
সিনেমাটির নাম আপনি এটিকে খুব ভাল করে উচ্চারণ করেছেন। আমি এখনই খুব মুগ্ধ।
পূজা আমি সিনেমাটি অনেক উপভোগ করেছি, এতে ফ্যান ছিলো, আবেগ ছিলো, কৌতুক ছিলো কিন্তু আমার কাছে যে দৃশ্যে আল্লু অর্জুন আপনার পায়ের দিকে তাকাচ্ছিলো সেটা খুব অস্বাভাবিক লেগেছে। দেখেন সিনেমাতে আপনি তার বস, তার চেয়ে আপনার ক্ষমতা অনেক বেশী, এরকম কিছু যদি বাস্তব জীবনে কোন নারীর সাথে হয় সেটাতো স্বাভাবিক হবে না!
হ্যাঁ, ত্রিভিকরাম স্যার যখন আমাকে সেই দৃশ্যের কথা বলেছিলেন। আমার ব্যাপারটা এরকম ছিলো যে স্যার… আমি এমন একজন যিনি সর্বদা এই জাতীয় জিনিস নিয়ে লড়াই করে থাকি। আমরা আসলে সেই দৃশ্যগুলি জুড়ে দিয়েছিলাম যেখানে আমি তাকে শীতার্থ একটা জায়গায় পাঠিয়েছিলাম, আমি তাকে সত্যিই কোথাও প্রেরণ করেছি যে জায়গাটাগরম ছিলো এবং আমরা সেই দৃশ্যগুলি চেষ্টা করার জন্য যুক্ত করেছি এবং এটিও প্রমান করতে চেষ্টা করেছি যে সে এটিকে হালকাভাবে নেয় না। তারপরে, আমি তাঁর কাছে এসেছি এবং আমি বলছি আপনার এই ‘পা’য়ের জিনিসটি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার এবং যাদের মাথার উপর দায়বদ্ধতা রয়েছে তাদের কখনই মাথা নিচের দিকে নামে না। পরে সে ফিরে এসে জানায় যে দৃশ্যটা ভাল ছিল, তবে যে মুহুর্তে সে তার চোখ দেখেছিল, সে সময়… সুতরাং, আমরা এই পুরো জিনিসটি জুড়ে দিয়েছি, এবং কিছু লোক এটি লক্ষ্য করেছে, কেউ আবার করেনি। এটি একটি শেখার অভিজ্ঞতা এবং আমি সবসময় আমার ফিল্মগুলিতে এই জিনিসগুলি যুক্ত করার চেষ্টা করি।
তার মানে আপনি বলেছেন যে এটা স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, আমি বলেছি এবং সিনেমার সংবাদ সম্মেলনেও আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছিল যে দক্ষিণে নাভী এবং মিডরিফগুলি নিয়ে একটি আবেগ রয়েছে এবং আমি বলেছিলাম যে আমার মিডরিফের চেয়ে আমি একজন লোককে আমার পা দেখতে চাই। আমি বলেছিলাম যে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি পা প্রদর্শনে একটা উত্তেজনার ব্যাপার আছে, তবে পায়ে আপত্তি জানানো মোটেও যথেষ্ট নয়। যে কারণে আমরা সেই দৃশ্যগুলি যুক্ত করেছি।
কিন্তু পূজা, আপনি এমন জায়গায় আছেন যেখানে আপনি বলতে পারেন যে এটি বিশ্রী এবং আমি এটি করতে চাই না?
আমি সর্বদা আমার পরিচালকদের সাথে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করি এবং পরিশেষে হয় আপনি আমাকে বোঝান বা আমি আপনাকে রাজি করি। সুতরাং আমরা এই জায়গাতে পৌঁছেছিলাম যে সে আমার পায়ের চেয়ে বরং আমি কে, তার প্রেমে পড়ে। সুতরাং, এমনকি ‘সমাজবর্গমন’ গানটি যেখানে তিনি পা নিয়ে কথা বলছেন, তিনি হাতির টোপ নিয়ে কথা বলছেন, এবং হাঁটার সময় সে কতটা আবেদনময়ী সেটা নিয়ে কথা বলেছেন। তবে, আমার মনে হয় গানের অনুবাদে এটা হারিয়ে গেছে।
পূজা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গ্ল্যামার জগতে আপনার প্রবেশ। আপনি একজন মডেলও ছিলেন। আপনি আপনার নিজেকে কিভাবে অভিনয় শেখালেন?
সিনেমার সেটে। আমি অভিনয়ের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেইনি। কিন্তু আমি মনে করি যারা অভিনয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছেন তারা সেটে অভিনয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়ে থাকেন। একটা সিনেমার সেটের কথা আমার মনে আছে, যেখানে আমি তামিল সিনেমা ‘মুগামুদি’ শুটিংয়ে ‘ফোকাস’ এর মানে বুঝতে পারছিলাম না। আমাকে পরিচালক বারবার বলছিলেন ‘ফোকাস, ফোকাস, ফোকাস পূজা’ – এরকম আরো অনেক বিষয় ছিলো যেগুলো বুঝে উঠতে আমার সময় লেগেছে।